হার্ট ফাউন্ডেশনের কর্মশালা

পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধ করার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২২ মার্চ ২০২৫, ১৫:৪৫
অ- অ+

পাবলিক প্লেস ও গণ-পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। একইসঙ্গে মোড়কবিহীন এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি বন্ধ করতে হবে।

শনিবার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণে তরুণ চিকিৎসকদের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালায় এই দাবি করেন দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত তরুণ চিকিৎসকরা।

বক্তারা বলেন, তরুণদের ধূমপানের প্রতি আকৃষ্ট করতে তামাক কোম্পানিগুলো বিভিন্ন কূটকৌশল ব্যবহার করছে। তারা সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির আড়ালে তামাকের প্রচারণা চালাচ্ছে। তাই তাদের এসব অপকৌশল বন্ধে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে তা আরও শক্তিশালী করার দাবি জানিয়েছে তরুণ চিকিৎসকরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাতে তারা বলছেন, তামাক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজার ২৫৩ জন মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করছেন। এই প্রতিরোধযোগ্য অকাল মৃত্যু কমাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)–এর আলোকে বিদ্যমান আইনের ছয়টি ধারা সংশোধনের দাবি করেন।

সেগুলো হলো— সকল পাবলিক প্লেসে ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধ করা, তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রর্দশনী নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির যেকোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেটসহ সকল ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস্ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা, তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট বা কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০% থেকে বাড়িয়ে ৯০% করা এবং বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা।

কর্মশালায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশের প্রাপ্তবয়স্ক ৩৫.৩ শতাংশ মানুষ তামাক ব্যবহার করেন এবং ধূমপান না করেও বিভিন্ন পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে প্রতিনিয়ত পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। এমন বাস্তবতায় অধূমপায়ীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলো আইন সংশোধনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তারা রাজস্ব ও কর্মসংস্থান হারানোর ভিত্তিহীন তথ্য দিচ্ছে। তবে এনবিআর-এর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন করার পরে পরবর্তী দুই অর্থবছরে সিগারেট খাতে রাজস্ব আয় বেড়েছে যথাক্রমে ১৭.৯৭ শতাংশ এবং ৩৭.৫২ শতাংশ। একইভাবে, ২০১৩ সালে সংশোধনীর পর পরবর্তী দুই অর্থবছরে সিগারেট খাতে রাজস্ব আয় বেড়েছে যথাক্রমে ২৫.৫১ শতাংশ এবং ৪৬.৫২ শতাংশ।

এছাড়াও ২০২১ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, খাদ্য, পানীয় এবং তামাকপণ্য বিক্রি করে এরকম খুচরা দোকানের সংখ্যা মাত্র এক লাখ ৯৬ হাজার ৩৪১, যারা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গেই তামাকপণ্য বিক্রি করে থাকে। তাই কর্মসংস্থান হারানোর তথ্যটিও বিভ্রান্তিকর।

কর্মশালায় উপস্থিত তরুণ চিকিৎসকরা জানান, তামাক ক্ষতিকর জেনেও আমরা সেবন করছি। এটা থেকে বের হতে সবার মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। আর সচেতনতা সৃষ্টি করতে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে চিকিৎসকদের। একই সাথে রোগীদের তামাকের কুফল সম্পর্কে অবহিত করতে হবে।

তারা আরও বলেন, সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী এবং তামাক পণ্যের দাম কার্যকরভাবে বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলে দেশে তামাকের ব্যবহার কমানো সম্ভব হবে।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভীর সভাপতিত্বে কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন— মহাসচিব অধ্যাপক ফজিলা তুন নেসা মালিক। এ সময় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির উপদেষ্টা ও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, সমন্বয়ক ডা. অরুনা সরকার ও কমিউনিকেশন অফিসার আবু জাফরসহ দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/২২মার্চ/এসএস/এমআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
যে কারণে ৩৬ রিয়েল এস্টেট কোম্পানির নিবন্ধন বাতিল করল সরকার
গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে: বিপিডিবি চেয়ারম্যান
উত্তরা, আগারগাঁও, কচুক্ষেতে জোরপূর্বক গুমের প্রমাণ পেয়েছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা
বৈষম্যবিরোধীরা রক্ষীবাহিনী মতো আচরণ করছে: ছাত্রদল সম্পাদক 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা