গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়াবহ বিমান হামলায় নিহত ৯৫, মোট মৃত্যু ছাড়াল ৫৮ হাজার

গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়াবহ বিমান হামলায় অন্তত ৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। রবিবার গাজা সিটির একটি বাজার এবং শরণার্থী ক্যাম্পের পানি সংগ্রহ কেন্দ্রে এ হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। খবর আল-জাজিরার।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, চলমান আগ্রাসনে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার ২৬ জনে, যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ জন।
হামলায় গাজার একটি বাজারে রবিবার নিহত হন ১৭ জন, যাদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয়ভাবে খ্যাতনামা চিকিৎসক আহমেদ কান্দিল। অপরদিকে নুসেইরাত শরণার্থী ক্যাম্পে পানি সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুদের ওপর চালানো হামলায় ১০ জন নিহত এবং ১৭ জন আহত হন।
ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে, নুসেইরাতের হামলার লক্ষ্য ছিল একজন যোদ্ধা, কিন্তু ‘প্রযুক্তিগত ত্রুটির’ কারণে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তবে এই দাবি স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
গাজায় চলমান অবরোধের ফলে জ্বালানি সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে, যার প্রভাবে ডেসালিনেশন প্ল্যান্ট ও পানি শোধনাগারগুলো অচল হয়ে পড়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ হাঁটাহাঁটি করে সীমিত পানি সংগ্রহে বাধ্য হচ্ছেন।
ইউনিসেফ জানিয়েছে, জুন মাসে গাজায় ৫ হাজার ৮০০ শিশু অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার শিশু চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। গতকাল ৭ মাস বয়সী সালাম নামের এক শিশু অপুষ্টির কারণে মারা যায়।
জাতিসংঘের আটটি সংস্থা এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত না হলে হাসপাতাল, পানি সরবরাহ, অ্যাম্বুলেন্স ও অন্যান্য জরুরি সেবা বন্ধ হয়ে যাবে।
গাজার স্থানীয় সরকার দাবি করেছে, মার্কিন সমর্থিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোর ওপর ইচ্ছাকৃত হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী এবং নিরাপত্তা ঠিকাদাররা। এসব কেন্দ্রে খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৮০৫ জন নিহত এবং ৫ হাজার ২৫০ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে দোহায় আলোচনার অগ্রগতি নেই। যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব স্থবির হয়ে পড়েছে। উভয়পক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করছে। ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের উপনেতা মুহাম্মদ আল-হিনদি জানিয়েছেন, ইসরায়েল আসল দাবি পাশ কাটিয়ে বন্দি বিনিময়ের আলোচনা চাপিয়ে দিতে চাইছে। তার ভাষায়, “আমরা আত্মসমর্পণের মতো কোনো চুক্তি করব না।”
এছাড়া ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উপদেষ্টা জনাতান উরিখ–এর বিরুদ্ধে সামরিক গোপন তথ্য ফাঁসের অভিযোগে মামলা হতে পারে বলে জানিয়েছেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল গালি বাহারাভ-মিয়ারা। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি একটি জার্মান সংবাদমাধ্যমে গোপন তথ্য ফাঁস করেছেন।
গাজা পরিস্থিতি প্রতিদিনই আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক মহলের কঠোর হস্তক্ষেপ ছাড়া এই সংকট সমাধানের কোনো পথ আপাতত দেখা যাচ্ছে না।
(ঢাকাটাইমস/১৪ জুলাই/আরজেড)

মন্তব্য করুন