এরশাদের স্মরণসভায় ঐক্যবদ্ধ জাপার ঘোষণা পাঁচ অংশের শীর্ষ নেতাদের

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গড়া জাতীয় পার্টি ভেঙে বিভিন্ন সময় নতুন দল গড়া নেতারা আবার ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
আজ এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় এরশাদের জাতীয় পার্টির পাশাপাশি জাতীয় পার্টি (রওশন), জাতীয় পার্টি-জেপি, জাতীয় পাটি (কাজী জাফর) ও জাতীয় পার্টি (মতিন)-এর নেতারা একমঞ্চে এসে এই ঘোষণা দেন।
এরশাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে সোমবার গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় পল্লীবন্ধু এরশাদ স্মৃতি সংসদ আয়োজিত স্মরণসভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
মূলত জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যার এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পল্লীবন্ধু এরশাদ স্মৃতি সংসদ ব্যানারে এই স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়।
জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম, জাপার কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, জাতীয় পার্টির (রওশন) নির্বাহী সভাপতি কাজী ফিরোজ রশীদ, সাবেক এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, জনতা পার্টি বাংলাদেশ- জেপিবির প্রধান উপদেষ্টা সাবেক এমপি শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর এবং নির্বাহী চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন, জাতীয় পার্টির (মতিন) মহাসচিব জাফর আহমেদ জয়, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য দিদারুল আলম চৌধুরী।
আরও উপস্থিত ছিলেন জাপার সংসদ সদস্য নাজমা আক্তার, অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা ও অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন, জাপার ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা, খুলনা বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত মহাসচিব সাহিদুর রহমান টেপা, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা আল মাহমুদ, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, জহিরুল ইসলাম জহির, জসিম উদ্দিন ভুঁইয়া প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, ‘আমাকে বলা হয় আমি জাতীয় পার্টি ভেঙেছি। কিন্তু আমি দল ভাঙিনি। দল আমাকে বের করে দিয়েছে। আমার নেতৃত্বে আন্দোলন করে আমি এরশাদকে কারাগার থেকে মুক্ত করেছিলাম। আমি সব সময় বলে এসেছি ঐক্যের কথা। আজ এরশাদ সাহেবের স্মরণ সভায় এসে বৃহত্তর ঐক্যের যে কথা শুনছি, তা যদি বাস্তবে কার্যকর করা যায়, তাহলে দেশ ও দেশের মানুষ উপকৃত হবে।’
মঞ্জু বলেন, ‘এরশাদকে স্বৈরাচার বলা হতো। কিন্তু ৫ আগস্টৈর পর আওয়ামী লীগকে স্বৈরাচার বলা হচ্ছে। সময়ের পরির্বতনে আরো অনেক দলকে স্বৈরাচার বলা হবে। এরশাদ সাহেব যে সংস্কার করে গেছেন. তা কোনো সরকার করতে পারেনি।’
স্মরণসভায় ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতা যে জন্য জীবন দিয়েছেন, সে স্বপ্ন এখানো পূরণ হয়নি। দেশে আজ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতি। সাধারণ মানুষ চরমভাবে নিরাপত্তহীনতা মধ্যে রয়েছে। দেশের এই অস্থির সময়ে দেশ ও দেশের মানুষের প্রয়োজনে জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে। শেষ জীবনে আমাদের উচিত দেশকে কিছু দেয়া।’ ঐক্যবদ্ধ হতে পারলে জাতীয় পার্টি জাতীয় রাজনীতির বিকল্প শক্তি হবে বলে মমমন্তব্য করেন তিনি।
ব্যরিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘আমরা অবশ্যই নির্বাচন চাই। তবে তার আগে দেশের স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।’
রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘আসুন আমরা শেষ জীবনে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করি। দেশে আবারও পরিবর্তন আসবে। আমরা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করে যাব।’
তিনি বলেন, ‘এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার সময় বিচার ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, যশোর ও কুমিল্লায় ৬টি হাইকোর্টের বেঞ্চ সম্প্রসারণ করেন। এছাড়া বিচারর ব্যবস্থাকে আরও বেগবান করতে প্রতিটি উপজলোয় মুনসেফ কোর্ট স্থাপন করনে তিনি। ৩৫ বছর পর এসে আজকের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যুগান্তকারী সেই কাজটি করার জন্য আবারও উদ্যোগ নিয়েছে।’
জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের উদ্দেশে শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সব বিভেদের অবসান ঘটিয়ে দলকে যদি ঐক্যবদ্ধ করতে পারেন, তবেই দল আগামী দিনে ভালো ফলাফল প্রত্যাশা করতে পারে। আপনি বিভেদ ভুলে যান। ঐক্যের প্রক্রিয়ায় শামিল হোন।’
সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ‘মহান আল্লাহর নাম নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি গড়ে তুলব। যৌথ নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাবো। কারও বিরুদ্ধে আমাদের কোনো অভিযোগ নাই।’
শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আর ফিরতে পারবে কি না, তা আমরা জানি না৷ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে বিএনপির জনপ্রিয়তাও নিচের দিকে। আজকে দেশের মানুষ বিএনপি, আওয়ামী লীগের বিকল্প শক্তি হিসেবে জাতীয় পার্টিকে দেখতে চায়।’
একই কথা বলেন দলটির নির্বাহী চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন। তিনি বলেন, ‘আগামী দিনে জাতীয় পার্টিকে আমরা সবাই মিলে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে গড়ে তুলব।’
জাফর আহমেদ জয় বলেন, ‘মানুষ বলে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা চার-পাঁচটা ভাগে ভাগ হয়ে নিজেরা নিজেদের সর্বনাশ করেছে। তাদের মধ্যে যে ভুল বোঝাবোঝির হয়েছে, তা সমাধান করা সম্ভব। কারণ, তাদের মধ্যে কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব নেই।’
(ঢাকাটাইমস/১৪জুলাই/জেবি/মোআ)

মন্তব্য করুন