রাতে ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে মুখর ঢাবি ক্যাম্পাস

রাতের ঢাকা বিশ্ববি্দ্যালয় ক্যাম্পাস হঠাৎই ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছে। শত শত শিক্ষার্থী হল থেকে রাজপথে নেমে সেই স্লোগানে স্মরণ করলেন গত বছরের এমনই একটি দিনকে। সেদিন বৈষম্যবরোধী আন্দোলনের টার্নিং পয়েন্ট ছিল এ্ রাত এবং সেই রাতের স্লোগান।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে সেদিন বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘রাজাকারের সন্তান ও নাতিপুতি’ বলে মন্তব্য করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর বিপুল প্রতিক্রিয়া ঘটে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে নেমে আসেন পথে। তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার’ স্লোগানে বিদীর্ণ হয় রাতের নিস্তব্ধতা। উত্তাল হয় প্রতিটি ক্যাম্পাস।
সেই ১৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে একজন টিভি সংবাদিক মেধাবী ও কোটা বাছাই নিয়ে তার মতামতে বলেন তিনি দুজনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে বেছে নেবেন। তার বক্তব্যের এ সময়ে শেখ হাসিনা জোরের সঙ্গে বলেন, ‘অবশ্যই’। এরপর তিনি বলে ওঠেন, ‘যুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এত ক্ষোভ কেন? তার মানে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা মেধাবী না। যত রাজাকারের বাচ্চারা, নাতি-পুতিরা হলো মেধাবী।’
এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় ওই সাংবাদিকের প্রশ্ন ও শেখ হাসিনার মন্তব্য। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ওই মন্তব্য। সন্ধ্যার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা একত্র হতে থাকেন।
মাঝরাতে শিক্ষার্থীরা হল ছেড়ে ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার-রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার-স্বৈরাচার’ স্লোগান দিতে দিতে টিএসসিতে এসে সমবেত হয়। ছাত্রীরাও হল গেটের তালা ভেঙে আন্দোলনে যোগ দেন। তারা আরও স্লোগান দেন ‘চাইতে এলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’। এমন সব স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস।
বিভিন্ন হল ও আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যোগ দেন। ছাত্রীরাও হল গেটের তালা ভেঙে আন্দোলনে যোগ দেন। সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। সেদিন থেকে কোটাবিরোধী আন্দোলন জ্বলে ওঠে।
পরদিনই ক্যাম্পাসে হামলা করে সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। এ যেন বারুদে দেশলাইয়ের জ্বলন্ত কাঠি ছুঁয়ে গেল। শিক্ষার্থীরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ক্যাম্পাস ও হল থেকে বিতাড়িত করে ছাত্রলীগকে।
(ঢাকাটাইমস/১৫জুলাই/এলএম/মোআ)

মন্তব্য করুন