সুন্দরবনে দস্যুতার পুনরুত্থান, জেল পলাতক ৫৩ আসামি নিয়ে আতঙ্ক
গত ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আবার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে সুন্দরবন। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, জেল ভেঙে পালিয়ে আসা দণ্ডপ্রাপ্ত এবং দাগি আসামিরা সুন্দরবনে দস্যুতার পুনরুত্থান ঘটাচ্ছে। তাতে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল পেশাজীবীদের মধ্যে ভয় ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ জলরাশিতে বিভিন্ন অপরাধী চক্রের তৎপরতা বাড়তে শুরু করেছে। স্থানীয় জেলেরা জানান, রাতে জঙ্গলের মধ্যে আওয়াজ শোনা যায় এবং অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তাদের জীবনযাত্রা এবং নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা কারাগার সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে জেলা কারাগারে ২৩৬ জন বন্দি আছেন। এর মধ্যে পুরুষ ২২২ জন এবং নারী ১৪ জন। গত ৫ আগস্ট কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ৮৭ জন বন্দির মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন ২৫ জন। অনেকে আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। এখনো পলাতক আছেন ৫৩ জন।
ভারপ্রাপ্ত জেল সুপার এনায়েত উল্যা জানান, কারাগার ভেঙে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় একটি মামলা করা হয়েছে। পালাতক আসামিদের তালিকা থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া কারাগারে হামলা করে আসামি ছিনতাই ও ভাঙচুরের ঘটনায় ৮২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৩-৪ হাজার জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে।
এদিকে, সুন্দরবনে মুক্তিপণের জন্য জেলে অপহরণের ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের চুনকুঁড়ি নদীর তক্কাখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে বনদস্যুদের কবল থেকে ১০ জেলেকে উদ্ধার করে বন বিভাগের সদস্যরা। এ সময় তিনটি নৌকা, একটি সোলার প্যানেল ও এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার হওয়া জেলেরা জানান, তাদের বিভিন্ন সময় সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থান থেকে বনদস্যু মঞ্জুর বাহিনী মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করে। এই বাহিনীর প্রধান হিসেবে মঞ্জুর নিজেই নেতৃত্ব দেন।
জেলেরা উদ্বেগ প্রকাশ করে আরও বলেন, সুন্দরবনে প্রশাসনের কড়া পাহারা থাকা সত্ত্বেও দস্যুতার প্রকোপ বাড়তে থাকায় বনজীবীদের নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে অনেকেই জীবিকার জন্য বনে যেতে ভয় পাচ্ছেন।
এ বিষয়ে পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক ইকবাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের কদমতলা ফরেস্ট স্টেশনের চুনকুঁড়ি নদীর তক্কাখালী এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় বনদস্যু বাহিনীর সদস্যরা বনবিভাগের সদস্যদের লক্ষ্য করে ২ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। জবাবে বনবিভাগের সদস্যরাও পাল্টা ২ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এসময় প্রতিরোধের মুখে বনদস্যুরা পালিয়ে যায়। ধ্বংস করা হয় তাদের একটি আস্তানা। পরে ঘটনাস্থল থেকে অপহৃত ১০ জেলে, তিনটি নৌকা, একটি সোলার প্যানেল ও ১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘১ রাউন্ড গুলি উদ্ধারের ঘটনায় আমরা থানায় জিডি করেছি। আমাদের লোকজন সাদা পোশাকে ডিউটি করছে। বন বিভাগের টহলও জোরদার করা হয়েছে। বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে বনের পরিবেশ।’
সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল পেশাজীবীদের আশা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নিলে সুন্দরবনের শান্তি ও সুরক্ষা পুনরুদ্ধার সম্ভব। তারা আশা করেন, শিগগির সুন্দরবনে আবার নিরাপদ ও শান্ত পরিবেশে ফিরে আসবে।
(ঢাকাটাইমস/১৮নভেম্বর/মোআ)মন্তব্য করুন