কুড়িগ্রামে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ফুলকপি চাষে বাম্পার ফলন

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১২
অ- অ+

কীটনাশক ব্যবহার কমিয়ে জৈব সার এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ফুলকপি চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন কুড়িগ্রামের কৃষকরা। দ্বিগুণ লাভের পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার রাজারহাট উপজেলায় ছিনাই ইউনিয়নের মহিধর ও মিস্ত্রিপাড়ার কৃষকরা কীটনাশক ব্যবহার কমিয়ে জৈব সার এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ফুলকপির বাম্পার ফলন পেয়েছেন। উৎপাদন খরচ কমার পাশাপাশি পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষা করতেও সক্ষম হচ্ছেন এই অঞ্চলের কৃষকরা। নিরাপদ সবজি উৎপাদন হাব-ক্লাস্টার পদ্ধতির মাধ্যমে সমন্বতিভাবে কৃষকরা জমিতে ফেরোমন ফাঁদ বা বিষ টোপ এবং ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার করে ক্ষতিকর পোকা রোধ করছে। আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতিতে কৃষি পরিবেশ অঞ্চল অনুসারে সঠিক ফসলের জাত নির্ণয়,মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহার, বীজতলা প্রস্তুত,চারা রোপন, সঠিক দূরত্ব বজায় রেখে চারা রোপন। সময় মতো সেচ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, গাছ পাতলাকরণ, আগাছা দমন, জৈব সার প্রয়োগ করেন সময়মতো। এতে করে উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফসল উৎপাদন, মাটির উর্বরতা রক্ষা ও বৃদ্ধি, পরিবেশ দূষণ হ্রাস, স্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত নিরাপদ ফসল উৎপাদন হচ্ছে। পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি ব্যবহার করে জমিতে চাষাবাদ করায় মাটিতে ক্ষুর অনুজীবের ক্রিয়াশীলতা ৩০-১০০ ভাগ বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও মাটিতে উচ্চ মাত্রায় জৈব উপাদানের কারণে অনুজীবের ক্রিয়া এবং মাটির বুনা ঠিক থাকে। কীটনাশক ব্যবহার কমানোর কারণে উপকারী পোকামাকড়, মাছ, ব্যাঙ, পশু,পানি প্রভৃতি সংরক্ষণ হবার পাশাপাশি কৃষকের উৎপাদন খরচ সাশ্রয় হচ্ছে। সমন্বিতভাবে কৃষকরা প্রায় চার একর জমিতে ফুলকপি চাষাবাদ করেছেন। এতে করে বিঘা প্রতি ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ করে এক থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করছেন কৃষকরা। কীটনাশক ব্যবহার কমার কারণে শ্রমিকরাও স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছেন।

কৃষক আলম বাদশা বলেন, ‘আমি এক একরের বেশি ফুলকপি চাষ করেছি। আরডিআরএস বাংলাদেশের পরামর্শ অনুযায়ী নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এতে করে আমার কয়েক বছরের তুলনায় ফলনে উৎপাদনে খরচ কম হয়েছে এবং আয় দ্বিগুণ হয়েছে।’

কৃষক আনারুল ইসলাম বলেন, বিগত বছরগুলোতে ফুলকপি চাষের সময় ১২ হতে ১৫ বার পর্যন্ত কীটনাশক দিতে হয়েছে। এতে প্রায় তিন থেকে চার হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু এবার নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে আরডিআরএস বাংলাদেশের পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন কর্তৃক বিনামূল্যে ফেরোমন ফাঁদ বা বিষ টোপ এবং ফ্রুট ব্যাগ পেয়েছি। সেগুলো জমিতে ব্যবহার করে কীটনাশক ছাড়াই ক্ষতিকর পোকামাকড় মারা পড়েছে। জমিতে এবার শুধু দু’ বার ব্যবহার করেছি। এতে আমার উৎপাদন খরচ কমেছে এবং জমির উর্বরতাও ঠিক রয়েছে।‘

আরডিআরএস বাংলাদেশের কৃষিবিদ আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘২০২২ সাল থেকে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। পরিবেশ বান্ধব, মাটির উন্নয়ন, অধিক ফলন পেতে নিরাপদ সবজি হাব-ক্লাস্টার পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হয়েছে। এ জন্য ফেরোমন ফাঁদ বা বিষ টোপ, ফ্রুট ব্যাগ এবং জৈব সার ব্যবহার করে কীটনাশককে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে কৃষকদের। কৃষক যদি অধিক হারে কীটনাশক ব্যবহার করে তাহলে মাটি দূষণ, পানি দূষণ এবং বায়ু দূষণ হবে। এতে করে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়বে। অনিরাপদ খাদ্যের কারণে মানুষের হৃদরোগ, ক্যানসারসহ নানা রোগ বৃদ্ধি পাবে। পরিবেশ বান্ধব ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন এবং চাষিরা যেন অধিক ফলন পায় সেজন্য আমরা এই পদ্ধতি ছড়িয়ে দিতে কাজ করছি।’

রংপুর আরডিআরএস বাংলাদেশের টিম লিডার বিদ্যুৎ কুমার সাহা বলেন, আরডিআরএস বাংলাদেশের বাস্তবায়নে পল্লী-কর্ম সহায়ক ফাইন্ডেশনের আর্থিক এবং কারিগরি সহযোগিতায় সম্বনিত কৃষি কর্মকাণ্ডের আওতায় ফুলকপি চাষে ব্যাপক সার ফেলেছে। এই কর্মসূচি কুড়িগ্রাম সদর এবং রাজারহাট উপজেলায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে কৃষকরা সাফল্য পেয়েছে। এতে করে কৃষকরা লাভবান হবার পাশাপাশি পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষা ভূমিকা রাখছে।

রাজারহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুন্নাহার সাথী বলেন, কৃষকদের নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে সরকারি-বেসরকারিভাবে প্রশিক্ষণ ও সহায়তার প্রদান করা হচ্ছে।

(ঢাকা টাইমস/০১ডিসেম্বর/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
কোকোর কবরে বিএনপি নেতা জনির শ্রদ্ধা
বাংলাদেশে জলবায়ু সংকটে ৩ কোটি ৩০ লাখ শিশুর শিক্ষা ব্যাহত: ইউনিসেফ
ভোটের অধিকার ফেরাতে জনগণকে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হতে হবে: তারেক রহমান
ফ্রুটিং ব্যাগে ঝিনাইদহে কলা চাষে নতুন সম্ভাবনা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা