আয়নাঘরের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই: জিয়াউল আহসান
আয়নাঘর নামে পরিচিতি গোপন বন্দিশালার সঙ্গে নিজের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান।
বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) হাজির করা হলে তিনি একথা বলেন।
শুনানি চলাকালে শেষদিকে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন জিয়াউল আহসান। ওই সময় তাকে বসাতে গেলে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দেন তিনি। আদালত এজলাস ছাড়ার আগে জিয়াউল আহসানের আইনজীবী নাজনীন নাহার ট্রাইব্যুনালের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, জিয়াউল আহসান কথা বলতে চান।
এ সময় কাঠগড়ায় ক্ষিপ্ত জিয়াউল আহসান বিচারকদের লক্ষ্য করে বলেন, আমি আয়নাঘরে কখনো চাকরি করিনি। আমি টেকনিক্যাল দায়িত্বে ছিলাম।
এ সময় আদালত বলেন, তদন্ত চলছে। আপনার আইনজীবী আছে। আইনজীবী বলার পর প্রয়োজনে যোগ করবেন।
শুনানি ও আদেশ শেষে এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। বিচারপতিরা এজলাস ছাড়ার পর দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা আসামিদের কাঠগড়া থেকে হাজত খানায় নেওয়ার জন্য যান।
এ সময় জিয়াউল আহসান তাদের বলেন, কেউ আমাকে ধরবে না, কাছে আসবে না। তোমরা মার খেয়েছো, ভবিষ্যতে আরও খাবে। আমাকে জেলখানায় কাগজ-কলম দেওয়া হয় না। আমি লিখব। আমাকে কাগজ-কলম দিতে হবে। আমার বিরুদ্ধে যা বলেছে, তা আমাকে দাও। আমি দেখব।
এ সময় তাকে বেশ উত্তেজিত দেখা যায়। তবে তার আইনজীবী নাজনীন নাহার বলেন, পরে সবই দেওয়া হবে।
আদালত থেকে কারাগারে নিতে প্রিজনভ্যানে নেওয়ার জন্য কয়েকজন পুলিশ সদস্য তার দুই হাত ধরে রাখেন। এ সময়ও তিনি তাদেরকে হাত ছেড়ে দিতে বলেন। পরবর্তীতে প্রিজন ভ্যানের মধ্যে থেকে সাংবাদিকদের উদ্দেশে জিয়াউল আহসান বলেন, আমি আয়নাঘরে কখনই চাকরি করিনি।
এদিকে শুনানি শেষে জিয়াউল আহসানের কর্মকাণ্ডকে বসনিয়া-হার্জেগভনিয়ার 'কসাই' রাদোভান কারাদজিচের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
এর আগে, সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে ৮ কর্মকর্তাকে পুরনো হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
ট্রাইব্যুনালে যাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তারা হলেন- সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান, ঢাকা জেলার সাবেক পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহ আল কাফি, ডিএমপির সাবেক ডিসি মো. জসিম উদ্দিন মোল্লা, ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুর ইসলাম, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান, গুলশান থানার সাবেক ওসি মাজহারুল হক এবং ঢাকা উত্তর ডিবির সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন।
গত ২৭ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনের আবেদন মঞ্জুর করে এই ৮ কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেন।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই ৮ কর্মকর্তা আত্মগোপনে ছিলেন। বিভিন্ন সময় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আদেশ মোতাবেক আজ তাদের আনা হয় ট্রাইব্যুনালে। এদের মধ্যে ছয়জনকে কাশিমপুর কারাগার থেকে আনা হয়েছে। বাকি দুজনের মধ্যে সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এবং এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানকে কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/২০নভেম্বর/এলএম/ইএস)
মন্তব্য করুন