বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলা: জবি-কুবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী-হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেসব সমাবেশ থেকে ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তোলা হয়েছে।
ঢাকা টাইমসের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে সোমবার রাত ১১টায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে প্রধান ফটকে এসে জড়ো হর শিক্ষার্থীরা। এসময় তাদের ‘ভারত যাদের মামার বাড়ি, বাংলা ছাড় তাড়াতাড়ি’, ‘গোলামী না আজাদী, আজাদী আজাদী’, ‘ঢাকা না দিল্লি, ঢাকা ঢাকা’, ‘হাইকমিশনে হামলা কেন, দিল্লি তুই জবাব দে’, ‘ভারতীয় আগ্রাসন, চলবে না চলবে না’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা বলেন, ভারতে আজকে আমাদের হাইকমিশনে হামলা এবং পতাকাকে টেনে-হিঁছড়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, এটা আমাদের অস্তিত্বে আঘাত এনেছে। এজন্য আজ আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ভারত যদি বাংলাদেশকে নিয়ে কোনোপ্রকার চক্রান্ত করে, তাহলে আমরা সেটা শক্ত হাতে প্রতিহত করব।
অন্তর্বর্তী সরকার এবং পাশাপাশি জাতিসংঘের কাছে কুবির শিক্ষার্থীরা আহ্বান জানান, তারা যেন এর বিরুদ্ধে সুষ্ঠু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যেখানে ভারতে হাইকমিশনে হামলা হয়েছে, সেখানে অন্য দেশের হাইকমিশনও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তাই আমরা জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী-হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে ভারতের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে বহিষ্কারের দাবি তুলেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোমবার রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা।
এ সময় বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল জব্বার মোড়ে জড়ো হতে থাকেন। পরে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে দিয়ে কামাল রঞ্জিত মার্কেট প্রদক্ষিণ করে আবার আব্দুল জব্বার মোড়ে এসে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে চার শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় একটি মঞ্চ গঠনের দাবি তোলেন। তারা বলেন, ‘আমরা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার থেকে মুক্ত হয়েছি, কিন্তু ভারতের আগ্রাসন থেকে মুক্ত হতে পারিনি। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক হবে প্রতিবেশীর মতো, প্রভুর মতো নয়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বিগত বছরে ভারত সর্ম্পক করেছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে, বাংলাদেশের সঙ্গে নয়। এটা এখন স্পষ্ট যে, ফেলানী, আবু সাইদ এবং সাইফুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের পেছনে ভারতের হাত রয়েছে। আগরতলার এই ঘটনার পর ভারতের রাষ্ট্রদূতকে জবাবদিহির আওতায় এনে তাকে বহিষ্কার করতে হবে। ভারতের অপপ্রচার ও তাদের দোসরদের প্রতিরোধ করার জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব মঞ্চ গঠনের দাবি জানাচ্ছি
শিক্ষার্থীরা আরও বলে, ভারত সবসময় বাংলাদেশকে প্রভুভুক্ত করার চেষ্টা করে আসছে। বাংলাদেশে ১৮ কোটি মানুষ জীবিত থাকতে আমরা ভারতের কাছে এক ইঞ্চি জমি ছাড়ব না। আমরা সবাই মিলে নিজ নিজ জায়গা থেকে ভারতীয় পণ্য বর্জন করব। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো অপশক্তি আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ সহকারী-হাইকমিশনে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীদের হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) বিক্ষোভ মিছিল করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ প্রদক্ষিণ করে মূল ফটক দিয়ে বের হয়। পরে ভিক্টোরিয়া পার্ক হয়ে রায়সাহেব বাজার মোড় ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত চত্বরে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
তারা বলেন, ‘ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে ছাত্রজনতাকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যেকোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। ভারত যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে, তাহলে সেভেন সিস্টার রাজ্যগুলোকে আমরা অস্থির করে তুলবো। আমাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তির কাছে তারা অসহায়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘মনিপুর কিংবা ত্রিপুরার অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে আমরা নাক গলাইনি। কিন্তু ভারত আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে হস্তক্ষেপ করছে। এটি আমরা মেনে নিতে পারি না। হিন্দুত্ববাদী আধিপত্যের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
তারা আরও বলেন, ‘ভারতের চারপাশে কোনো বন্ধু রাষ্ট্র নেই। তাদের আধিপত্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি সব প্রতিবেশী দেশকে শত্রুতে পরিণত করেছে। বাংলাদেশকেও তারা অস্থিতিশীল করতে চায়। কিন্তু তারা ভুলে গেছে, আমরা ঐক্যবদ্ধ হলে তারা আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা ভারতীয় সরকারের কাছে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ সহকারী-হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেটি ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক হয়ে ভোলা রোড প্রদক্ষিণ করে পরে গ্রাউন্ড ফ্লোরে মিলিত হয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, তারা (ভারত) আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ। তাদের সঙ্গে আমাদের কূটনীতিক সম্পর্ক থাকবে, প্রতিবেশী হিসেবে ভালো সম্পর্ক থাকবে। কিন্তু কোনোভাবেই তাদের সঙ্গে আমাদের রাজা-প্রজার সম্পর্ক হতে পারে না। ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের হাইকমিশনে হামলার জন্য অবশ্যই ভারতকে ক্ষমা চাইতে হবে।
ভারতের উদ্দেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, এ দেশে আর আওয়ামী লীগের ক্ষমতা নেই। সুতরাং তারা যেন আওয়ামী লীগের আমলের মতো করে এ দেশে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা না করে। দিল্লিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই— শরীরে এক ফোটা রক্ত থাকা পর্যন্ত আমরা ভারতের আধিপত্য মেনে নেব না। যেভাবে আমরা হাসিনাকে পালাতে বাধ্য করেছি সেভাবেই আমরা দিল্লির আগ্রাসনও রুখে দেব।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ সহকারী-হাইকমিশনারের কার্যালয়ে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। সোমবার রাত ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় প্রধান ফটকে গিয়ে বিক্ষোভ মিছিলটি শেষ হয়।
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন। বলেন, বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি আমরা। ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কোনো দেশের রাষ্ট্রদূতের কার্যালয় যে দেশে থাকবে সেই দেশ সেই কার্যালয় ও রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা দেবে। কিন্তু ভারতের সরকার সেই ভিয়েনা কনভেশনের নিরাপত্তার যে দায়িত্ব তা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশ অস্থিতিশীল করার জন্য ভারত ও তাদের এজেন্টরা চেষ্টা চালাচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলিম,বৌদ্ধ,খ্রিস্টান সবাই সম্প্রতির চাদরে মুড়িয়ে বসবাস করছে। আপনারা সংখ্যালঘুর নিরাপত্তার কথা বলছেন, আমরা বলবো আপনাদের দেশে যে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় রয়েছে তাদের নিরাপত্তা দিতে আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন। আগে নিজের দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন, তারপর অন্য দেশের বিষয়ে নাক গলান।
(ঢাকাটাইমস/৩ডিসেম্বর/এজে)
মন্তব্য করুন