যুক্তরাষ্ট্রে আদানির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, এরপর কী?
ভারতের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানির বিরুদ্ধে বুধবার ঘুস ও জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত। ফলে তাকে এখন দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে৷
গৌতম আদানি ও তার ভাইয়ের ছেলে সাগর আদানিসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, তারা ভারতের সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির জন্য ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের ২৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঘুস দিয়েছেন৷ এই প্রকল্প থেকে ২০ বছরে দুইশ কোটি ডলার লাভ করতে পারবে আদানি৷
আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ঘুসের সাহায্যে এই প্রকল্প পাওয়ার বিষয়টি গোপন করেছেন৷ এর মাধ্যমে তিনি মার্কিন বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন৷
এদিকে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে আদানি গ্রুপ এসব অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন' বলেছে৷ তারা একটি ‘আইন মেনে চলা কোম্পানি' বলেও বিবৃতিতে দাবি করা হয়৷
এরপর কী?
আদানিকে বিচারের মুখোমুখি করতে চাইলে মার্কিন প্রসিকিউটরদের যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে থাকা প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে ভারতের কাছে চাইতে হবে৷
যুক্তরাষ্ট্র আদানিকে চাওয়ার আবেদন করলে ভারতের আদালত সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে৷ সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে৷ যেমন, আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটি ভারতেও অপরাধ কিনা, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিনা বা যুক্তরাষ্ট্রে আদানির অমানবিক আচরণের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা৷
আদানি এই প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে লড়তে পারেন৷ এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কত সময় লাগবে তা স্পষ্ট নয়৷ আদানির বিরুদ্ধে ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুস দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে, তাই প্রত্যর্পণের বিষয়টির রাজনৈতিক দিকও রয়েছে৷
আদানি কি আদালতে অভিযোগ খণ্ডন করতে পারবেন?
হ্যাঁ, তবে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে তার হাজির হওয়ার আগ পর্যন্ত তার আইনজীবীরা একটি বিষয় চ্যালেঞ্জ করতে পারেন৷ সেটি হচ্ছে, তারা যুক্তি দিতে পারেন, আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার এখতিয়ার মার্কিন প্রসিকিউটরদের নেই৷
আর আদানি মার্কিন বিচারকের সামনে হাজির হলে তার আইনজীবীরা বলতে পারেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে আইনগত ঘাটতি আছে বা এর পক্ষে তথ্যপ্রমাণ নেই৷
অভিযোগ দাখিলের সময় মার্কিন প্রসিকিউটরেরা ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক এবং মোবাইল ফোন ও মেসেজিং অ্যাপ রেকর্ড উপস্থাপন করেছেন৷
আদানি তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কিছু অংশ স্বীকার করে প্রসিকিউটরদের কাছে শাস্তির পরিমাণ কমাতে আবেদনও করতে পারেন৷ যদিও প্রসিকিউটরেরা এমন আলোচনায় ঢুকতে বাধ্য নন৷ এছাড়া এধরনের কোনো চুক্তি হলে সেটি একজন বিচারক দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে৷
আদানিকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রত্যর্পণ করা হলে বা তিনি নিজে যুক্তরাষ্ট্রে আত্মসমর্পণ করলেও বিচার শুরু হতে অনেক দেরি হতে পারে৷
কী শাস্তি হতে পারে?
অভিযোগ প্রমাণ হলে আদানির কয়েক দশকের জেল হতে পারে, সঙ্গে আর্থিক জরিমানাও হতে পারে৷ তবে বিষয়টি বিচারকের উপর নির্ভর করে৷
আদানিকে অভিযুক্ত করতে হলে ১২ জনের একটি জুরিকে সর্বসম্মতিক্রমে ভোট দিতে হবে৷ এছাড়া আদানি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন৷
সূত্র: ডয়চে ভেলে, রয়টার্স
(ঢাকাটাইমস/২২নভেম্বর/এমআর)
মন্তব্য করুন