অতিরিক্ত লবণ ডেকে আনে হার্টের বিপদ, কম খেলে হতে পারে মৃত্যু
লবণ ছাড়া যে কোনো খাবার মুখে তোলা কঠিন। কারণ লবণ ছাড়া খাবারে কোনো স্বাদ পাওয়া যায় না। মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, লবণ আমাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য। নিউরন, মস্তিষ্ক, মেরুদণ্ড, পেশি, ত্বক এবং হাড়সহ আমাদের সব কার্যকর কোষের জন্য লবণ গুরুত্বপূর্ণ। লবণ আমাদের শরীর এবং মনে শক্তি যোগায়। লবণে থাকা সোডিয়াম আমাদের লালায় দ্রবীভূত হয় এবং স্বাদ কোষে প্রবেশ করে তাদের সক্রিয় করে। এগুলো এক ধরনের ছোট বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গের মতো। লবণের কারণে সৃষ্ট এই বৈদ্যুতিক সঙ্কেতগুলো আমাদের চিন্তা ও অনুভূতিকে উদ্দীপিত করে।
হাজার হাজার বছর আগে থেকে মানুষ খাবারে লবণের ব্যবহার শুরু করে। তবে তখনকার লবণ আজকের যুগের সাগরের পানি পরিশুদ্ধ প্রক্রিয়াজাতকৃত লবণ নয়। তখন লবণ সংগ্রহ করা হতো খনি থেকে। আমরা খাওয়ার জন্য যে লবণ ব্যবহার করি তার বেশির ভাগই আসে সমুদ্রের লবণ থেকে। সাধারণ লবণ দেখতে সাদা হলেও খনি থেকে তোলা লবণ বিভিন্ন রঙের হতে পারে। সাদা লবণ মূলত সমুদ্রের পরিশোধিত লবণ। লবণ চাষিরা জোয়ারের সময় সমুদ্রের পানি জমা করে রাখে বড় বড় জমিতে। তারপর সেই জমির চারপাশ বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখে। সূর্যের আলোতে সেই পানি বাষ্প হয়ে গেলে তার নিচে লবণ তৈরি হয়।
লবণের মূল উপাদান হলো সোডিয়াম ক্লোরাইড। ক্যালসিয়ামের মতো আমাদের শরীর সোডিয়ামও সংরক্ষণ করতে পারে না। ফলে শরীরে সোডিয়াম কমে গেলে একমাত্র সমাধান হলো সোডিয়াম তথা লবণ খাওয়া। যথেষ্ট সোডিয়াম গ্রহণ না করলে তা মৃত্যুর কারণও হতে পারে বলে সতর্ক করেন পুষ্টিবিজ্ঞানীরা। শরীরে সোডিয়াম কম থাকলে হাইপোনাট্রেমিয়া দেখা দিতে পরে। যার ফলে বিভ্রান্তি, বমি, খিঁচুনি এবং খিটখিটে মেজাজ হয়ে যেতে পারে, এমনকি ব্যক্তি কোমায়ও চলে যেতে পারে।
চিকিৎসকদের মতে, দিনে খাবারের সঙ্গে এক চামচ পরিমাণ লবণ গ্রহণ করা যায়। তবে এর বেশি হলে ডেকে আনবে মারাত্মক বিপদ। বাসায় তৈরি খাবারের পাশাপাশি প্যাকেটজাত খাবারেও ঝুঁকি বাড়ছে। কারণ, গবেষকরা এসব খাবারে নিরাপদ মাত্রার চেয়েও বেশি লবণ পেয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অতিরিক্ত লবণ খেলে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়, যা স্ট্রোক এবং হার্ট (হৃদপিণ্ড) অ্যাটাকের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই উচ্চ রক্তচাপ এবং হাইপারটেনশনে আক্রান্ত রোগীসহ সবাইকে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া কমাতে হবে। রান্নায় পরিমিত লবণই যথেষ্ট, খাবারে আলাদা করে লবণ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
লবণ কম খাওয়ার ফলে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়তে পারে বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। আর এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রাও বাড়ে। টাইপ টু ডায়াবিটিস এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও থাকে কম লবণ খাওয়ার ফলে।
লবণে থাকে সোডিয়াম। আর সঠিক পরিমাণ সোডিয়াম শরীরে প্রয়োজনীয়। যা রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে। রক্তচাপ আচমকা কমে গেলে তার ফলে হার্ট অ্যাটাকের মতো হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শুধু হার্ট অ্যাটাকই নয়, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে এর ফলে।
ডায়াবেটিস রোীগদের জন্য কম লবণ খাওয়ার অভ্যাস ভয়ানক হতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। রান্নায় কম লবণ ব্যবহারে ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিস এবং টাইপ টু ডায়াবিটিস উভয় রোগীদের ক্ষেত্রেই একই প্রভাব পড়ে কম লবণের ব্যবহার।
শরীরে এনার্জির অভাব দেখা দেয় কম লবণ ব্যবহারের ফলে। এর ফলে সারাক্ষণই ক্লান্তভাব দেখা দেয়।
পরিমিত লবণ শরীরের জন্য উপকারী। গবেষকদের মতে, দৈনিক ৫ গ্রামের কম লবণ গ্রহণ রক্তচাপ ও কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, স্ট্রোক, করোনারি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। এই লবণ স্নায়ু ও পেশির কাজের জন্য অপরিহার্য এবং শরীরের তরল নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। আবার প্রয়োজনের বেশি লবণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এতে রক্তচাপ বাড়ে। অতিরিক্ত লবণ হূদেরাগ, স্ট্রোক, ডিমনেশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ এবং কিডনি রোগের কারণ হতে পারে।
মানুষের জীবনের জন্য লবণের গুরুত্ব অপরিসীম। জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ইলেক্ট্রোলাইট, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম অপরিশোধিত লবণে রয়েছে। শরীরে লবণ বেড়ে যাওয়া বা লবণের পরিমাণ কমে যাওয়া দুটিই দেহের জন্য বিপদজনক।
(ঢাকাটাইমস/২৭ নভেম্বর/আরজেড)
মন্তব্য করুন