আগে ভুয়া মামলা করত পুলিশ, এখন করছে জনগণ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
দেশের বিভিন্ন স্থানে গণহারে দায়ের হওয়া মামলার অধিকাংশ ভুয়া মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আগে ভুয়া মামলা করত পুলিশ। তারা ১০টা নাম, আর ৫০টা বেনামি আসামি দিত। এখন ভুয়া মামলাগুলো করছে জনগণ। তারাও ১০টা নাম, ৫০টা বেনামি আসামি দিচ্ছে। মামলাগুলো পুলিশ, র্যাব কিংবা আনসার দেয়নি। জনগণই দিচ্ছে। তদন্তে কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি আমরা।
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), কোস্টগার্ড, আনসার ও ভিডিপি, বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, কারা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ মতবিনিময় সভায় অংশ নেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, থানাকে জনগণের আস্থার জায়গায় পরিণত করতে হবে। জনগণ যাতে নির্বিঘ্নে ও নির্ভয়ে যেকোনো সমস্যায় থানায় যেতে পারে ও উপযুক্ত সেবা পায় থানার পরিবেশ ও কার্যক্রম সেভাবে রূপান্তর করতে হবে।
তিনি বলেন, থানায় সাধারণ জনগণের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। জনবান্ধব পুলিশ গড়ে তুলতে থানার কার্যক্রম আরো সক্রিয় ও যুগোপযোগী করতে হবে।
মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আদালত থেকে রায় পেয়ে অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিন পেয়েছে। এসব অপরাধী পুনরায় অপরাধে লিপ্ত হলে সাথে সাথে তাদের গ্রেফতার করতে হবে এবং কঠোর নজরদারিতে রাখতে হবে। তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার অপপ্রচারসহ বিভিন্ন সাইবার অপরাধও বেড়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। তবে হয়তো সেটা জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী খুব সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছেনি। তিনি এ সময় পুলিশকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন ও প্রোটকল ডিউটি কমিয়ে আনার নির্দেশ দেন।
উপদেষ্টা বলেন, যানজট নিরসনসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে কমিউনিটি পুলিশিংকে জোরদার করতে হবে। ইতোমধ্যে ডিএমপি এলাকায় ৭০০ জন শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবির অবসরপ্রাপ্ত সদস্য যারা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজে নিয়োকিজত ছিলেন তাদের মধ্যে আগ্রহী সদস্যদের বয়সসীমা বেঁধে দিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজে লাগানোর চিন্তাভাবনা চলছে।
তিনি বলেন, প্রতিটি মহানগরীর যানজট নিরসনে সভা-সমাবেশের জন্য মুক্তাঙ্গন নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগরীতে সভা-সমাবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। একইভাবে চট্টগ্রামসহ অন্যান্য মহানগরীর জন্য মুক্তাঙ্গন ঠিক করে দিতে হবে যাতে যানজট হ্রাস পায়। তিনি এ সময় মেট্রোপলিটন এলাকায় অনুমতি ছাড়া সভা-সমাবেশ করা যাবে না মর্মে নির্দেশনা প্রদান করেন।
মতবিনিময় সভা শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে উপদেষ্টা বলেন, মিডিয়াকে সত্য ঘটনা প্রচার করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের মিডিয়ার যে একটা সুনাম আছে, পার্শ্ববর্তী দেশের মিডিয়ার তা নেই। তারা মিথ্যাই কিন্তু প্রচার করে সবচেয়ে বেশি। আর এই মিথ্যাটাকে কাউন্টার করতে পারেন শুধু আপনারা।
পাকিস্তান থেকে আসা জাহাজের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, এই জাহাজ মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসে একটা দেশে গেছে। আবার ঐ দেশ থেকে আমাদের দেশে এসেছে। তিনি প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, আমাদের দেশে কি কোন দেশের জাহাজ আসা নিষেধ আছে।
তিনি বলেন, অনুমতি সাপেক্ষে যেকোনো দেশের জাহাজ আমাদের দেশে আসতে পারে। জাহাজটি রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন- খেজুর, পেঁয়াজ এগুলো নিয়ে এসেছে। এতে কেন আমরা বাধা দেবো? তিনি বলেন, দেশের স্বার্থ বিঘ্নকারী এসব ঘটনা যারা রটাচ্ছে তারা দেশের শত্রু।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. ময়নুল ইসলাম, র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম।
সভায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) এর কার্যক্রম সম্পর্কে ব্রিফ করেন অতিরিক্ত কমিশনার হুমায়ূন কবীর চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম রেঞ্জের কার্যক্রম সম্পর্কে ব্রিফ করেন পুলিশ সুপার (অপারেশনস) নেছার উদ্দিন আহমেদ।
(ঢাকাটাইমস/১৯নভেম্বর/এমআর)
মন্তব্য করুন