পাসপোর্ট বাতিল ২২ সামরিক কর্মকর্তার, টার্গেট কী আসলে একজন! কিন্তু কেন?
গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির অনুরোধ অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ২২ জন সামরিক কর্মকর্তার পাসপোর্ট বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর এবং পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) পাঠানো এক চিঠিতে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একজন সেনা কর্মকর্তাকে ‘টার্গেট করে’ ‘তড়িঘড়ি’ করে এমন চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে তথ্য উঠে আসছে। বিশেষ করে সেনা কর্মকর্তাদের ‘অত্যন্ত স্পর্শকাতর দুর্নীতির তথ্য’ চাপা রাখা এ চিঠির মূল উদ্দেশ্য বলে এক ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেছেন প্রবাসী সাংবাদিক আলজাজিরার আই-ইউনিটের (ইনভেস্টিগেশন ইউনিট) রিসার্চ অ্যানালিস্ট জুলকারনাইন সায়ের সামি।
শুক্রবার রাত ৩টা ৩৩ মিনিটে (বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এমন তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ২২ জন সামরিক কর্মকর্তার পাসপোর্ট বাতিলের চিঠি ইস্যুর কারণ জানা গেছে’ উল্লেখ করে ফেসবুক পোস্টে জুলকারনাইন লিখেছেন, “মূলত একজন সেনা কর্মকর্তাকে টার্গেট করে বেশ তড়িঘড়ি করে এই চিঠিটি ইস্যু করতে অন্যায় প্রভাব খাটিয়েছেন বহু অপকর্মের সঙ্গে জড়িত সাবেক একজন লে. জেনারেল। আর নেপথ্যে মূল কলকাঠি নেড়েছেন অতি পপুলার একজন সাবেক সেনাপ্রধান।”
এই ‘ঘটনার’ পেছনে দুটি কারণ দেখাচ্ছেন জুলকারনাইন, যার একটি হচ্ছে ‘অত্যন্ত স্পর্শকাতর সব দুর্নীতির তথ্য’ যেন প্রকাশ না পায়। অপরটি ‘আওয়ামী রেজিমের দুর্নীতি রাজ্যের গেইটকিপার হিসেবে সাবেক ওই সেনাপ্রধান নিজেই দুদক চেয়ারম্যান হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন।”
জুলকারনাইন সায়ের তার পোস্টে যাকে টার্গেট করে পাসপোর্ট বাতিলের চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন, সেই সাবেক কর্মকর্তার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, “বিগত সরকারের সময় হাতেগোনা যে কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা নিজ যোগ্যতার বলে মেজর জেনারেল গন্ডি পেরিয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদবি পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছিলেন, তাদের অন্যতম ছিলেন এসএম মতিউর রহমান। অত্যন্ত চৌকস এই সামরিক কর্মকর্তা নিজ বাহিনীর অতি গুরুত্বপূর্ণ সব পদে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২০ সালে তাকে আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের জিওসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০২২ সালের প্রথম দিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার বিশেষ একটি অনুরোধ রক্ষা না করায় শাস্তি হিসেবে তার চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যাস্ত করা হয়। যদিও রাষ্ট্রদূত হিসেবে পদায়ন করা হয় কিন্তু ২০২২ এর জুলাই থেকে এই কর্মকর্তা এক প্রকারের ওএসডি হয়েই ছিলেন। তার ছিল না কোনো কার্যালয়।”
এছাড়া ভারতবিরোধী হওয়ায় সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট সব কর্মকাণ্ড থেকে তাকে দূরে রাখা হয় বলেও উল্লেখ করেছেন জুলকারনাইন।
ইউরোপপ্রবাসী এই সাংবাদিক সাবেক সেনাকর্মকর্তা মতিউরকে ‘হত্যার পরিকল্পনা’র মতো স্পর্শকাতর তথ্য দিয়েছেন পোস্টে। লিখেছেন, “হাসিনা সরকারের অত্যন্ত গোপন সব তথ্য জানার কারণে কুখ্যাত তারিক আহমেদ সিদ্দিকী এই কর্মকর্তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বলেই বিশেষ একটি সূত্র দাবি করেছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে একরকমের নিভৃতভাবে অবসরে যান এই তিন তারকা জেনারেল। তিন দশকের বেশি যেই সেনাবাহিনীতে অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে চাকরি করেছেন, সেই বাহিনী থেকে কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই তাকে অবসর গ্রহণ করতে হয়, কেবল শেখ পরিবারের অন্যায় আদেশ না মানার কারণে।”
জুলকারনাইন সায়ের লে. জেনারেল (অ্ব.) মতিউরর রহমানকে দুদক চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগের প্রক্রিয়া তুলে ধরে বলেন, “পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান পদের জন্যে তার মতামত গ্রহণ করা হলে তিনি সাদরে ওই পদ গ্রহণে সম্মতি প্রদান করেন। মূলত এর পরপরই সাবেক ওই সেনাপ্রধান ও তার এক সহযোগী লে. জেনারেল এস এম মতিউরের পথরোধের পরিকল্পনা করেন। কেবল মাত্র তাকে ফাঁসানোর জন্যে ২২ জন সেনাকর্মকর্তার নামে গুমে জড়িত থাকার অভিযোগে পাসপোর্ট বাতিলের চিঠি ইস্যু করানো হয়, যেখানে এস এম মতিউরের নামটিও ঢুকিয়ে দেয়া হয়।”
জুলকারের ভাষ্য, “হাসিনা রেজিমের প্রতি অনুগত ওই সেনা কর্মকর্তারা অবশ্যই অবগত আছেন যে, লেফটেন্যান্ট জেনারেল মতিউর দুদক চেয়ারম্যানের পদে বসলে বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।”
“কিন্তু নতুন বাংলাদেশে কি এভাবে একজন অকুতোভয় সৈনিকের পথরোধ করা যাবে? সম্ভবত সময়ই তা বলে দিবে।” বলেন জুলকারনাইন সায়ের সামি।
(ঢাকাটাইমস/২২নভেম্বর/এফএ)
মন্তব্য করুন