বই: আমার কথা

ক্যারিয়ার গঠনে প্রতিযোগিতা

প্রকাশ | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৮:০৯ | আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৮:৫৪

অনলাইন ডেস্ক

সৈয়দ আবুল হোসেন বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে আমার কথা। এই বইয়ে তিনি নিজের চিন্তা, কর্মকাণ্ড, মূল্যবোধ, নানা অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে লিখেছেন।

এটি পড়লে তাকে যারা পুরোপুরি চিনেন না তাদের সুবিধা হবে। বইটি ঢাকাটাইমস২৪ডটকম ধারাবাহিকভাবে ছাপছে। বইটির আজকের পর্বে থাকছে- ‘ক্যারিয়ার গঠনে প্রতিযোগিতা’

জীবন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি প্রবহমান কাব্য। এ কাব্যকে আমরা সাধারণভাবে ক্যারিয়ার নামে অভিহিত করে থাকি। ক্যারিয়ার নামক এ কাব্য রচনায় জীবনের প্রতিটি পর্যায় যেন তীব্র প্রতিযোগিতায় ভরা উত্তেজনাময় একটি মাঠ, যেখানে প্রতিনিয়ত চলে অগণিত প্রতিযোগিতা। আমাদের পিতা, পিতামহ এবং আমাদের জীবনকে বাংলাদেশের সূচনালগ্ন থেকেই বহু প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে এবং হচ্ছে। বহু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আজ আমরা সাধারণ একটি দেশ থেকে বৈশি^ক বিবেচনায় উন্নত জাতিতে পরিণত হয়েছি। আমরা যদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে না পারতাম কিংবা ব্যর্থ হতাম; তাহলে আমাদের সকল অগ্রগতি থেমে যেত।

বাংলাদেশে আমাদের অনেক নেতা ও আদর্শ ব্যক্তি আছেন, যাঁদের প্রদর্শিত পথের মাধ্যমে আজও আমরা আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে যাচ্ছি, এগিয়ে যাচ্ছি নানা প্রতিকূলতার মাঝেও স্বচ্ছন্দ গতিতে। আমরা বাঙালিরা কোনো চ্যালেঞ্জেই ব্যর্থ হইনি। আমাদের আছে দৃঢ়সংকল্প এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অসম সাহস। ব্যবসার ক্ষেত্রেও অনেক লোক রয়েছে যারা নানা কাজে সফল হয়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রক্রিয়ায় আমরা প্রতিটি চ্যালেঞ্জে জয়লাভ করতে সক্ষম। আমরা কখনও কোনো কিছু সহজে ছেড়ে দিই না।
 
আমি ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হই তখন, যখন আমাদের লোকজনকে আমার লক্ষ্য ও পরিবর্তনে আস্থা স্থাপনের প্রয়োজন-সম্পর্কিত বিষয়গুলো বোঝাতে ব্যর্থ হই। অবশ্য এটা অনেকটা অনুধাবন-ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা। এজন্য আমাদের গুণগত শিক্ষার ওপর সমধিক গুরুত্ব দিতে হবে।

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বারবার চেষ্টা করতে হবে এবং একবার চেষ্টা কোনো অবস্থাতে যথেষ্ট নয়। আস্থা আনার জন্য প্রয়োজনে কয়েকবার বুঝতে হবে, লড়তে হবে, যাতে মানুষ বোঝে আপনি সঠিক পথে আছেন। কতগুলো চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন তার ওপর বিবেচনা করে মহান পুরুষ তৈরি হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে একজনের একক শক্তি ও ক্ষমতার মূল্যায়ন করতে পারি না, যতক্ষণ-না তার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা না করি। চ্যালেঞ্জ বা প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমেই বের হয়ে আসে ব্যক্তির সবচেয়ে ভালো এবং খারাপ দিক। একটি দলের পরিমার্জনের জন্য প্রতিযোগিতা হচ্ছে সবচেয়ে বড় অস্ত্র। উচ্চ তাপমাত্রার মাধ্যমে স্বর্ণ থেকে খাদ অপসারণ করা হয়। ঠিক তেমনি চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে ব্যক্তির শক্তি ও সামর্থ্য বৃদ্ধি পায়, যতবার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা হয় ততবার শক্তি ও সামর্থ্য পরিশুদ্ধ হয়। সত্যি বলেছেন হেলেন কেলার : Life is either a daring adventure or nothing at all. প্রতিটি মানুষের জীবনের সাফল্যের জন্য অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বিতা দরকার। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন জীবন মানুষকে মানুষ বানায় না, ফলে জাতিও তৈরি হয় না; অপরদিকে, চ্যালেঞ্জ বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা মানুষকে মানুষ বানায়, আর সেই মানুষগুলো একটি জাতি বানায়।

১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের যাত্রার সূচনাতে দেশের ভিতরের এবং বাইরের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। সৌভাগ্যবশত, আল্লাহ্ আমাদের শক্তিশালী এবং জ্ঞানঋদ্ধ জনগণ এবং দূরদর্শী অনেক নেতা দিয়েছিলেন, যাঁরা তাঁদের প্রজ্ঞা দিয়ে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছিলেন। নেতা এবং নেতৃত্ব এমন একটি সত্তা যাকে বলা যায়- শক্তির উৎসের মার্জিত রূপ। যিনি নিজেকে বিলীন করে দিয়ে সমাহিত হন সহস্রে , লাখে আর অসংখ্য বিমূর্তে। তাই নেতা কখনও বিলীন হন না, একজন নেতা অনুক্ষণ নেতা। তিনি বর্তমান থাকেন কল্যাণের বিমূর্ত প্রত্যয়ে- প্রেরণার উৎস হয়ে চিরকাল।

প্রতিটি চ্যালেঞ্জ বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা নতুন কিছু শেখার সুযোগ তৈরি করে দেয় এবং এর মাধ্যমে আমাদের ক্ষমতা, জ্ঞান ও আশপাশের মানুষের চরিত্র পরীক্ষিত, প্রতিফলিত হয়। প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা চ্যালেঞ্জ ছাড়া বিজয় ও অর্জন দুটোই অর্থহীন। যা সহজে লাভ করা যায়, তার প্রতি কারও আগ্রহ থাকে না, সেটি যতই আকর্ষণীয় হোক না কেন। অর্জনে যেটি যত জটিল, সেটি তত আকর্ষণীয় এবং যেটি যত কঠিন সেটি তত মূল্যবান।

প্রতিযোগিতা এমন একটি বিষয়, যাতে জয়ী হলে আসে সাফল্য এবং পরাজয় হলে আসে অভিজ্ঞতা। দুটোর কোনোটাই ফেলনা নয়। প্রতিযোগিতায় পরাজয়ে অর্জিত অভিজ্ঞতা নিষ্প্রভ ও অলস জয়ের চেয়ে অনেক অনেক বেশি মূল্যবান।

আমরা কত বছর কাজ করেছি- তার ওপর নির্ভর করে সত্যিকার অভিজ্ঞতা নির্ণয় হয় না। তবে আমরা কতগুলো চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি- তার ওপর নির্ভর করে সত্যিকার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা। ব্যর্থতাই অভিজ্ঞতার জনক, যদি ওই ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানে আমরা সময় দিই। মাঝে মাঝে আমাকে এমন ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে নানা প্রতিযোগিতায় যেতে হয়, যাদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। তবে তারা প্রবল প্রজ্ঞা ও বিশাল মনের অধিকারী। ফলে তাদের মধ্যে সাফল্য ও বিচক্ষণতা অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি। পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার মাধ্যমে অর্জিত এ জ্ঞানকে অন্যান্যদের চেয়ে অনেক বেশি দক্ষতায় কাজে লাগিয়েছে। অধিকন্তু তারা অন্যান্যদের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। আর এগুলোই তাদের যোগ্যতা ও কৃতিত্বের পরিচায়ক।
 
যে যত বেশি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়- সে তত বেশি দক্ষ, তত বেশি অভিজ্ঞ- হোক জয়ী বা পরাজিত। প্রতিযোগিতা ক্যারিয়ারকে টেকসই এবং জীবনযুদ্ধকে সহজসাধ্য করে তোলে। প্রতিযোগিতা এমন একটি বিষয়, যাতে জয়ী হলে আসে সাফল্য এবং পরাজয় হলে আসে অভিজ্ঞতা। দুটোর কোনোটাই ফেলনা নয়। প্রতিযোগিতায় পরাজয়ে অর্জিত অভিজ্ঞতা নিষ্প্রভ ও অলস জয়ের চেয়ে অনেক অনেক বেশি মূল্যবান।

প্রতিযোগিতা ব্যক্তিকে করে শাণিত, প্রতিষ্ঠানকে করে দক্ষ, লক্ষ্যকে করে তীব্র আর প্রাপ্তিকে করে তোলে যথার্থ। তাই প্রতিযোগিতা যত বাড়ছে, মানবসভ্যতার উন্নয়নও তত বিস্তৃত হচ্ছে। এজন্য সবার উচিত প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রকে বহুমুখী করে তোলা। তাতেই নিশ্চিত হবে আমাদের জাতীয় কল্যাণ। আমাদের নিরাপত্তা।

আগামীকাল কাল থাকছে - “বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া”

আরও পড়ুন - ঝুঁকি বনাম সাফল্য, ভিশন-২০২১, ‘সৃজনশীলতা’ ‘বিনিয়োগ’, ‘বাংলার বসন্ত’, ‘সময়, শ্রম ও অধ্যবসায়’ ‘আমার আদর্শ আমার নায়ক’ , ‘ধৈর্য পরীক্ষা’, ‘খেলাধুলা ও বাংলাদেশ’ ‘অধ্যয়ন, লেখালেখি ও নেতৃত্ব’ ‘নারীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশ’, ‘সাফল্যের স্বর্ণদ্বার’ , ‘ঐক্যবদ্ধ শক্তি সাফল্যের মেরুদণ্ড’ ‘পদ্মা সেতু’, `বিজয়চিহ্ন 'V' প্রকাশে ভিন্নতা', ‘উন্নয়ন ও অগ্রাধিকার’ , ​‘ইতিবাচক ভাবনা সাফল্যের চাবিকাঠি’ , ‘ভবিষ্যতের সরকার কেমন হবে’   ‘মাতৃভাষার প্রতি মমতা’‘সুখ ও শান্তি : আমাদের করণীয়’ , ‘নেতৃত্বের শক্তি’ ‘আদর্শ জীবন গঠনে মূল্যবোধ’, ‘আমার প্রাত্যহিক জীবন’​, 'আমার অনুভব'