শ্রীপুরে নবজাতককে বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ

প্রকাশ | ২৬ মে ২০২৩, ১৩:৫৮

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

গাজীপুরের শ্রীপুরে নবজাতককে বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেছেন এক দম্পতি। এ ঘটনা ঘটেছে উপজেলা পৌর শহরের শ্রীপুর চৌরাস্তার নিউ এশিয়া ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি হাসপাতালে। 

অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম ওই নবজাতককে টাকার বিনিময়ে অজ্ঞাত ব্যক্তির হাতে বিক্রি করে দেন। পরে হাসপাতালের বিল রেখে প্রসূতি মাকে ১৪ হাজার টাকা হাতে দিয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড় দেন।  

নবজাতকের মা প্রিয়া আক্তার (২৪) ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলার মালিডাঙ্গা গ্রামের মো. রাসেলের স্ত্রী। তিনি উপজেলার শ্রীপুর-কাপাসিয়া সড়কের পাশে বাবুল সরকারের বাড়িতে ভাড়া থাকেন।

প্রিয়া আক্তার জানান, তার স্বামী দিনমজুর। স্বল্প আয়ের সংসারে এক মেয়ে ফাতেমা (২) রয়েছে। প্রসব ব্যাথা নিয়ে গত রবিবার (২১ মে) শ্রীপুর চৌরাস্তার নিউ এশিয়া হাসপাতালে যান। নিজেকে ডাক্তার পরিচয়ে হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর জানান, দ্রুত সিজার না করলে মা-সন্তান দুই জনেরই সমস্যা হবে। 

অপারেশন করতে ১৫-১৬ হাজার টাকা লাগবে। আমার স্বামী অনেক চেষ্টা করেও টাকা জোগাড় করতে পারেনি। এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীর সন্তান বিক্রির প্রস্তাব দেন। নবজাতককে তার কথামতো তুলে দিলে নগদ টাকা দেবেন। ছেলে হলে ৫০ হাজার টাকা ও মেয়ে হলে ৩০ হাজার টাকা। হাসপাতালের বিল পরিশোধের আশ্বাসও দেন তিনি। অসহায় দম্পতি জাহাঙ্গীরের প্রস্তাবে রাজি হলে রাতেই প্রিয়ার সিজারের মাধ্যমে কন্যা সন্তান জন্ম দেন।

পরের দিন সোমবার (২২ মে) জাহাঙ্গীর অজ্ঞাত কোন এক ব্যক্তির হাতে প্রিয়ার নবজাতক সন্তানকে বিক্রি করে দেন। জাহাঙ্গীর কার কাছে নবজাতককে বিক্রি করেছে শত চেষ্টা করেও জানতে পারেনি অসহায় দরিদ্র রাসেল দম্পতি। পরে জাহাঙ্গীর প্রিয়াকে ১৪ হাজার টাকা দিয়ে জানান, নবজাতক কন্যা সন্তানকে বিক্রি করে ত্রিশ হাজার টাকা পেয়েছি। তা থেকে ১৬ হাজার টাকা হাসপাতালের বিল কেটে রেখেছেন।

বুধবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি প্রকাশ পেলে এলাকায় ব্যপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। তথ্য সংগ্রহ করতে গণমাধ্যমকর্মীরা হাসপাতলে গেলে মালিক পক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
 
হাসপাতালের মালিক মো. ফজলুল হক বিষয়টি তার জানা নেই দাবি করে জানান, হাসপাতালে প্রিয়া আক্তারের সিজার হয়েছে। বাইরে কে তার সন্তান বিক্রি করে দিলো তা জানা নেই। এ ঘটনার সঙ্গে হাসপাতালের কেউ জড়িত নয়।

অভিযুক্ত হাসপাতালের পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর সন্তান বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি কোনও নবজাতককে বিক্রি করেননি। রাসেল দম্পতি নিজেরাই তাদের সন্তান দত্তক দিয়ে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেছেন।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রণয় ভূষণ দাস বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে হাসপাতালটির অনুমোদন রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, খোঁজ নিয়ে পরে জানানো হবে।

আরও পড়ুন: সরকারি গাড়ি চালাচ্ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যানের দেহরক্ষী, ধাক্কায় প্রাণ গেল যুবকের

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম নাসিম জানান, বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছি। এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৫মে/এসএম)