সরকারি খালে পটুয়াখালীর মেয়রের ‘টাইটানিক’, নদীও তার পেটে

প্রকাশ | ০৯ জুন ২০২৩, ১০:৫০ | আপডেট: ০৯ জুন ২০২৩, ১১:১২

রুদ্র রাসেল, ঢাকা টাইমস

আওতাধীন এলাকার নদী-খাল-জলাধার রক্ষার দায়িত্ব যার, তিনিই এসব বেদখল করে বসে আছেন। সরকারি খালের ওপর বানিয়েছেন বাসভবন। ওই এলাকার নদীও তারই দখলে।

পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদের বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

ওই পৌরসভা এলাকার খাল ও নদীসহ জলাধার সরেজমিনে পরিদর্শন করে যে চিত্র নদী কমিশন দেখতে পেয়েছে তাও তুলে ধরা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। একই সঙ্গে মেয়র মহিউদ্দিনকে অব্যাহতি দিয়ে সেখানে প্রশাসক নিয়োগের সুপারিশও করেছে কমিশন।

আরও পড়ুন>>বরিশালে হাসানাত আবদুল্লাহর প্রচারে আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে নাকি হচ্ছে না?

নদী কমিশন বলছে, পটুয়াখালী পৌরসভার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ফৌজদারি খাল। সেই খাল রক্ষার দায়িত্ব পৌর মেয়রের। তবে তিনিই খালটি দখল করে নিজস্ব বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। যা ওই এলাকায় ‘টাইটানিক’ নামে পরিচিত।

কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পটুয়াখালী পৌরসভার বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ ফৌজদারি খালের জায়গা দখল করে নিজস্ব বাসভবন নির্মাণ করে খালের পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করছেন। মেয়রের নির্দেশে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ লাউকাঠী নদীর দক্ষিণ পাশে নদীর প্রবাহ বন্ধ করে খেয়াঘাট স্থাপন করেছে এবং নদীতে ময়লা আবর্জনা ফেলে নদীর জায়গা ভরাট করেছে।

এছাড়াও বিসিক শিল্প নগরীর পাশে পটুয়াখালী ব্রিজ হতে তুলাতলা খাল পর্যন্ত লাউকাঠী নদীর জমিতে পৌরসভার ময়লা ফেলে নদীর জায়গা ভরাট ও দূষণ করেছে। পৌরসভার সুয়ারেজ লাইন নদী ও খালের সঙ্গে সংযোগ দিয়ে নদী ও খালের পানিকে দূষিত করেছে। এছাড়া স্মৃতিখালী খালের জায়গা ভরাট করে পৌরসভা কর্তৃক রাস্তা নির্মাণ করেছেন মেয়র।’

নদী কমিশনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নদী ও খাল দূষণ বন্ধ এবং নদী ও খাল থেকে মেয়রের বাসভবনসহ সব স্থাপনা সরাতে মেয়রকে নির্র্দেশ দিলেও তিনি তা করেননি। পরে ১৫ দিন সময় দিয়ে এসব সরানোর নির্দেশ দিয়ে চিঠি দেওয়া হয় মেয়রকে। তিনি তাতেও কর্নপাত করেননি।

এরপর নদী কমিশন এসব তথ্য তুলে ধরে ৭ ফর্দ সংযুক্তি দিয়ে গত ১৪ মে প্রতিবেদন পাঠায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবেদনে পটুয়াখালী পৌর মেয়রকে অব্যাহতির সুপারিশ করে প্রশাসক নিয়োগের অনুরোধ জানানো হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘হাইকোর্ট এক আদেশে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে দেশের সব নদীর আইনি অভিভাবক হিসেবে ঘোষণা করেছে। পৌর মেয়র কর্তৃক জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের নির্দেশকে অবজ্ঞা হাইকোর্টেও রায়ের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং স্থানীয় সরকার আইনের বিরোধী।’

‘পাশাপাশি প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘন করেছেন পটুয়াখালীর মেয়র। আমাদের পর্যবেক্ষণে সুস্পষ্ট প্রতীয়মান হওয়ায় মেয়রকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ দিতে মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছি।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ দাবি করছেন, খালের ওপর তার কোনো বাড়ি নেই। তাদের পৈত্রিক ভিটায় বাড়ি করা হয়েছে।

মহিউদ্দিন আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ওই খালের ওপর আমার বাড়ি নেই। ওটি আমার পৈত্রিক ভিটা। ৪০ বছর আগে বাবা বাড়ি করেছেন। ওই বাড়ির ভেতরে খালের ৬ ফিট জমি রয়েছে। শুধু আমাদের বাড়িই নয়, সেখানে আরও ২৫-৩০টি বাড়ি রয়েছে।’

একইসঙ্গে পটুয়াখালী পৌরসভাকে হাইড্রোলিক সিটি বানাতে খাল ও নদী উদ্ধার জরুরি প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করের মেয়র মহিউদ্দিন। বলেন, ‘নদী কমিশন যদি এসব স্থাপনা ভাঙা বা অপসারন শুরু করে, তাহলে আমি সহযোগিতা করবো। আমি তো এককভাবে এসব বাড়ি ভাঙা বা সরানোর কেউ নই।’

এদিকে গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে সংশ্লিষ্ট নদী ও খাল পরিদর্শনে যান নদী কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। সেসময় স্থানীয় বাসিন্দা বৃদ্ধ মাকসুদুর রহমান তালুকদার মেয়র মহিউদ্দিনের উপস্থিতিতে কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে খাল দখলের বর্ণনা দেন।

পরদিন ৭ সেপ্টেম্বর মাকসুদুর রহমানের মরদেহ পাওয়া যায় ওই এলাকার শ্মাশানের ভেতর। এ ঘটনায় ১৫ সেপ্টেম্বর নিহতের পরিবার বাদী হয়ে পটুয়াখালী আদালতে হত্যা মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদকে। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি।

(ঢাকাটাইমস/০৮জুন/ডিএম)a