সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন আর নেই

প্রকাশ | ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৩৩ | আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ১৫:৩৮

মাদারীপুর প্রতি‌নি‌ধি, ঢাকাটাইমস

সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বুধবার ভোরে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।

আবুল হোসেনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাঁর ভাগনে ও ডাসার উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ব্যাংকক থেকে ঢাকায় ফেরেন সৈয়দ আবুল হোসেন। বিকালে জানান তার শরীর খারাপ লাগছে। তখনই তাঁকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী সমীর রঞ্জন দাশ ঢাকা টাইমসকে বলেন, রাত ২টা ২৫ মিনিটে সৈয়দ আবুল হোসেনের হার্ট অ্যাটাক হয়। কিছুক্ষণ পরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।

প্রয়াত যোগাযোগমন্ত্রীর পারিবারিক সূত্র ঢাকা টাইমসকে আরও জানায়, তাঁর মরদেহ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) ফ্রিজে রাখা হয়েছে। তাঁর দুই মেয়ে দেশের বাইরে আছেন। একজন আজ বুধবার, আরেকজন বৃহস্পতিবার ফিরবেন। এরপর সিদ্ধান্ত হবে কবে কোথায় দাফন হবে।

বীরমুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবুল হোসেন ১৯৫১ সালে মাদারীপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পেশায় একজন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হয়ে তিনি মাদারীপুর-৩ আসন থেকে ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি সপ্তম, অষ্টম ও নবম সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরমধ্যে ২০০৯ থেকে ২০১২ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছেন।

সৈয়দ আবুল হোসেনের স্ত্রী খাজা নার্গিস। এ দম্পতির ঘরে সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন এবং সৈয়দা ইফফাত হোসেন নামে দুই মেয়ে রয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে ডাসারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের চুক্তি সই করে সরকার। কিন্তু বছরের শেষ দিকেই তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। পরে ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি যোগাযোগমন্ত্রীর পদ থেকে সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করেন। সেতু বিভাগের তৎকালীন সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকেও দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হয়।

আরও পড়ুন>দেড় শতাধিক বিদ্যালয় ও ছয়টি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন সৈয়দ আবুল হোসেন

যদিও ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি সেতুর ঠিকাদার নিয়োগে দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদন দেয় দুদক। কিন্তু ৩০ জুন পদ্মা সেতুর ঋণ চুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। তবে ৯ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরবর্তীতে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগে কানাডার আদালতে একটি মামলা হয়। দীর্ঘ ৫ বছরের দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি কানাডার আদালত জানায়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক ঋণ বাতিল করেছিল, তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

দেশে শিক্ষা বিস্তারে যারা কাজ করেছেন সৈয়দ আবুল হোসেন তাদের মধ্যে অন্যতম। নিজস্ব অর্থায়নে নিজ এলাকা মাদারীপুরে ছয়টি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর মধ্যে ৪টি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। এছাড়াও প্রতিষ্ঠা করেছেন অসংখ্য মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ ১৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরে সরকারিকরণ করা হয় এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

সমাজসেবা, উন্নয়ন ও শিক্ষায় অসামান্য অবদানে তিনি শেরে-বাংলা পদক, অতীশ দীপঙ্কর পদক এবং মোতাহার হোসেন পদকসহ এ পর্যন্ত ২৩টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

শিক্ষা প্রসারে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে তাকে ‘যুগশ্রেষ্ঠ শিক্ষা উদ্যোক্তা স্বর্ণপদক ও সম্মাননা’ দেয় ‘ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র’।

২০১৯ সালে বাংলাদেশের বিদ্যাসাগর খেতাবে ভূষিত হন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের- বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাকে এ পদক হস্তান্তর করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/২৫অক্টোবর/ইএস)