দেড় শতাধিক বিদ্যালয় ও ছয়টি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন সৈয়দ আবুল হোসেন

দেশে শিক্ষা বিস্তারে যারা কাজ করেছেন সৈয়দ আবুল হোসেন তাদের মধ্যে অন্যতম। শৈশবে নিজ এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাবে অনেক ছেলেমেয়ের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যেতে দেখেছেন। পড়ালেখার ওই দুরবস্থা নাড়া দেয় সৈয়দ আবুল হোসেনকে। স্বপ্ন দেখেন দেশে শিক্ষা প্রসারের। গত অর্ধ শতাব্দী ধরে সে কাজ করে গেছেন তিনি।
নিজস্ব অর্থায়নে নিজ এলাকা মাদারীপুরে ছয়টি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর মধ্যে ৪টি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। এছাড়াও প্রতিষ্ঠা করেছেন অসংখ্য মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ ১৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরে সরকারিকরণ করা হয় এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
সৈয়দ আবুল হোসেন ১৯৫১ সালের ১ অক্টোবর মাদারীপুরের ডাসার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম সৈয়দ আতাহার আলী এবং মাতা মরহুম সৈয়দা সুফিয়া আলী। তিনি ১৯৭২ সালে স্নাতক এবং ১৯৭৮ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৭৯ সালের সেপ্টেম্বরে খাজা নার্গিস হোসেনকে বিয়ে করেন তিনি। এই ঘরে তার দুই কন্যা সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন ও সৈয়দা ইফফাত হোসেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর আবুল হোসেন সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন এবং পরবর্তীকালে ব্যবসা শুরু করেন। তিনি ১৯৭৫ সালে সাহকো ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড এবং সাহকো এনজিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি এশিয়ার বোয়াও ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন, যা ২০০১ সালে চিনের হাইনান প্রদেশে ধারণ করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হয়ে তিনি মাদারীপুর-৩ আসন থেকে ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সৈয়দ আবুল হোসেন। এরপর তিনি সপ্তম, অষ্টম ও নবম সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০০২ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান সৈয়দ আবুল হোসেন। পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাদারীপুর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মহাজোট সরকারে যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের ১৮তম জাতীয় সম্মেলনে আবারও তাকে দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন ও শিক্ষা প্রসারের পাশাপাশি দুর্যোগ-দুর্বিপাকেও সবসময় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে ছিলেন সৈয়দ আবুল হোসেন। মাদ্রাসা মসজিদ নির্মাণেও করেছেন আর্থিক সহায়তা। নগদ টাকা, জমিসহ নানা সাহায্য-সহযোগিতা করায় দানবীর হিসেবেও খ্যাতি রয়েছে তার। সরকারি অনুদানের বাইরেও নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করেছেন অসংখ্য রাস্তাঘাট-ব্রিজ। লেখালেখিতেও অভ্যাস আছে তার। নানা বিষয়ে লিখেছেন বেশ কিছু বই।
শিক্ষার প্রসারে মাদারীপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন শেখ হাসিনা একাডেমী অ্যান্ড উইমেন্স কলেজ। তার পিতার নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন ডি.কে আইডিয়ার আতাহার আলী একাডেমী অ্যান্ড কলেজ। এছাড়াও রয়েছে কালকিনির সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, খোয়াজপুরের সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ। প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়ে লেখাপড়ায় সহযোগিতা করে গেছেন তিনি।
সৈয়দ আবুল হোসেন একজন সফল ব্যবসায়ী, দক্ষ সমাজকর্মী ও বীরমুক্তিযোদ্ধা।
শিক্ষা বিস্তারে তাঁর উদার একাগ্রতা সর্বমহলে প্রশংসিত। আমেরিকার বায়োগ্রাফিক্যাল ইন্সটিটিউট আলহাজ্ব সৈয়দ আবুল হোসেনকে শতবর্ষের শ্রেষ্ঠ মানুষ পদকে ভূষিত করে। সমাজসেবা, উন্নয়ন ও শিক্ষায় অসামান্য অবদানে তিনি শেরে-বাংলা পদক, অতীশ দীপঙ্কর পদক এবং মোতাহার হোসেন পদকসহ এ পর্যন্ত ২৩টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
শিক্ষা প্রসারে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে তাকে ‘যুগশ্রেষ্ঠ শিক্ষা উদ্যোক্তা স্বর্ণপদক ও সম্মাননা’ দেয় ‘ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র’।
২০১৯ সালে বাংলাদেশের বিদ্যাসাগর খেতাবে ভূষিত হন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের- বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাকে এ পদক হস্তান্তর করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/২৫অক্টোবর/ইএস)

মন্তব্য করুন