আশুলিয়ায় পুড়িয়ে ফেলা শহীদ আবুল হোসেন এখনো গেজেটভুক্ত হননি! দুর্দশায় পরিবার

কুমিল্লার মুরাদনগরে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে জুলাই শহীদ আবুল হোসেনের পরিবারের। বঞ্চিত-অবহেলিত এ পরিবারের সামনে শুধুই অন্ধকার। এমনকি ঢাকার আশুলিয়ার সেই বহুল আলোচিত মরদেহ পোড়ানোর শিকার আবুল হোসেন এখনো ‘শহীদ’ হিসাবে গেজেটভুক্ত হননি।
ফলে জুলাই ফাউন্ডেশন কিংবা সরকারের তরফ থেকে কোনো আর্থিক সহযোগিতা না পেয়ে দুর্দশায় তার পরিবার। একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে এক বছর ধরে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে স্ত্রী-সন্তান ও মা-বোনের।
মুরাদনগর উপজেলার ফুলঘর গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে আবুল হোসেন আশুলিয়ায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। স্ত্রী লাকি আক্তার, দুই ছেলে, বাকপ্রতিবন্ধী বোন ও মাকে নিয়ে সেখানেই থাকতেন তিনি।
স্বজনরা জানান, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে প্রতিদিনই সভা-সমাবেশ ও মিছিলে যেতেন আবুল হোসেন। গত বছরের ৫ আগস্ট সকালে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় ঢাকামুখী মিছিলে গুলি করে পুলিশ। প্রাণ হারান আবুল হোসেনসহ কয়েকজন আন্দোলনকারী। পুলিশ মরদেহ গুম করে ফেলে।
স্বজনরা অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাকে না পেয়ে থানায় জিডি করতে গেলে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। এরপর ১৯ আগস্ট সেনাবাহিনী ও ছাত্রদের চাপে জিডি নেয় আশুলিয়া থানা।
২৯ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ভ্যানগাড়িতে মরদেহ স্তূপ করছে পুলিশ। সেই ভিডিওতে গায়ে ব্রাজিলের জার্সি ও লুঙ্গি পরা আবুল হোসেনকে শনাক্ত করে তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু প্রিয় মানুষটির মরদেহ আর পায়নি তারা। কারণ পুলিশ আগেই এসব লাশ পুড়িয়ে ফেলে। মামলার পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত এবং পরিবারের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়।
আবুল হোসেনের স্ত্রী লাকি আক্তার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমার স্বামী দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন, কিন্তু সেই মর্যাদা এখনো পাইনি। মরদেহ নিজেদের হেফাজতে নিয়ে এলাকায় দাফন পর্যন্ত করতে পারলাম না। আশুলিয়ার বুড়িবাজার আমতলা কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে তাকে।’
এদিকে দুটি শিশুসন্তান, বাকপ্রতিবন্ধী ননদ, বৃদ্ধা শাশুড়িকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন স্ত্রী লাকি আক্তার। বর্তমানে মায়ের বাড়িতে অবস্থান করছেন তিনি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে শহীদ পরিবারটি দায়-দেনাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত।
লাকি আক্তার বলেন, ‘ছোট ছেলের হাঁটায় সমস্যা হচ্ছে। চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় নিয়ে দেখাতে বলেছে। কিন্তু অভাব-অনটনের কারণে কোনো কিছুই করতে পারছি না। অসহায় গরিব বাবা ধারদেনা করে কোনোভাবে সংসার চালাচ্ছেন। আবার বাচ্চা ছোট বলে নিজেও কোনো কাজে বের হতে পারছি না।’
পরিবারের দাবি, আবুল হোসেন নিহত হওয়ার ঘটনায় ৩২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। কিন্তু মামলায় কোনো পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়নি। এক বছর অতিবাহিত হলেও মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে তাদের কিছুই জানানো হয়নি।
আবুল হোসেনের মা সালমা আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার এক বছরে কেউ আমাদের পরিবারের খোঁজ নেয়নি। আমরা অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছি।’
আবুল হোসেনের স্ত্রী লাকি আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী ষহীদ হলেও জুলাই ফাউন্ডেশন ও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আর্থিক সহযোগিতা পাইনি। আমার স্বামীর নামটা এখনো গেজেটভুক্ত হয়নি। আমি সচিবালয় ও মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র জমা দিয়েছি। সিভিল সার্জনের কাছেও কাগজ জমা দিয়েছি। কিন্তু এখনো আমার স্বামীর নাম শহীদের তালিকায় ওঠেনি। দুই ছেলে নিয়ে আমি চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামীর লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে, ডিএনএ টেস্ট করা হয়েছে। তাতেও মিল পাওয়া গেছে। তারপরও এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, ‘কী কারণে ওই শহীদ পরিবার এখনো কোনো সহায়তা পায়নি সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা এলে যথাযথভাবে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।’
(ঢাকাটাইমস/৩আগস্ট/এসএস/মোআ)

মন্তব্য করুন