ঘুষ নিতে লিখিত চুক্তি করেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু!

নসরুল হামিদ বিপু। পতিত আওয়ামী লীগ আমলের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী। দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমিজ্জত এই বিপু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লাইসেন্স দিতে এক ব্যবসায়ী গ্রুপের সাথে ঘুষের লিখিত চুক্তি করেছিলেন। ঘটনাচক্রে সেই চুক্তিপত্রের কপি পৌঁছায় প্রধানমন্ত্রীর হাতে। তার কাছে নির্দেশ যায় পদত্যাগের। কিন্তু সেই নির্দেশের ঘণ্টাখানেকের মধ্যে একটি ফোন আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে- ‘বিপু পদত্যাগ করবে না’। পরের দুই সরকারেও গুরুত্বপূর্ণ এ মন্ত্রণালয় ছিল বিপুর হাতে।
নসরুল হামিদ বিপুর বাবা অধ্যাপক হামিদুর রহমান ছিলেন আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও সংসদ সদস্য। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপু ঢাকা-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে তাকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী করেন শেখ হাসিনা। আগে থেকেই পারিবারিক ব্যবসা ছিল তাদের, প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর ফুলেফেঁপে ওঠে বিপুর সম্পদ।
দেশে বিদ্যুৎ সঙ্কট কাটানোর নামে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। মূলত সরকারি টাকা লুটপাট করার সুযোগ দিতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল বলে প্রচার আছে।
কোনো ব্যবসায়ীকে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লাইসেন্স দেয়ার পর সেই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনবে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। টাকা লুটপাটের সুযোগ ছিল সেই কেনাকাটায়। যেমন- কোনো প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স পেয়ে ২০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করলো। সঞ্চালন ব্যবস্থার সামর্থ্যহীনতার কারণে সরকার তার কাছ থেকে কিনল ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কিন্তু সরকারকে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের মূল্যই পরিশোধ করতে হবে। এর বাইরেও টাকা লুটপাটের সুযোগ ছিল বিদ্যুতের দাম নিয়ে। উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক অনেক বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনছিল সরকার।
এমন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লাইসেন্সের জন্য প্রতিযোগিতায় নামেন ব্যবসায়ীরা। এখানেই অর্থ কামানোর সুযোগ নেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। লাইসেন্স দেয়ার জন্য নিতে থাকেন বড় অঙ্কের ঘুষ। এমনই একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের সাথে ঘুষের লিখিত চুক্তিপত্র করেন তিনি। ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পের ওপর করা সেই চুক্তিপত্রের একটি কপি তৃতীয় কোনো পক্ষের হাত হয়ে চলে যায় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে। আর গোয়েন্দা সংস্থা সেটি পাঠিয়ে দেয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেবিলে।
ঘুষ লেনদেনের এমন চুক্তিপত্র দেখে প্রতিমন্ত্রী বিপুর ওপর বিরক্ত প্রধানমন্ত্রী তার মুখ্যসচিবকে ডেকে বলেন বিপুকে পদত্যাগের বার্তা দিতে। মুখ্যসচিব টেলিফোনে নসরুল হামিদ বিপুকে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা জানিয়ে দেন। কিন্তু তাৎক্ষণিক পদত্যাগ করেননি নসরুল হামিদ বিপু।
পদত্যাগ ঠেকানোর চেষ্টা শুরু করেন বিপু। এরই মধ্যে পার হয়ে যায় ঘণ্টাখানেক সময়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কাছে আসে সেই রহস্যময় ফোন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফোন করেন প্রভাবশালী একজন। প্রধানমন্ত্রীকে জানান, বিপু পদত্যাগ করবে না। প্রধানমন্ত্রী রক্ষা করেন সেই আবদার। বেঁচে যান নসরুল হামিদ বিপু।
সেই ব্যবসায়ী গ্রুপ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লাইসেন্স পেয়েছে, স্থাপন করেছে বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে রাজধানীর ৩০০ ফুট এলাকায় ৪০ কাঠা জমি উপহার দিয়েছে সেই ব্যবসায়ী গ্রুপ। সেই একটি ফোনে নসরুল হামিদ বিপু পরবর্তী দুই সরকারেও ধরে রাখেন প্রতিমন্ত্রীর পদ।
(ঢাকাটাইমস/২৬জুন/এমএইচএল/মোআ)

মন্তব্য করুন