রেলওয়ের প্রকৌশলী আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ, তদন্তের দাবি

রেলওয়ের বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম, ঘুষ গ্রহণ, ভুয়া কাজে বিল উত্তোলন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে।
হরিদাস হাওলাদার শিপন নামের এক ব্যক্তি এসব অভিযোগ এনে রেল মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, আহসান হাবিব ২০২১ সালে চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রকৌশলী থাকাকালে দাপ্তরিক প্রাক্কলন ছাড়াই একসঙ্গে ৮২টি টেন্ডার আহ্বান করেন, যেগুলোর বেশির ভাগই ছিল বাসাবাড়ি মেরামত, রেল ফেন্সিং ও পাইপলাইন মেরামতের মতো অপ্রয়োজনীয় এবং 'লুকায়িত' কাজ।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রতিটি প্রকল্পের বিপরীতে তিনি ঠিকাদারদের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা করে ঘুষ নেন।
অভিযোগকারী দাবি করেন, এসব প্রকল্পের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকলেও কাজের চুক্তি সম্পন্ন করে আস্তে আস্তে বিল প্রদান করা হয়েছে—বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রকৃত কাজ না করেই। অভিযোগ অনুযায়ী, এসব টেন্ডারের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন হলেও তার রিপোর্ট কার্যকর না করে বরং ওই অবৈধ কার্যক্রমকে 'বৈধতা' দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগে আরও উল্লেখ রয়েছে, চট্টগ্রামের এসএসএ/ই ওয়াটার ওয়ার্কসের আবু হানিফ পাশা এবং এসএসএ/যি ওয়াটার ওয়ার্কস পাহাড়তলীর মো. সোহেল রানার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও তারা এখনও বহাল তবিয়তে আছেন।
এই দুর্নীতিতে তৎকালীন সহকারী প্রধান প্রকৌশলী (এ.সি.ই) এবং বর্তমান ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডি.আর.এম) মহিউদ্দিন আরিফের সম্পৃক্ততার অভিযোগও উত্থাপন করা হয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, আহসান হাবিব লালমনিরহাটে দায়িত্বে থাকার সময় ৩৪ কোটি টাকার প্রকল্পে ঘুষ ও অনিয়মে জড়িত ছিলেন। উলিপুর থেকে চিলমারী পর্যন্ত ট্র্যাক মেইনটেন্যান্স প্রকল্পে মাটি রেলওয়ের নিজস্ব জমি থেকে উত্তোলন করে ঠিকাদারকে অবৈধভাবে লাভবান করেন এবং সেই অর্থ ভাগাভাগি করে নেন।
এছাড়া গাইবান্ধার ছাদুল্লাপুরে রেলওয়ের জমি থেকে শতাধিক গাছ কেটে বিক্রি করে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একইভাবে, ব্যালাস্ট সরবরাহ, রাস্তা কার্পেটিং ও আবাসিক ভবন মেরামতের কাজেও ব্যাপক অনিয়ম ও ভাগবাটোয়ারার অভিযোগ করা হয়।
ব্যক্তিগত অভিযোগ হিসেবেও হরিদাস হাওলাদার জানান, আহসান হাবিব তার কাছ থেকে দুই দফায় মোট ৪ লাখ টাকা নিলেও প্রতিশ্রুত কাজ দেননি। পরবর্তীতে টাকা ফেরত চাইলে টালবাহানা শুরু করেন।
এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আহসান হাবিব বলেন, ‘অভিযোগ অনেক থাকে। তবে এই বিষয়ে পরে কথা বলি। আমি একটা মিটিংয়ে আছি।’ পরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
এ বিষয়ে রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরিফ বলেন, ‘এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’
অভিযোগকারী হরিদাস হাওলাদার রেল মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে এই দুর্নীতিগুলো প্রকাশ্যে আনা এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।’
(ঢাকাটাইমস/২৬জুন/এসএস/মোআ)

মন্তব্য করুন