এস আলম গ্রুপের অপকর্মের সহযোগী সাবেক জামায়াত নেতা ফখরুলের বিএনপির মনোনয়ন বাসনা

পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার লুটপাটের অন্যতম দোসর দেশের আর্থিক খাতের শীর্ষ লুটেরা চট্টগ্রাম ভিত্তিক এস আলম গ্রুপের মালিক পলাতক সাইফুল আলম মাসুদের বহু অপকর্মের সহযোগী সাবেক জামায়াত নেতা ফখরুল ইসলাম। তিনি এবার খোলস পাল্টে বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য হতে চান। এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান ছিলেন এই ফখরুল ইসলাম। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান থাকাকালীন দেশ বিদেশে এস আলম গ্রুপের নানা আর্থিক অনিয়মের সহযোগী ছিলেন এই ফখরুল।
আশির দশকের শুরুর দিকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে চাকুরীর উদ্দেশ্য ঢাকায় পাড়ি জমান এই বহুরুপী।
ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত ফখরুল, ইবনে সিনা ক্লিনিকের রিসিপশনিস্ট হিসাবে কর্ম জীবন শুরু করেন। এক সময় তিনি জামায়াত ইসলামীর রোকনও নির্বাচিত হন বলে কথিত আছে। তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় একটি স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের সাথে সম্পর্কের মাধ্যমে। সে সময় তার নিয়মিত মধ্যপ্রাচ্যে যাতায়াত ছিলো। সমসাময়িক সময়ে ঢাকায় জমি ক্রয়-বিক্রয়ের সাথেও তিনি যুক্ত ছিলেন।
নব্বইয়ের দশকে ইবনে সিনা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মোকাদ্দেস আলী এবং মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকের সাথে ফখরুল ডেভলপার ব্যবসা শুরু করেন। ডা. মোকাদ্দেস একজন নিতান্তই ভদ্রলোক এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য ছিলেন। মোকাদ্দেসের পরিবারিক বেশ কিছু সম্পত্তি ছিলো ধানমন্ডি এলাকায়, সেখান থেকেই মূলত তাদের আবাসন ব্যবসা শুরু হয়। মোকাদ্দেস এই ফখরুল ইসলামের ওপর ভরসা করেন এবং এর সুযোগে ফখরুল নানাবিধ অনিয়ম করে ব্যবসাকে প্রচুর ক্ষতির মুখে ফেলেও গোপনে নিজের পকেট ভারী করেন।
এক পর্যায়ে যৌথ ব্যবসাটি বন্ধ হয়ে গেলে, ফখরুল মেট্রো হোমস নামে নিজের একটি প্রতিষ্ঠান চালু করে। মূলত জামায়াত এবং শিবিরে নিজ পরিচিতি কাজে লাগিয়ে তাদের মাধ্যমেই ফ্ল্যাট কেনা-বেচা শুরু করেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, এই আবাসন ব্যবসায় অনেককেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছেন ফখরুল। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রাহকদের কাছ থেকে ফ্ল্যাটের বুকিংয়ের অর্থ নিয়ে দীর্ঘদিন ফ্ল্যাট না বুঝিয়ে দিয়ে হয়রানী করেছেন। তার ভুক্তভোগীদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসকারী জামাতপন্থী প্রবাসী। নিজেকে জামায়াত ইসলামীর রোকন পরিচয় দিয়ে তাদের নিজ জালে ফেলত ফখরুল।
২০০১ থেকে ২০০৬ বিএনপি এবং জামায়তের জোট সরকারের সময় জাময়াত ঘরোনার আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানির একজন ফাউন্ডার ডাইরেক্টর এবং জামায়াতের এক শীর্ষ নেতার মাধ্যমে ফখরুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। সেসময় জামায়াত এবং শিবিরের পরিচিতি ব্যবহার করে ফারইস্ট খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ফারইস্টের চেয়ারম্যান থাকাকালীন ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে এই ব্যাক্তি লুটপাটের এক সাম্রাজ্য কায়েম করে। নিজের ঘনিষ্ঠজনদের প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে ফখরুল এ সকল অপকর্ম করে। ফারইস্টের মালিকপক্ষের কাছে বিষয়গুলো খোলাসা হয়ে গেলে বোর্ড অফ ডাইরেক্টরস তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দেয়।
ফখরুল ইসলাম ২০০৯ সালে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী হিসাবে উপজেলা নির্বাচন করেন এবং পরাজিত হন। উল্লেখ্য, উপজেলা নির্বাচনের আগে তাকে বিএনপিতে যোগদানের জন্য আহ্বান করা হয়। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। একপর্যায়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির নেতা ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদ (মরহুম) এর সাথে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যান ফখরুল।
২০২২ সালে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর ও দেশের আর্থিক খাতের শীর্ষ লুটেরা চট্টগ্রাম ভিত্তিক এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলম মাসুদ (বর্তমানে পলাতক) এর সাথে আঁতাত করে ফখরুল ইসলাম। সেই সূত্রে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন পদ্মা লাইফ ইনসুরেন্সের চেয়ারম্যান পদে তাকে বসানো হয়। ফখরুল তার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মাসুদের লুটের অবৈধ অর্থ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচারে সহযোগিতা করেন।
ফখরুলের নিকটজনদের কাছ থেকে জানা যায়, এস আলমের লোপাট করা অর্থের একটি বড় অংশ তুরস্কের আবাসন খাতে বিনিয়োগ করা হয় আওয়ামী সরকার পতনের আগেই। এবং ফখরুলকে ওই আবাসন প্রকল্পের দায়িত্ব দেন সাইফুল ইসলাম মাসুদ।
২০২১ সালে ফখরুল প্রথম কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির মাধ্যমে দলটির রাজনীতিতে সরাসরি প্রবেশ করেন। ২০২১ সালে বিতর্কিত একটি কমিটির মাধ্যমে ফখরুল কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির একজন সদস্য হিসেবেও মনোনীত হন। বর্তমানে ফখরুল নোয়াখালী জেলা বিএনপির নেতা হওয়ার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তার লক্ষ্য বিএনপির ব্যানারে থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া।
বিএনপি কি বহুরুপী ফখরুলের সাংসদ নির্বাচনের খোয়াব পূরণ করবে- এমন প্রশ্ন স্থানীয়দের।
(ঢাকাটাইমস/১৫ মে/আরজেড)

মন্তব্য করুন