‘রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন’ থেকে ‘বিজিবি’, সীমান্ত রক্ষার ২৩০ বছরের ঐতিহ্য ও গৌরব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৯ জুন ২০২৫, ১৭:৫৫| আপডেট : ২৯ জুন ২০২৫, ১৯:১৬
অ- অ+

'সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী' হিসেবে পরিচিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ— বিজিবি পেরিয়ে গেল গৌরবময় ২৩০ বছর। উপমহাদেশের ইতিহাসে অন্যতম প্রাচীন ও সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে বিজিবি আজও সমান দৃঢ়তায় বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে।

১৭৯৫ সালের ২৯ জুন আজকের দিনে ‘রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন’ নামে এই বাহিনীর পথচলা শুরু হয়। সেই সময় ব্রিটিশ শাসনের অধীনে পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি সীমান্তে শৃঙ্খলা বজায় রাখা ছিল এর মূল দায়িত্ব। সময়ের প্রয়োজনে এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় বাহিনীটির নাম ও কাঠামো পরিবর্তিত হতে থাকে।

পরবর্তী সময়ে এটি ‘ফ্রন্টিয়ার গার্ডস’, ‘বেঙ্গল মিলিটারি পুলিশ’, ‘ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেলস’, পাকিস্তান আমলে ‘ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস’ এবং স্বাধীনতার পর ‘বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর)’ নামে পরিচিত ছিল। অবশেষে ২০১০ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে বাহিনীটির নাম হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ—বিজিবি।

বর্তমানে বিজিবি একটি আধুনিক, পেশাদার ও দক্ষ সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠেছে। দেশের ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার স্থল ও নদী সীমান্তে দায়িত্ব পালন করছে প্রায় ৭০ হাজার সদস্য। সীমান্ত চোরাচালান প্রতিরোধ, মানবপাচার রোধ, মাদক নিয়ন্ত্রণ, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিজিবি এখন এক বলিষ্ঠ নাম।

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়েও এই বাহিনীর ত্যাগ ও ভূমিকা ছিল অসামান্য। অনেক সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য। তৎকালীন ইপিআর (বর্তমান বিজিবি) এর সদস্যরা যুদ্ধের শুরু থেকেই মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

জানা গেছে, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজিবির ৮১৭ জন শহীদ হন। পরবর্তীতে বীরত্বসূচক অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব পান বিজিবির ২ জন সদস্য। এছাড়া ৮ জন বীর উত্তম, ৩২ জন বীর বিক্রম এবং ৭৭ জন বীর প্রতীক হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পান। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধে অসাম্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ২০০৮ সালে ‘স্বাধীনতা পদক’ লাভ করে বাহিনীটি।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর সদর দফতরে ঘটে যাওয়া হৃদয়বিদারক হত্যাযজ্ঞেও অসংখ্য সাহসী কর্মকর্তা ও সদস্য শহীদ হন। সেই শোকগাথাকে শক্তিতে রূপান্তর করে বাহিনীটি নতুন নামে যাত্রা শুরু করে আরও সুসংগঠিত ও আধুনিকরূপে আত্মপ্রকাশ করে।

২৩০ বছর, এক অনন্য মাইলফলক:

বিজিবির ২৩০ বছরের এই দীর্ঘ পথচলা কেবল বাহিনীর নয় বরং দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার ইতিহাসের একটি গর্বিত অধ্যায়। সময় বদলেছে, প্রযুক্তি বদলেছে, কিন্তু সীমান্ত পাহারার অঙ্গীকার বদলায়নি। জাতীয় নিরাপত্তায় অগ্রণী ভূমিকা রেখে বিজিবি এখন কেবল একটি বাহিনী নয়—একটি প্রতীক, একটি গর্বের নাম।

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও ভারতের পুশইন ঠেকাতে তৎপর:

পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমার থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এবং ভারতের পুশইন ঠেকাতে সীমান্তে সব সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে সীমান্ত দিয়ে গভীর রাতে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার (পুশইন) চেষ্টা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী- বিএসএফ। তবে বিজিবির প্রতিরোধের মুখে তাদের সেই চেষ্টা প্রায় ব্যর্থ হচ্ছে।

দায়িত্বে অপ্রতিরোধ্য বিজিবি:

গত এপ্রিলে দুই জন বিএসএফ সদস্য নিজ অস্ত্রসহ আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বাংলাদেশী কৃষকদের ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এই ঘটনা জানতে পেরে দ্রুততার সঙ্গে ঘটনাস্থলে যায় নিকটবর্তী বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা। সাধারণ জনতা ও বিজিবি সদস্যরা অস্ত্রসহ ধরে ফেলে ২ বিএসএফ জাওয়ানকে।

পরবর্তীতে পা ধরে ক্ষমা প্রার্থনা করায় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাদেরকে বিএসএফ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রশংসিত হন বিজিবি সদস্যরা।

(ঢাকাটাইমস/২৯জুন/এসএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পরীক্ষা দিতে গিয়ে নিখোঁজ সরকারি বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী পুলি, থানায় জিডি
আমেরিকায় গিয়েই ‘নিরুদ্দেশ’, সরিয়ে দেওয়া হলো গুলশানের সেই ওসিকে
স্ত্রী তালাক দেওয়ায় এক মণ দুধ দিয়ে গোসল করলেন স্বামী
বাংলাদেশের কাছে ৭-০ গোলে হেরেছে বাহরাইন
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা