আমেরিকায় গিয়ে নির্ধারিত সময়ে দেশে ফেরেননি গুলশানের ওসি

রাজধানীর গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুর রহমান মঞ্জু সরকারি নিয়ম লঙ্ঘন করে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তার ছুটির মেয়াদ শেষ হলেও তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। এমনকি এখন জানা যাচ্ছে এই পুলিশ কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রেরও নাগরিক। দ্বৈত নাগরিকত্ব রেখেই তিনি বেআইনিভাবে পুলিশে চাকরি করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মাহমুদুর রহমান গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে ১০ দিনের ছুটিতে বিদেশ যান। ছুটি শেষে তার কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার নির্ধারিত তারিখ ছিল গত ৪ জুন। কিন্তু এরপর ১৯ দিন পেরিয়ে গেলেও তিনি কর্মস্থলেও যোগ দেননি। দেশেও ফেরেননি বলে জানা যায়।

ডিএমপি সদর দপ্তরের একাধিক সূত্র বলছে, ওসি মাহমুদুর রহমান মূলত যুক্তরাষ্ট্রে তার স্ত্রী ও সন্তানের কাছে গেছেন। ছুটি শেষ হলেও তিনি সেখানে আরও কিছুদিন থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। তাকে নিয়ম মেনে ছুটি বাড়ানোর আবেদন করতে বলা হয়। তবে তিনি ছুটি বাড়ানোর আবেদন এখনো করেননি।

এ ঘটনায় এবং ছুটি শেষে কর্মস্থলে না ফেরায় তার অনুপস্থিতি ঘিরে রহস্যের জন্ম নিয়েছে। তার বিষয়ে পুলিশের একেক কর্মকর্তা একেক রকম তথ্য দিচ্ছেন। একজন কর্মকর্তা বলেন, তিনি শুনেছেন আমেরিকায় গিয়ে মাহমুদুর রহমানের কিডনিতে পাথর ধরা পড়ে। আরেক কর্মকর্তা বলেন, স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে যান মাহমুদুর রহমান।

একজন কর্মকর্তা জানান, ছুটি বাড়ানোর জন্য দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করেছেন মাহমুদর রহমান। তবে এমন কোনো চিঠি পাননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ

ছুটি শেষে সময়মতো কর্মস্থলে যোগ না দেওয়ার ঘটনায় মাহমুদুর রহমানের আরেকটি অনৈতিক ও বেআইনি কাজের কথা উঠে আসে সামনে। পুলিশের বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, মাহমুদুর রহমানের দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব রয়েছে। ‘দ্বৈত নাগরিকত্ব’ নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের চাকরি করে আসছেন তিনি। বিষয়টি সম্প্রতি ঊর্ধ্বতন মহলে প্রকাশ পেলে তিনি ছুটির আড়ালে দেশ ছাড়েন।

বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মকর্তা দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পারেন না। মাহমুদুর রহমানের দীর্ঘদিন ধরে চাকরিতে বহাল থাকা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার চাকরি, বেতন ও অন্যান্য সুবিধা বাতিলসহ আইনি জটিলতায় পড়ার আশঙ্কা আছে। এসব ঝামেলা এড়াতেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও কালক্ষেপণ করছেন বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

মাহমুদুর রহমানের অনুপস্থিতি নিয়ে কী বলছেন কর্মকর্তারা

গুলশান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আলী আহমেদ মাসুদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, 'যতটুকু শুনেছি আমেরিকায় গিয়ে মাহমুদুর রহমানের কিডনিতে পাথর ধরা পড়ে। এরপর তিনি সেখানে পড়ে গিয়ে মেরুদণ্ডে আঘাত পান। এ কারণে দেশে ফিরে আসতে সময় নিচ্ছেন।'

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ওসি মাহমুদুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন পরিবারের কাছে। সেখানে তার স্ত্রী অসুস্থ ছিলেন। পরে মাহমুদুর রহমান নিজেও সেখানে অসুস্থ হয়ে যান। এই ঘটনায় তিনি অ্যাম্বাসির মাধ্যমে ছুটির আবেদন করেছেন বলে জানতে পেরেছি। তবে এমন চিঠি আমি এখনও হাতে পায়নি।’

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর রাজধানীর কদমতলী থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পান মাহমুদুর রহমান। এরপর চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি গুলশান থানার তৎকালীন ওসি তৌহিদ আহম্মেদ বরখাস্ত হলে সেখানে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। মাহমুদুর রহমানের অনুপস্থিতিতে রাজধানীর এই গুরুত্বপূর্ণ থানার বর্তমানে ওসির দায়িত্বে রয়েছেন পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেসুর রহমান।

ওসি মাহমুদুর রহমান ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগ না দেওয়ায় এবং তার দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ সামনে আসায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে তার অনুপস্থিতি গুরুতর বিষয় হয়ে উঠেছে।

মাহমুদুর রহমানের বাড়ি কুমিল্লার দ্বেবীদার উপজেলার ধামতী গ্রামে। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তার স্ত্রী-সন্তান স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছে।

নিউজ প্রকাশের পর ওসি মাহমুদুর রহমান তার একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে ঢাকাটাইমসকে জানান, তিনি অসুস্থ। আমেরিকায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিষয়টি অ্যাম্বাসির মাধ্যমে ডিএমপির ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। দ্রুতই চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরবেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২৩জুন/এসএস/মোআ)