পরিবেশ রক্ষায় জাপানের যুগান্তকারী প্লাস্টিক আবিষ্কার

তথ্যপ্রযু‌ক্তি ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১১ জুন ২০২৫, ০৯:২২
অ- অ+

পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে চলা বিশ্বব্যাপী লড়াইয়ে এক নতুন দিশা দেখাল জাপানের বিজ্ঞানীরা। তারা এমন এক ধরনের প্লাস্টিক উদ্ভাবন করেছেন, যা সমুদ্রের নোনা জলে পড়লেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে গলে যাবে এবং কোনো ক্ষতিকর অবশেষ ছাড়বে না। এই নতুন ধরনের প্লাস্টিক হতে পারে সমুদ্র দূষণ ও মাইক্রোপ্লাস্টিক সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

জাপানের RIKEN Center for Emergent Matter Science এবং টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণায় তৈরি হয়েছে এই পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক। দেখতে সাধারণ পেট্রোলিয়াম-ভিত্তিক প্লাস্টিকের মতো হলেও, এর রসায়ন সম্পূর্ণ আলাদা। সমুদ্রের লবণাক্ত জলে পড়লেই এটি দ্রুত ভেঙে গিয়ে তার মূল উপাদানে ফিরে আসে।

গবেষণা দলের প্রধান প্রফেসর তাকুজো আইডা জানিয়েছেন, “তিন দশক ধরে চালানো গবেষণার ফল এই নতুন প্লাস্টিক। এটি একটি সুপ্রামলিকিউলার পলিমার, যা যথেষ্ট টেকসই হলেও, নির্দিষ্ট পরিবেশে পড়লেই পরিবেশবান্ধব উপাদানে পরিণত হয়।

কী দিয়ে তৈরি এই প্লাস্টিক?

এই প্লাস্টিক তৈরি হয়েছে মূলত দুটি উপাদান দিয়ে:

সোডিয়াম হেক্সামেটাফসফেট – এটি সাধারণত ফুড অ্যাডিটিভ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

গুয়ানিডিনিয়াম আয়ন-ভিত্তিক মনোমার – সার ও মাটির গুণাগুণ বজায় রাখতে ব্যবহৃত হয়।

এই দুই উপাদান একত্রে মিশিয়ে তৈরি হয়েছে এমন এক পলিমার, যা নোনা জলে পড়লে নাইট্রোজেন ও ফসফরাসে ভেঙে যায়। এই দুই উপাদানই পরিবেশবান্ধব এবং মাইক্রোবস ও গাছপালার জন্য পুষ্টিকর।

পরিবেশবান্ধব বৈশিষ্ট্য

এটি অবিষাক্ত – মানবদেহ বা প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর নয়।

অদাহ্য – পোড়ালে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত করে না।

পচনশীল – সহজেই পরিবেশে মিশে যায়।

মাইক্রোব-ডাইজেস্টিবল – মাটিতে বা জলে থাকা মাইক্রোবস এটি ভেঙে ফেলতে সক্ষম।

সতর্কতা

এই প্লাস্টিকের ব্যবহারে সতর্কতা প্রয়োজন। প্রফেসর আইডা জানান, “যদিও এটি নিরাপদ, তবে অতিরিক্ত নাইট্রোজেন ও ফসফরাস নির্গত হলে উপকূলবর্তী এলাকায় অ্যালগাল ব্লুম ঘটতে পারে, যা সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।

মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের বিপদ

এই উদ্ভাবনের অন্যতম পেছনের কারণ মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি আজ এভারেস্টের চূড়া থেকে মেরিয়ানা ট্রেঞ্চ পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি মানুষের মস্তিষ্ক, প্লাসেন্টা, এবং গভীর সমুদ্রের মাছের শরীরেও এদের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা এটিকে একটি গ্লোবাল ইমার্জেন্সি বলে ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে জাপানের এই গবেষণা বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মধ্যে নতুন আশার আলো জাগিয়েছে। তবে এর ব্যবহার ও প্রয়োগ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত না হলে সুফলই হিতে বিপরীত হয়ে উঠতে পারে বলেও সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।

(ঢাকাটাইমস/১১ জুন/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ভারতের বিমান দুর্ঘটনায় ১৭০ জনের মরদেহ উদ্ধার
গামছা পরে মাজারে সুয়ে আছেন অভিনেতা সমু চৌধুরী, উদ্ধার চেষ্টায় পুলিশ ও শিল্পীরা 
দু্ই দিনে দেশে ফিরেছেন ৮৬০৬ হজযাত্রী, ২৩ জনের মৃত্যু
বিধ্বস্ত বিমানে ছিলেন ৫৩ জন ব্রিটিশ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা