পরিচয় দিতেন ছাত্রলীগের ‘টোকাই কর্মী’

আন্দোলনে গুলির নির্দেশদাতা আবিদুর রহমান র‌্যাব ডিজির স্টাফ অফিসার, নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ৩০ জুলাই ২০২৫, ২১:২৭| আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬:৪১
অ- অ+

ঝিনাইদহে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও গুলির নির্দেশ দিয়ে ভাইরাল হওয়া সেই পুলিশ কর্মকর্তাকে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন—র‌্যাব মহাপরিচালকের (ডিজি) স্টাফ অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ওই কর্মকর্তার নাম মীর আবিদুর রহমান। তিনি বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ৩৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা।

২০২৩ সালের ৩ মে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) হিসেবে দায়িত্ব পান আবিদুর রহমান। ‘দলবাজ’ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত আবিদুর রহমান ১৯ আগস্ট ঝিনাইদহে সাধারণ ছাত্রদের তোপের মুখে কর্মস্থল থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। এর ছয়দিন পর ২৫ আগস্ট আবিদুর রহমানকে র‌্যাবে পদায়ন করা হয়। চলতি বছরের শুরুতে তিনি র‌্যাব মহাপরিচালকের স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পান।

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ ও র‌্যাব-১১ পরিদর্শনে যান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম। এসময় উপদেষ্টা পুলিশ কর্মকর্তা আবিদুর রহমানের সঙ্গে হাত মেলান। যে দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

ভাইরাল ওই ভিডিওতে দেখা গেছে— ঝিনাইদহে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কীভাবে গুলি চালাতে হয় সেটা শেখাচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা আবিদুর রহমান। ভাইরাল ওই ভিডিও’র ক্যাপশনে লেখা হয়েছে— ‘জুলাই বিপ্লবে ঝিনাইদহে ছাত্র-জনতার বুকে কীভাবে গুলি চালাতে হবে তা শেখানো সেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার র‌্যাবে গুরুত্বপূর্ণ পোস্টিং নিয়ে রয়েছেন।’

গত ১৯ আগস্ট আবিদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঘেরাও করে আন্দোলন শুরু করে স্থানীয় ছাত্র-জনতা। বিষয়টি আগাম টের পেয়ে কর্মস্থল থেকে পালিয়ে যান আবিদুর রহমান।

সেসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (সদ্য বিলুপ্ত) নেতৃত্ববৃন্দ গণমাধ্যমে বলেন, ‘প্রশাসনে শেখ হাসিনার কোনো দোসরকে রাখা হবে না। তারা প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থেকে আবারও আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমান নিজেকে ছাত্রলীগের টোকাই কর্মী বলে পরিচয় দিতেন। ছাত্র আন্দোলনের সময় এই পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকা ছিল ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনীর মতো।’

ঝিনাইদহের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশি বাঁধা নিয়ে সেসময় স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জেলাটিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচী পুলিশি বাধার সম্মুখীন হয়।

৩১ জুলাই দুপুরে কেন্দ্রীয় এই কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ঝিনাইদহ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ভিআইপি রোড দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল আদালতের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় এলজিইডি পিছনের দিকে পৌঁছালে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরে পুলিশের সাথে আধাঘন্টা ব্যাপী আন্দোলনকারীদের তর্ক-বির্তক হয়। অবশেষে পুলিশের বাধায় তারা পিছু হটতে বাধ্য হন। তবে আন্দোলনকারীরা একটু পিছনে গিয়ে তাদের বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তাদের নয় দফা দাবি সম্বলিত বক্তব্য পেশ করেন।

এই সংবাদগুলোতে যে ছবি প্রকাশ করা হয়েছে তাতে দেখা গেছে, বিপুল সংখ্যক পুলিশ নিয়ে ছাত্র-জনতাকে বাধা দিচ্ছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবিদুর রহমান।

বুধবার রাতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ঝিনাইদহ জেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী সাকিব মোহাম্মদ আল হাসান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আন্দোলন সংগ্রামের সময় ছাত্রদেরকে ওপর গুলি নির্দেশ দেওয়াসহ যত রকমের হয়রানি আছে তার নেতৃত্ব দিয়েছেন আবিদুর রহমান। শেখ হাসিনার পতনের পর ছাত্র-জনতা এসপি অফিস ঘেরাও করলে ঝিনাইদহ থেকে পালিয়ে যান এই পুলিশ কর্মকর্তা।’

সাকিব মোহাম্মদ আল হাসান বলেন, ‘তবে হঠাৎ করে আমরা লক্ষ্য করছি র‍্যাব ডিজির স্টাফ অফিসার হয়েছেন আবিদুর রহমান। এতে আমরা আতঙ্কিত। কারণ এই সরকার কি তাহলে আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মা বা সুবিধাভোগীদের নানা উপায়ে পুনর্বাসন করছে? না হলে আবিদুর রহমানের মতো কুখ্যাত পুলিশ কর্মকর্তা কীভাবে র‍্যাব ডিজির স্টাফ অফিসার হিসেবে নিয়োগ পায়? আমরা লক্ষ্য করছি আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বর্তমান র‍্যাব ডিজির চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু তার এটা কী বা কোন যোগ্যতা বা গুণের কারণে মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলো? তিনিও ছিলেন বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যতম সুবিধাভোগী। আমরা সন্দেহ করছি, এই সরকার নানাভাবে বিগত ফ্যাসিস্টদেরকে সুবিধা দিচ্ছে।’ এটা জুলাই আন্দোলনের পরিপন্থী বলে আমরা মনে করেন ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা।

তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে হাত মেলানোর ভাইরাল ভিডিওটি সামনে আসার পর আমরা ইতিমধ্যে বিষয়টি এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে জানিয়েছি। এছাড়া এনসিপির পক্ষ থেকে জেলা পুলিশ সুপারের মাধ্যমে সরকারের ঊধ্বর্তনদের বিষয়টি অবগত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

বিষয়টি নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঢাকাটাইমস। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে তা গুরুতর। আমি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।’

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এসব সেনসেটিভ জায়গায় কাকে নিয়োগ দেওয়া হয় সেটা ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে দেওয়া উচিত। এই ঘটনায় যারা জড়িত অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হতে হবে।’ আইজিপি, র‌্যাব ডিজিকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার পরামর্শ দেন পুলিশের সাবেক এই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ‘আগের আমলে (আওয়ামী লীগ সরকার আমলে) অনেক বে-আইনি কাজ হয়েছে। এসব কাজের জন্য সবাইকে ঢালাওভাবে দোষ দেওয়া যাবে না। আন্দোলন দমনে কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে কিংবা জড়িত থাকলে বিষয়গুলো দেখতে হবে।’

ভাইরাল ভিডিও’র লিঙ্ক দেখুন:

https://www.facebook.com/newsnowbangla24/videos/1802472064021425/?rdid=bTd7NQPZCTtTYCOe#

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
একাদশ শ্রেণি, কারিগরিতে ভর্তির আবেদন ও রেজিস্ট্রেশন ফি পরিশোধ বিকাশে
ময়মনসিংহে কর্মসংস্থান ব্যাংকের উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
নওগাঁয় হত্যা মামলায় ২ জনের মৃত্যুদণ্ড, ধর্ষণে দুজনের যাবজ্জীবন 
বগুড়ার বাঙালি নদী থেকে অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা