মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা তুলে নিল সামরিক সরকার, ডিসেম্বরে নির্বাচন

প্রায় সাড়ে তিন বছর পর মিয়ানমারে জারি করা জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করেছে দেশটির সামরিক সরকার। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) এক ঘোষণায় জান্তা সরকার জানায়, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
দেশটির সামরিক সরকারের প্রধান মিন অং হ্লেইং এক লিখিত আদেশে এই সিদ্ধান্ত জানান। এরপর এক অডিও বার্তায় বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেন সামরিক সরকারের মুখপাত্র জৌ মিন তুন। তিনি বলেন, “বহুদলীয় গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার স্বার্থে সরকার পার্লামেন্ট নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আজ থেকে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করা হয়েছে।”
এর আগে চলতি বছরের ৮ মার্চ একটি অনুষ্ঠানে মিন অং হ্লেইং বলেছিলেন, ডিসেম্বর ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। সর্বশেষ ঘোষণায় জান্তা জানায়, আগামী ছয় মাসের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যদিও এখনো সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হয়নি।
তবে এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মিয়ানমার সরকার কঠোর নির্বাচন-সংক্রান্ত একটি আইনও কার্যকর করেছে, যার মাধ্যমে যেকোনো ধরনের প্রতিবাদ, সমালোচনা বা বিক্ষোভ দমন করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
‘প্রোটেকশন অব মাল্টিপার্টি ডেমোক্রেটিক ইলেকশন ফ্রম অবস্ট্রাকশন, ডিসরাপশন অ্যান্ড ডেস্ট্রাকশন’ শীর্ষক আইনটি গত ২৯ জুলাই দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশে কার্যকর করা হয়।
এই আইনে বলা হয়েছে, নির্বাচন নিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য, সমালোচনা, লিফলেট বিতরণ, বিক্ষোভ আয়োজন কিংবা পরিকল্পনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে ব্যক্তি পর্যায়ে তিন থেকে সাত বছর এবং প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে দশ বছর কারাদণ্ড হতে পারে।
এছাড়া নির্বাচনী সহিংসতা, ব্যালট নষ্ট, ভোটার বা কর্মকর্তাদের ভয় দেখানো কিংবা ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ড এবং প্রাণহানির ঘটনায় দোষী সাব্যস্তদের মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত দেওয়া হতে পারে।
২০২০ সালের নভেম্বরে মিয়ানমারে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন এনএলডি বিপুল ভোটে জয়ী হয়। তবে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে এবং জরুরি অবস্থা জারি করে।
এ সময় এনএলডির নেত্রী অং সান সু চিসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আটক করা হয়, যাদের অনেকেই এখনো কারাগারে রয়েছেন। সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ এবং সহিংসতা শুরু হয়, যা এখনও থেমে যায়নি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা ও জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার মূলত আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবিলা এবং সামরিক সরকারের বৈধতা প্রতিষ্ঠার কৌশল হতে পারে। তবে নতুন কঠোর আইন ও বিরোধী মত দমন অব্যাহত থাকলে নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্য ও স্বাধীন হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
(ঢাকাটাইমস/৩১ জুলাই/আরজেড)

মন্তব্য করুন