বাংলাদেশে প্রথম বারের মতো BEAR সম্মেলন ও সেমিকন্ডাক্টর সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত, ডিপ-টেক উন্নয়নে নতুন দিগন্তের সূচনা

বাংলাদেশ গভীর প্রযুক্তিনির্ভর উদ্ভাবনের কেন্দ্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে বড় এক পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর সম্মেলন, বায়োটেকনোলজি, ইলেকট্রনিক্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI), রোবটিক্স (BEAR) সম্মেলন এবং বাংলাদেশ জাতীয় সেমিকন্ডাক্টর সিম্পোজিয়াম ২০২৫ সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অ্যাকাডেমিয়া, শিল্পখাত এবং বৈশ্বিক প্রযুক্তি সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে আয়োজিত এই সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তরের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ফুটে উঠেছে।
১৬ ও ১৭ জুলাই দুই দিনব্যাপী এই আয়োজনটি ঢাকার আগারগাঁওয়ে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে বাংলাদেশ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, EDGE প্রকল্প ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। এতে সহায়তা করেছে বিশ্বব্যাংক। উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফায়েজ আহমাদ তাইয়েব।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ফায়েজ আহমাদ তাইয়েব বলেন, “আমরা ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার গড়ে তুলছি, একটি জাতীয় AI নীতিমালা প্রণয়ন করছি এবং বাংলা ভাষাভিত্তিক প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তার AI মডেল তৈরি করছি। আমাদের লক্ষ্য হলো তরুণদের ক্ষমতায়ন এবং সেমিকন্ডাক্টর খাতে উদ্যোক্তাদের সহায়তা প্রদান।”
সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাইদুর রহমান বলেন, “উচ্চশিক্ষার উন্নয়ন ছাড়া চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের (4IR) চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। এ লক্ষ্য অর্জনে HEAT প্রকল্প ও ICSETEP উদ্যোগ চালু হয়েছে।” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এই উদ্যোগের অংশ।
বুয়েট উপাচার্য ড. এ বি এম বদরুজ্জামান ও আইসিটি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
প্যানেল আলোচনায় কনস্টেলেশন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান তানভীর আলী বলেন, “BEAR সম্মেলন একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্ল্যাটফর্ম, যা AI-এর সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ দুই-ই অন্বেষণ করে। তরুণ উদ্যোক্তারা আজ সহজলভ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বল্প মূলধনে ডিজিটাল কনটেন্ট নির্মাণ ও মার্কেটিংয়ের মতো ক্ষেত্রে স্টার্টআপ গড়ে তুলতে পারেন।”
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে ছিলো বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সেশন ও প্যানেল আলোচনা। নিউরাল সেমিকন্ডাক্টর লিমিটেড, উল্কাসেমি ও থিংক গ্লোবাল লিমিটেডসহ অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের উদ্ভাবনী কার্যক্রম উপস্থাপন করে।
আয়োজকদের মতে, সম্মেলনে ২,৫০০ জনের বেশি অংশগ্রহণকারী ছিলেন, যার ৬০% শিক্ষার্থী এবং ৪০% পেশাজীবী। এছাড়া, প্রায় ৩০% আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণকারী ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সকল স্থানীয় সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি এতে অংশ নেয়, যেখানে ৩০০-এরও বেশি পোস্টার ও ডেমো উপস্থাপন করা হয়।
এ বছর ১ জানুয়ারি গঠিত ১৩ সদস্যবিশিষ্ট সেমিকন্ডাক্টর টাস্কফোর্স সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কাছে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তাতে দক্ষতা উন্নয়ন, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ, নীতিগত সহায়তা এবং বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব জোরদার করার রোডম্যাপ তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে সেমিকন্ডাক্টর ভ্যালু চেইনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ — চিপ ডিজাইন, উৎপাদন, এবং টেস্টিং ও প্যাকেজিং — চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য প্রাথমিকভাবে চিপ ডিজাইন এবং প্যাকেজিংয়ে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে পূর্ণাঙ্গ চিপ উৎপাদনের জন্য ব্যাপক বিনিয়োগ ও দক্ষ জনবল প্রয়োজন হওয়ায় সেটিকে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হিসেবে সুপারিশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. মেহেদী হাসান, গ্লোবাল ফাউন্ডারস-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহবুব রাশেদ এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
(ঢাকাটাইমস/১৮ জুলাই/আরজেড)

মন্তব্য করুন