২০১৪ ও ১৮ সালে সুষ্ঠু ভোট হলে ক্ষমতা হারাত আ.লীগ: অপ্রকাশিত গোয়েন্দা প্রতিবেদন

বাংলাদেশে ২০১৪ সালে বিরোধী দলকে নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ক্ষমতাচ্যুত হতো আওয়ামী লীগ। অর্ধশতের সামান্য বেশি আসন পেত দলটি। আর ২০১৮ সালে রাতের ভোটের বদলে সুষ্ঠু ভোট হলে আওয়ামী লীগের অবস্থা হতো আরো করুণ। পঞ্চাশের নিচে নেমে আসতো তাদের সংসদ সদস্যের সংখ্যা।
এমনই চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া গেছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার প্রতিবেদনে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগেভাগে তৈরি এই প্রতিবেদন এখনো ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে আছে পুলিশের কাছে।
পুলিশের বিশেষ সূত্রে এসব তথ্য জানতে পেরেছে ঢাকাটাইমস। সেসময় যেসব সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা এই রিপোর্ট তৈরিতে যুক্ত ছিলেন, তাদের অনেকেই এখনো নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে আলাপ করেন।
যেকানো বড় নির্বাচন এলেই মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি জানতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এমনকি সংবাদপত্রের মাধ্যমেও জরিপ চালায় তারা। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের অ্যাডভান্টেজ বেশি। নিজ দলের কর্মী কিংবা বেসরকারি কোনো সংস্থা ছাড়াও সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতা নেয় ক্ষমতাসীন দল। নির্বাচনের আগে সবগুলো গোয়েন্দা সংস্থাই নিজস্ব কায়দায় জনমত জরিপ চালায়।
বাংলাদেশে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে তথ্য সংগ্রহে সবচেয়ে শক্তিশালী পুলিশের বিশেষ শাখা বা এসবি। সারা দেশে বিস্তৃত এর নেটওয়ার্ক। একেবারে তৃণমূলের একজন মানুষের হাঁড়ির খবরও রাখতে পারে তারা।
প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এসবির পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা বিভাগ (ডিজিএফআই), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)। পরে আলাদাভাবে এসব রিপোর্ট যায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও পুলিশের এসবি এমন রিপোর্ট তৈরি করেছিল। তাদের হিসাবে সেবার বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচনে অংশ নিলে আওয়ামী লীগ পেত ৬২ আসন।কারণ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় গিয়েই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। অনেক সংসদ সদস্য হয়ে যান নিজ এলাকার অপরাধীদের গডফাদার। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর চালানো হচ্ছিল নানা উপায়ের নির্যাতন। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের ওপর সরকারি বাহিনীর হামলাও ছিল আওয়ামী লীগের প্রতি জন-অসন্তোষের একটি বড় কারণ। এসব কারণে আওয়ামী লীগের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল সাধারণ মানুষ। পুলিশের বিশেষ শাখার রিপোর্টে উঠে আসে এমন চিত্র। তখন পুলিশের এসবির প্রধান ছিলেন জাভেদ পাটোয়ারী। নিজের দপ্তরের এই রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাতে ভয় পাচ্ছিলেন তিনি।
অবশ্য সরকারি গোয়েন্দা রিপোর্ট ছাড়াই মাঠের প্রকৃত পরিস্থিতি কিছুটা হলেও আঁচ পেয়েছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সুষ্ঠু নির্বাচনে ক্ষমতায় যাওয়া কঠিন বলে মনে করেছিল তারা। কারণ বিএনপি ও জামায়াতের ভোট যোগ হলে এই জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যাবে। বিএনপি-জামায়াত জোট সেবার নির্বাচন বর্জন করলেও আওয়ামী লীগের ভয় কাটেনি। বিরোধী দলের নেতারা স্বতন্ত্র নির্বাচন করে আওয়ামী লীগকে বেকায়দায় ফেলতে পারে- এই ভয় ছিল তাদের। তাই ক্ষমতায় যাওয়া নিরাপদ করতে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিজেদের সংসদ সদস্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার।
২০১৮ সালের নির্বাচনের পরিস্থিতি ছিল আওয়ামী লীগের জন্য আরো শোচনীয়। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল খারাপ। দুর্নীতি-লুটপাট, মানুষকে নানাভাবে হয়রানি আগের চেয়ে বেড়ে যায়। বিরোধী দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাও গুম থেকে রেহাই পাননি। তাই মানুষ আওয়ামী লীগের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।
সেবার বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের পক্ষে সারাদেশে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়। পুলিশের এসবির রিপোর্টে বলা হয়, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ পেত মাত্র ৩৮টি আসন। ধরাশায়ী হতেন মন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা। এই তালিকায় ছিলেন আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, জাহিদ মালেক প্রমুখ।
পুলিশের গোয়েন্দাদের এই রিপোর্টের বস্তুনিষ্ঠতা সম্পর্কে জানতেন প্রধান উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। তাই একে গুরুত্বের সাথে নিয়ে ২০১৮ সালে রাতের ভোটের ব্যবস্থা করেন তিনি। সেবার পুলিশের আইজি ছিলেন জাভেদ পাটোয়ারী।
(ঢাকাটাইমস/৩জুলাই/এসএস/মোআ)

মন্তব্য করুন