গাজায় ইসরায়েলি হামলায় পাঁচ ঘণ্টায় নিহত ১৮, মোট প্রাণহানি ছাড়াল ৫৭ হাজার ২৬৮

যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলাকালীন সময়ে গাজা উপত্যকায় ফের ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী।
গাজার চিকিৎসা সূত্রের বরাতে ফিলিস্তিনি ইনফরমেশন সেন্টার এবং কুদস নিউজ নেটওয়ার্ক জানাচ্ছে, শনিবার মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাত্র পাঁচ ঘণ্টায় কমপক্ষে ১৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য দপ্তর।
এদিকে গাজায় ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ‘নির্বিচারে’ গুলি করে হত্যা করছে ইসরায়েল। গত ২৭ মে থেকে ইসরায়েলি আগ্রাসনে প্রাণ হারিয়েছে ৬১৩ ত্রাণপ্রত্যাশী। এছাড়া স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৪১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
গাজায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত বিতর্কিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) সাবেক এক নিরাপত্তা ঠিকাদার বলেছেন, তিনি কয়েকবার তার সহকর্মীদের মেশিনগানসহ অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালাতে দেখেছেন, যারা কোনো হুমকি ছিল না।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলের আল-মাওয়াসি এলাকায়, যেখানে বহু বাস্তুচ্যুত মানুষ তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৭ জন নিহত হন।
এছাড়া গাজার উত্তরাঞ্চলের জেইতুন এলাকায় আল-শাফি’ই স্কুলে বিমান হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত ৫ জন নিহত ও আরও অনেকে আহত হয়েছেন।
মাঝগাজার শরণার্থী ক্যাম্পের আবু ব্রেইক পরিবারের বাড়িতেও বোমা হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত ২ জন নিহত হন এবং কয়েকজন আহত হন।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রাত থেকে সকালের মধ্যে গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় মোট ১৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চললেও হামলা অব্যাহত থাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও শোক ছড়িয়ে পড়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নিহত হয়েছেন ১৩৮ জন এবং আহত হয়েছেন আরও ৬২৫ জন। শুক্রবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুসারে, ইসরায়েলি বাহিনীর বৃহস্পতিবার-শুক্রবারের অভিযানের জেরে গাজায় গত ২১ মাসে মোট নিহতের সংখ্যা ৫৭ হাজার ২৬৮ জন এবং আহতের সংখ্যা ১ লাখ ৩৫ হাজার ১৭৩ জনে পৌঁছেছে।
“তবে আহত ও নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি। ধ্বংসস্তূপের তলায় অনেকে চাপা পড়ে আছে। তাদেরকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি”, বলা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সোমবারের পর ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৫৪ হাজার ৯২৭ জনে। এদের পাশাপাশি আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ২৬ হাজার ২২৭ জন ফিলিস্তিনি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা।
হামাসের হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অভিযান চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী অন্যান্য দেশের চাপে বাধ্য হয়ে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েল।
কিন্তু বিরতির দু’মাস শেষ হওয়ার আগেই গত ১৮ মার্চ থেকে ফের গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। দ্বিতীয় দফার এ অভিযানে গত আড়াই মাসে গাজায় নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ৭১০ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও প্রায় ২৩ হাজার ৫৮৪ জন।
যে ২৫১ জন জিম্মিকে হামাসের যোদ্ধারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে অন্তত ৩৫ জন এখনো জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করার ঘোষণা দিয়েছে আইডিএফ।
(ঢাকাটাইমস/৫ জুলাই/আরজেড)

মন্তব্য করুন