ধামরাই কি আমাদের মনোজাগতিক পচনকেই দৃশ্যমান করল?

শামীম আনোয়ার
  প্রকাশিত : ০৫ জুলাই ২০২৫, ১০:০১| আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৫, ১১:২৩
অ- অ+

অতি সাধারণ আর নির্দোষ একটি নাচের ভিডিওকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে যেভাবে একটি বিয়ে ভেঙে দেওয়া হলো এবং শিক্ষিত-অশিক্ষিত, গ্রাম্য- শহুরে নির্বিশেষে আমাদের দেশের ৯৯ শতাংশ ফেসবুকার যেভাবে এতে হাতে তালি বাজিয়ে যাচ্ছেন, দু:খিত বন্ধুগণ, আমি এটিকে ভিন্ন মাত্রার এক ফ্যাসিজমের পদধ্বনি ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারছি না। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে ভিডিওটা কেবলই একটা ছুতা। ঘটনার প্যাঁচ নিশ্চয়ই অন্য কোথাও। হাজী সাহেবের নিন্দা করা হয়ে যাবে ভেবে আমার সন্দেহের জায়গাটা প্রকাশ করতে পারলাম না।

মেয়েটি যদি কোনো মহা ঘুষখোর বা ভূমিদস্যুর কন্যে হতো, তাতে নিশ্চয়ই হাজী সাহেব বিয়ে ভেঙে দেওয়ার মতো দোষের কিছু খুঁজে পেতেন না। অবৈধ মজুতদার, কালোবাজারি বা বনখেকো হলেও নিশ্চয়ই সবিশেষ মেনে নিতেন! কিন্তু সে তো 'নেচে' ফেলেছে! এত বড় অপরাধ! শরৎ চন্দ্রের বিলাসী গল্পের মতো করে বলতে হয়, 'অন্ন পাপ! বাপরে বাপ, তার কী আর ক্ষমা আছে!!' মেয়েটির অমার্জনীয় এ অপরাধ শুধু হাজী সাহেবের কাছে না, একেকজন নীরব নীতিপুলিশ আমাদের ৯৯ শতাংশ ফেসবুক ব্যবহারকারীর কাছেও।

আমি নিজেও আধুনিকতার নামে উলঙ্গপনা, প্রগতির নামে অশ্লীলতার ঘোর বিরোধী একজন মানুষ। কিন্তু ভিডিওটি ৪/৫ বার দেখে আমার কাছে একবারও মনে হয়নি কোনোভাবে এটি শালীনতা- ভব্যতার সীমা পেরিয়েছে। অন্তত এতটা তো নয়-ই যে, আনুষ্ঠানিকতার বড় অংশ পার হয়ে যাওয়া একটি বিয়ে ভেঙ্গে দিতে হবে বা গণহারে মেয়েটিকে যাচ্ছেতাই ভাষায় বুলিয়িং করে যেতে হবে। কী আশ্চর্য! এখন পর্যন্ত আমি একজনকেও দেখলাম না মেয়েটি এবং তার শোকে মুহ্যমান বাবার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে কোথাও একটি কমেন্ট করেছে। তার ব্দলে আমরা প্রত্যেকেই একেকজন 'হাজীসাব'। কথায় আছে, মাছের পঁচন শুরু হয় মাথা থেকে। আমাদের অন্তর্জাগতিক পঁচন কখনও কখনও অলক্ষেই এভাবে দৃশ্যমান হয়ে পড়ে। বোঝা মাথায় থাকা ব্যক্তির লুঙ্গি খুলে পড়ে যাওয়ার মতো!

অল্পবয়সী মেয়েটা এত বড় আঘাত সইতে না পেরে ভিন্ন কিছু করে ফেললে তখন আপনাদের এ উল্লাস-ধ্বনিতে একটু ভাটা পড়বে কি বন্ধুগণ? হাজী সাহেবও কি তখন একটু অনুতাপ বোধ করবেন? শুধু একটা নির্দোষ নাচকে শিখণ্ডী করে এমন নির্মম সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং আপনাদের ৯৯ শতাংশ কর্তৃক মেয়েটিকে (এবং তার বাবাকে) ক্রমাগত নিন্দামন্দ করাটা নিষ্ঠুরতার অনন্য এক উদাহরণ হয়ে থাকল।

শেষমেশ বলব,মেয়েটি নাচে ভালো (অনভিজ্ঞ দৃষ্টিতে)। দেখেশুনে মনে হয় সে ভালো বউও হতে পারে। দয়া করে হাজী সাহেব যদি তার সিদ্ধান্তটা পুনর্বিবেচনা করতেন! (আমি ওই এলাকার পুলিশের কর্তাব্যক্তিদের সাথে কথা বলে বিষয়টি, পুলিশের ভাষায় যাকে বলে খতিয়ে (!) :p , দেখতে অনুরোধ করেছি। এবং সম্ভব হলে পজিটিভ কিছু করে দিতে...। পাত্রের মোবাইল নম্বরটা কারো কাছে থাকলে, প্লিজ আমাকে ইনবক্সে দিয়েন)।

লেখক: বিসিএস (পুলিশ), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল), নরসিংদী

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
কমিউনিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৬৮তম সভা অনুষ্ঠিত
কুষ্টিয়ায় মেঘনা ব্যাংকের নতুন এজেন্ট আউটলেটের যাত্রা শুরু
ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত এনসিপি, যদি...
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই: বিচারপতি আব্দুর রহমান
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা