রংপুরে ভরসাদের আসনে সমীকরণ বদলে দিতে মাঠে এনসিপির আখতার

রংপুর-৪ (পীরগাছা ও কাউনিয়া)
  প্রকাশিত : ২৪ আগস্ট ২০২৫, ১৮:৪৯
অ- অ+

একসময় এই আসনের নির্বাচন নিয়ে সারা দেশের মানুষেরই ছিল এক ভিন্ন রকম কৌতূহল। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির দুর্গ রংপুর। সেই জেলারই দুই উপজেলা পীরগাছা ও কাউনিয়া নিয়ে জাতীয় সংসদের আসন রংপুর-৪। একসময় এই আসনের নির্বাচন নিয়ে সারা দেশের মানুষেরই ছিল এক ভিন্ন রকম কৌতূহল। এখানে দুই দল থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন আপন দুই ভাই। বড় ভাই রহিমউদ্দিন ভরসা ছিলেন বিএনপির, অন্যদিকে ছোট ভাই জাতীয় পার্টির করিমউদ্দিন ভরসা।

২০২০ সালে রহিমউদ্দিন ভরসা এবং ২০২২ সালে করিমউদ্দিন ভরসা মারা গেছেন। তারা পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেও নির্বাচনী আলোচনায় থাকছেন ভালোভাবেই। আগামী নির্বাচনে সেখানে লড়তে পারেন তাদের দুই সন্তান। আপন দুই ভাইয়ের যুদ্ধ এবার আপন দুই চাচাতো ভাইয়ে হবে।

নিজ নিজ বাবার পদাঙ্কই অনুসরণ করছেন উত্তরসূরিরা। একজন বিএনপি ও অন্যজন জাতীয় পার্টির। কেমন হবে একই রক্তধারার দুই উত্তরসূরির লড়াই?

রংপুর-৪ আসনের নির্বাচনী ইতিহাস বলছে, এখানে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি- তিন দলের প্রার্থীরাই বিভিন্ন সময়ে জয় পেয়েছেন।

এখানে ১৯৭৯ সালে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা রহিম উদ্দিন ভরসা। ছোট ভাই করিম উদ্দিন ভরসা রাজনীতিতে এসেছেন আরো পরে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে পাঁচ আসনে জয়ী এরশাদ রংপুর-১ আসন ছেড়ে দিলে সেখানে উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত হন করিম উদ্দিন ভরসা। সেবার রংপুর-৪ আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচন করে রহিমউদ্দিন ভরসা তৃতীয় হন।

১৯৯৬ সাল থেকে শুরু হয় রংপুর-৪ আসনে দুই ভাইয়ের লড়াই। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জয় পান করিমউদ্দিন ভরসা। ২০০৮ সালে আসনটি দখল করে আওয়ামী লীগ।

রহিমউদ্দিন ভরসা জীবিত থাকতেই রংপুরের বিএনপিতে নাম লেখান তার ছেলে এমদাদুল হক ভরসা। বাবা ছিলেন রংপুর জেলা বিএনপির সভাপতি, ছেলেও পরে সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। দলের দুর্দিনে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এমদাদুল হক।

২০১৮ সালের নির্বাচনে বার্ধক্যজনিত কারণে রহিম উদ্দিন ভরসা মনোনয়ন চাননি। বাবার বদলে বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন ছেলে এমদাদুল হক ভরসা। ক্ষমতাসীনরা আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভরে ফেললেও সেই নির্বাচনে লক্ষাধিক ভোট পেয়েছিলেন বিএনপির প্রার্থী। আগামী সংসদ নির্বাচনেও বিএনপির শক্তিশালী মনোনয়ন প্রার্থী এমদাদুল হক ভরসা।

অন্যদিকে, ছোট ভাই করিম উদ্দিন ভরসার ছেলে সিরাজুল ইসলাম ভরসাও জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনেও তিনি জাতীয় পার্টির মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে জাতীয় পার্টি সেবার তাকে মনোনয়ন দেয়নি।

২০০৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির কাছ থেকে এই আসনটি ছিনিয়ে নেয় আওয়ামী লীগ। এরপরের প্রতিটি নির্বাচনেই আসনটি ছিল উন্মুক্ত, ফলে আওয়ামী লীগের সাথে লড়াই করেছে জাতীয় পার্টি।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তাদের জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টির অবস্থাও এখন নড়বড়ে। তাই বাবার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে আসনটি পুনরুদ্ধারে ছেলে সিরাজুল ইসলাম ভরসাকে মনোনয়ন দিতে পারে জাতীয় পার্টি। আর তাহলে রংপুরের রাজনীতি এক দারুণ পারিবারিক লড়াইয়ের সাক্ষী হবে, যেখানে চাচাতো ভাইয়েরাই হবেন একে অপরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।

তবে এবারের লড়াই শুধু ভরসা পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এই আসনে ভোটের সমীকরণ বদলে দিতে মাঠে নেমেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আকতার হোসেন। ছাত্ররাজনীতি থেকে উঠে আসা আকতার হোসেনের লক্ষ্য প্রচলিত দুই ধারার রাজনীতির বাইরে একটি নতুন বিকল্প তৈরি করা। বলা হয়, এনসিপির নেপথ্যে সমর্থন দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এমনকি বিএনপির সাথে এনসিপির আসন সমঝোতার জন্য দেনদরবার করছে বলেও গুঞ্জন আছে। সেই গুঞ্জন সত্যি হলে আসনটি আখতার হোসেনকেও ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি।

এবার দেখা যাক এই আসনে কোন দলের ভোট কত। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে এখানে জাতীয় পার্টির ভোট ছিল যথাক্রমে ৪৭ দশমিক ৪ ও ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০০১ সালে ভোট কমে দাঁড়ায় ৩৮ দশমিক দুই শতাংশে। আর আসন হারানোর বছর ২০০৮ সালে নেমে আসে ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশে। অন্যদিকে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে এখানে বিএনপির ভোট ছিল ১৩ থেকে ১৭ শতাংশ। আরেক বড় দল আওয়ামী লীগ ২০০১ সাল পর্যন্ত পেয়েছে ২২ থেকে ২৭ শতাংশ ভোট।

এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর উল্লেখযোগ্য ভোট আছে। তবে তা জয় কিংবা জাতীয় পার্টি-বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য যথেষ্ট নয়। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এই দলের প্রার্থীরা পেয়েছিলেন ১৩ শতাংশ ভোট।

(ঢাকাটাইমস/২৪আগস্ট/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
৫০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়লেন সাকিব
‘আমার স্ত্রী ছয় মাসের প্রেগন্যান্ট’, গ্রেপ্তারের পর পুলিশকে যে ভয়ের কথা বললেন তৌহিদ আফ্রিদি
হবিগঞ্জে অনুমতি ছাড়া দাঁড়ি রাখায় তিন কনস্টেবলকে শাস্তি
ট্রাক চালকের আসনের নিচে লুকানো ছিল ১৮ হাজার পিস ইয়াবা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা