আবদুল্লাহ আল মামুনের জবানবন্দি

হারুনকে ‘জ্বিন’ ডাকতেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আন্দোলন দমনে ছিল নিয়মিত গোপন বৈঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১২ আগস্ট ২০২৫, ১৬:৩১| আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২৫, ১৭:৩০
অ- অ+

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলন দমন ছিল পূর্বপরিকল্পিত ও সমন্বিত। আন্দোলন শুরুর আগেই সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি কোর কমিটি প্রতিদিন রাতেই বৈঠকে বসত। স্থান—তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমন্ডির বাসভবন।

এসব বৈঠকে উপস্থিত থাকতেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। চলতি বছরের মার্চের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া তার (মামুন) এক জবানবন্দিতে উঠে এসেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।

সাবেক আইজিপি তার জবানবন্দিতে বলেন, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই থেকে আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে প্রায় প্রতিরাতেই রাত ৮টা বা ৯টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় কোর কমিটির গোপন বৈঠক হতো। বৈঠকে উপস্থিত থাকতেন স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম, অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) টিপু সুলতান, অতিরিক্ত সচিব রেজা মোস্তাফা, এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ, র‍্যাব ডিজি ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, বিজিবির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক, এনটিএমসি প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান ও ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক।

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের ভাষ্য অনুযায়ী, এসব বৈঠকে আন্দোলন দমন থেকে শুরু করে নজরদারি, গ্রেপ্তার, চাপ প্রয়োগ ও ‘দৃষ্টান্ত স্থাপন’-এর জন্য নানা ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হতো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দিক থেকে সমন্বয় করে কোর কমিটিকে অবহিত করতেন।

এক বৈঠকে ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন’-এর কয়েকজন শীর্ষ সমন্বয়ককে গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ ও ডিজিএফআইকে। পরে সমন্বয়কদের আটক করে তাদের ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়। সেখানে তাদের ওপর মানসিক চাপ, পরিবারকে হুমকি ও বিবৃতি দিতে বাধ্য করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয় বলে জানান সাবেক আইজিপি।

চৌধুরী মামুন আরও বলেন, ‘আমি ওই বৈঠকে এসব আটক ও নির্যাতনের বিষয়ে আপত্তি জানাই। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেটিকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে দেখিয়ে সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন।’

জবানবন্দিতে আরও একটি বিশেষ তথ্য উঠে আসে—তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদকে ডাকতেন ‘জ্বিন’ নামে। তিনি হারুনকে মনে করতেন অত্যন্ত ‘কর্মতৎপর’ এবং সরকারের কঠিন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ‘রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে কার্যকর’।

চৌধুরী মামুনের ভাষ্য, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় সরকারি অফিসিয়াল মিটিং ছাড়াও ‘অফ-দ্য-রেকর্ড’ভাবে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, ওসি, এনএসআই, ডিজিএফআই, এনটিএমসি ও পুলিশের বিশেষ শাখার লোকজন নিয়মিত যাতায়াত করতেন। এ বিষয়ে সাবেক আইজিপি বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রক্ষার নামে অনেক অনৈতিক সিদ্ধান্ত গোপন বৈঠকে নেওয়া হতো। এগুলো প্রশাসনিক নয়, ছিল রাজনৈতিক।’

৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের মন্ত্রী, এমপি, সরকারি উচ্চপদস্থ চাকুরিজীবীসহ অনেকে। হারুন অর রশীদও দেশ থেকে কৌশলে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন বলে জানা গেছে। আর সেনা হেফাজতে থাকা চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে ৩ সেপ্টেম্বর ডিবি পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নেয়। বর্তমানে কারাগারে আছেন তিনি।

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
শেখ হাসিনার পক্ষে মামলা লড়তে আদালতে জেড আই পান্নার আবেদন, কিন্তু...
কারা হেফাজতে প্রতিশ্রুতিশীল জনশক্তি রপ্তানিকারক তরুণ ব্যবসায়ীর করুণ মৃত্যু, নেপথ্যে...
পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিন দুদক কর্মকর্তার সাক্ষ্য
শেখ হাসিনা, জয় ও পুতুলের বিরুদ্ধে 'প্লট দুর্নীতি' মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা