তদন্ত কমিটি গঠন
র্যাব পরিচয়ে হুমকি, পরিচালকের গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন চালক ও দেহরক্ষী!

রাজধানীর বনানীর একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও কর্মচারীকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে র্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে। তারা একজন পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তার নামে বরাদ্দপ্রাপ্ত র্যাবের গাড়ি ব্যবহার করে এ কাজ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে বনানীর পারফেক্ট টাইম গ্লোবাল কনসালটেন্সি বিডি নামক প্রতিষ্ঠানে। অভিযোগ, আইয়ুব আলী নামের এক ব্যক্তি বিদেশ যাওয়ার জন্য যে টাকা দিয়েছিলেন, সেই টাকা ফেরত পেতে র্যাব সদস্যরা চাপ প্রয়োগ করেছেন। সর্বশেষ শনিবার রাতে তিন ব্যক্তি ওই অফিসে যান। ঢাকাটাইমসের অনুসন্ধানে জানা গেছে, তাদের মধ্যে দু'জন র্যাব সদস্য ছিলেন।
ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ ও ছবি থেকে দেখা যায়, ব্যবহৃত গাড়িটি র্যাব সদরদপ্তরের একজন পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তার। গাড়ি চালাচ্ছিলেন মিলন নামে এক সদস্য, যিনি সেনাবাহিনী থেকে প্রেষণে র্যাবে যোগ দিয়েছেন। তার সঙ্গে ছিলেন পরিচালকের দেহরক্ষী রাজা শেখ, যিনি বিজিবি থেকে প্রেষণে এসেছেন।
এ ঘটনায় আরেক র্যাব সদস্য এএসআই মোস্তফার নামও সামনে আসছে। অভিযোগ রয়েছে, র্যাব সদস্য মিলন ও আইয়ুব আলীর বাড়ি মাগুরা জেলায় হওয়ায় ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিত্তিতে তার পক্ষে টাকা আদায়ের এই কাজে যুক্ত হয়েছিলেন। এতে আর্থিক সুবিধার লোভে র্যাবের নাম ব্যবহার করে ভীতি তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ভুক্তভোগী ইমরান জানান, দুই বছর আগে তিনি বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকায় মা রিক্রুট এজেন্সিতে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। এসময় সৌদি আরব যেতে আগ্রহী আইয়ুব আলীকে আসিফ নামে একজন ব্যক্তি তার কর্মস্থলে নিয়ে যান। নিয়ম অনুযায়ী আইয়ুবের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেন তিনি। এরপর আইয়ুবকে ফোন করে একাধিকবার অফিসের ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা দিতে বলেন। কয়েকদফায় মোট তিনলাখ ২০ হাজার টাকা জমা দেন আইয়ুব।
ইমরান বলেন, 'সেসময় সৌদি আরবের যে কোম্পানিতে আইয়ুবকে পাঠানোর কাগজ প্রস্তুত করা হয়েছিল সেই কোম্পানিতে যেতে রাজি ছিলেন না তিনি। পরে পৃথক আরেকটি কোম্পানিতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছিল, তবে আইয়ুবের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ফলে আইয়ুবের বিদেশ যাত্রা বিলম্বিত হয়।'
ইমরান বলেন, আমি আগের প্রতিষ্ঠানটি ছেড়ে নতুন একটি প্রতিষ্ঠানে যোগ দিই। তার ভাষ্য, মাস ছয়েক আগে আইয়ুব আলী তার সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেন, র্যাব সদরদপ্তরে কর্মরত মিলন নামে একজন সদস্য তার সঙ্গে কথা বলবেন। এরপর মিলন একাধিকবার তাকে ফোন করেন এবং নতুন কর্মস্থলে গিয়ে টাকা ফেরতের জন্য চাপ দিতে থাকেন। একপর্যায়ে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ ও নির্যাতনের ভয়ও দেখান।
ইমরান জানান, তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে মিলন বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। সেখানে সাড়ে সাত লাখ টাকা গ্রহণের কথা উল্লেখ করা হয় এবং নতুন প্রতিষ্ঠানের মালিকের নামও জড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর হঠাৎ একদিন মিলনের ডাকে র্যাব সদরদপ্তরে যান ইমরান।
ইমরানের ভাষায়, মিলন আমাকে র্যাবের হাজতখানা, আয়নাঘর, সাইবার মনিটরিং কক্ষ ঘুরিয়ে দেখান। বলেন, ‘এখানে মানুষকে দিনের পর দিন বন্দি রেখে নির্যাতন করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘তুই যদি টাকা না দিস, তাহলে তোকে এখানে এনে রেখে দেবে।’ এমনকি বলেন, ‘তোকে র্যাবে সাইবার সেল মনিটরিং করছে, কেউ তোকে রক্ষা করতে পারবে না'।
এমন হুমকির মুখে পড়ে ইমরান তার নতুন প্রতিষ্ঠানের মালিককে বিষয়টি জানালে, তিনি আশ্বাস দেন এবং আর্থিক সহায়তা দিতে সম্মত হন।
ঘটনার সময়ের ভিডিও ও ছবি রবিবার বিকালে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার ইন্তেখাব চৌধুরীর কাছে পাঠানো হলে তিনি তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, 'ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এর সঙ্গে জড়িতদের কোনোভাবে ছাড় দেওয়া হবে না।' পরবর্তীতে রাতে ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, ইতোমধ্যে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং তদন্তের জন্য একজন মেজর পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, সোমবার সকাল থেকে তদন্ত শুরু হবে এবং ভুক্তভোগী ইমরানকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন