একটা দলকে খুশি করতে ঘোষণাপত্র হবে জুলাই চেতনার পরিপন্থি : গণঅধিকার পরিষদ

জুলাই কারও একার নয় উল্লেখ করে গণঅধিকার পরিষদ বলেছে, কোনো একটা দলকে খুশি করতে ঘোষণাপত্র রচিত হলে তা হবে ১৯৭১-এর ইতিহাসের মতো ২০২৪-এর ইতিহাসকে একপাক্ষিক ও কুক্ষিগত করার শামিল, যা হবে জুলাই চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থি।
দলটি বলেছে, জুলাই ঘোষণাপত্রে ৩৬ দিনের বিপ্লবের প্রেক্ষাপট; ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনসহ দীর্ঘ ১৪-১৫ বছর ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর আপোষহীন ভূমিকা স্পষ্ট হতে হবে। অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ও স্বীকৃতি ছাড়া জুলাই ঘোষণাপত্রকে তারা প্রত্যাখ্যান করবে।
রবিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণঅধিকার পরিষদের এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি, ইতোমধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্রের তারিখ ও সময় নির্ধারণ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু এ বিষয়ে বিপ্লবের অংশীজনদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি সরকার। জুলাই কারও একার নয়, জুলাই আমাদের সবার। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান শুধু ৩৬ দিনের আন্দোলনে সৃষ্টি হয়নি। দীর্ঘ ১৪-১৫ বছরের ধারাবাহিক লড়াইয়ের শেষ পরিণতি লাভ করে গত বছরের জুলাই মাসে এসে। সুতরাং যারা গণঅভ্যুত্থানকে শুধু ৩৬ দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায়, তাদের উদ্দেশ্য মূলত অতীতের সব সংগ্রামকে অস্বীকার করা।
তিনি বলেন, বিশেষ করে ২০১৩ সালে শাপলাচত্বরে গণহত্যা এই দেশের আলেমসমাজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জাগ্রত করে তোলে। ২০১৫ সালের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী করে তোলে। আর ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের আপোষহীন নবজাগরণ হাসিনার মসনদে আঘাত করে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়, আর কোনো কোটাই থাকবে না। তখন এই দেশের মানুষের মধ্যে সাহসের বীজ বপন হয় যে, হাসিনার মাথা নত করা যায়। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সাহস পায় স্কুল-কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন, ২০১৮ সালের নিশিরাতের নির্বাচন এবং ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচন এই দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের মনের মধ্যে ভোটাধিকার হরণের তীব্র ক্ষোভের বাসা বাঁধে। এ ছাড়া ফ্যাসিস্ট হাসিনা রেজিমে শিক্ষাঙ্গনে গেস্টরুম-গণরুমের নির্যাতন, মাফিয়া লীগের খুন-ধর্ষণ, টেন্ডারবাজি, পতিত হাসিনা সরকারের সমালোচনাকারী এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা-মামলা-নির্যাতন ইত্যাদি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে একটা প্রতিবাদের সুপ্ত আগ্নেয়গিরি তৈরি করে। মার খেয়ে আহত হয়ে হাসপাতাল থেকে ফিরে এসে, মামলা খেয়ে জেলে গিয়ে সেখান থেকে ফিরে এসে আবারও প্রতিবাদের অগ্নিশিখা জ্বালিয়ে রাখা- এর মধ্য দিয়ে এ দেশের প্রতিবাদী তরুণ-তরুণীরা দেশের মানুষের মনস্তত্ত্বে একটা বিপ্লব সৃষ্টি করে।
রাশেদ খান বলেন, ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্টের এক রায়ের মাধ্যমে কোটা ফিরে এলে ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের পরিপত্র বহালের দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাজপথে নামে। এর প্রেক্ষিতে হাসিনা গুলি করে শিক্ষার্থীদের হত্যার নির্দেশনা দিলে কোটা সংস্কার আন্দোলন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনে রূপ নেয়। অগণিত জীবন ও অঙ্গহানির দ্বারা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বিদায় করে এই দেশের মুক্তিকামী জনতা। ফলে নতুন বাংলাদেশ গঠনে বিপ্লবের ধারক-বাহক হবেন এই তরুণ ও মুক্তিকামী জনতা। দল-মত নির্বিশেষে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল ও সরকারের জায়গা থেকে বিপ্লবী তরুণ ও মুক্তিকামী জনতার এই অবদানের স্বীকৃতি দিতে হবে। এই ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েই বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।
গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন- দলের সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উচ্চতর পরিষদের সদস্য শাকিল উজ্জামান, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, অ্যাডভোকেট সরকার নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিলু খান, সহ-দপ্তর সম্পাদক শাহ মুহাম্মদ সাগর, ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আখতারুজ্জামান সম্রাট প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/০৩আগস্ট/জেবি)

মন্তব্য করুন