ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলির নির্দেশদাতা
অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হলো র্যাব ডিজির সেই স্টাফ অফিসারকে
ঢাকাটাইমসে সংবাদ

র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন— র্যাব মহাপরিচালকের (ডিজি) স্টাফ অফিসার বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা মীর আবিদুর রহমানকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকাটাইমসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি, অপারেশন) কর্নেল ইফতেখার আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘আবিদুর রহমানকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ কোথায় পদায়ন করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আদেশ দেখে বলতে হবে।’
সূত্র জানিয়েছে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবিদুর রহমানকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে র্যাব-৪’এ পদায়ন করা হয়েছে। তবে তিনি ব্যাটালিয়নটিতে যোগ দেননি; র্যাব সদরদপ্তরেই রয়েছেন। তাকে যেকোনো সময় র্যাব থেকে পুলিশ সদরদপ্তরে সরিয়ে নেওয়া হতে পারে।
এদিকে র্যাব ডিজির স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ৩১ ব্যাচের কর্মকর্তা এ বি এম মুজাহিদুল ইসলাম। তিনি র্যাবের গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার ডিজির স্টাফ অফিসার হিসেবে তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। গত ২৯ জুলাই পুলিশপ্রধান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে মুজাহিদুল ইসলামকে র্যাব থেকে বদলি করে পুলিশ সদরদপ্তরে পদায়ন করা হয়।
গতকাল বুধবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবিদুর রহমানকে নিয়ে ঢাকাটাইমস একটি সংবাদ প্রকাশ করে। যার শিরোনাম ছিল — ‘‘পরিচয় দিতেন ছাত্রলীগের ‘টোকাই কর্মী’: আন্দোলনে গুলির নির্দেশদাতা আবিদুর রহমান র্যাব ডিজির স্টাফ অফিসার, নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন’’। সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। তারপরই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো বিতর্কিত এই পুলিশ কর্মকর্তাকে।
ঝিনাইদহে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও গুলির নির্দেশ দিয়ে ভাইরাল হন আবিদুর রহমান। তিনি বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ৩৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা।
২০২৩ সালের ৩ মে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) হিসেবে দায়িত্ব পান আবিদুর রহমান। ‘দলবাজ’ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত আবিদ ১৯ আগস্ট ঝিনাইদহে সাধারণ ছাত্রদের তোপের মুখে কর্মস্থল থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন।
এর ছয়দিন পর ২৫ আগস্ট আবিদুর রহমানকে র্যাবে পদায়ন করা হয়। চলতি বছরের শুরুতে তিনি র্যাব মহাপরিচালকের স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পান।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ ও র্যাব-১১ পরিদর্শনে যান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম। এসময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পুলিশ কর্মকর্তা আবিদুর রহমানের সঙ্গে হাত মেলান। এরপরেই আবিদুর রহমান র্যাব ডিজির স্টাফ অফিসার বিষয়টি সামনে আসে।
আবিদুর রহমানের আগের অপকর্ম সম্বলিত একটি ভিডিও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে— ঝিনাইদহে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কীভাবে গুলি চালাতে হয় সেটা শেখাচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা আবিদুর রহমান। ভাইরাল ওই ভিডিও’র ক্যাপশনে লেখা ছিল— ‘জুলাই বিপ্লবে ঝিনাইদহে ছাত্র-জনতার বুকে কীভাবে গুলি চালাতে হবে তা শেখানো সেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার র্যাবে গুরুত্বপূর্ণ পোস্টিং নিয়ে দায়িত্ব পালন করছে।’
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ১৯ আগস্ট আবিদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঘেরাও করে আন্দোলন করে ছাত্র-জনতা। বিষয়টি আগাম টের পেয়ে কর্মস্থল থেকে পালিয়ে যান আবিদুর রহমান।
অভিযোগ রয়েছে— ঝিনাইদহে কর্মরত অবস্থায় আবিদুর রহমান নিজেকে ছাত্রলীগের ‘টোকাই কর্মী’ পরিচয় দিতেন। ছাত্র আন্দোলনের সময় এই পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকা ছিল ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনীর মতো। একই অভিযোগ তুলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ঝিনাইদহ জেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী সাকিব মোহাম্মদ আল হাসান বুধবার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আন্দোলন সংগ্রামের সময় ছাত্রদেরকে ওপর গুলি নির্দেশ দেওয়াসহ যত রকমের হয়রানি আছে তার নেতৃত্ব দিয়েছেন আবিদুর রহমান। শেখ হাসিনার পতনের পর ছাত্র-জনতা এসপি অফিস ঘেরাও করলে ঝিনাইদহ থেকে পালিয়ে যান এই পুলিশ কর্মকর্তা।’ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন এই ছাত্রনেতা।
বিষয়টি পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের নজরে আনা হলে ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি জানা নেই তবে গুরুত্বের সঙ্গে দেখব।’
আর একইদিন রাতে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এসব সেনসেটিভ জায়গায় কাকে নিয়োগ দেওয়া হয় সেটা ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে দেওয়া উচিত। তার পদায়নের ঘটনায় যারা জড়িত অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া দরকার।’

মন্তব্য করুন