জবি শিক্ষার্থীদের সনদ পেতে দপ্তরে-দপ্তরে ধরনা, অটোমেশনের দাবি

জবি প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০২ আগস্ট ২০২৫, ১২:৩৪
অ- অ+

স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) শেষ করার পর সনদ উত্তোলনের প্রক্রিয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় নানা প্রশাসনিক জটিলতায়। আবেদনপত্র, ফি জমার রশিদ, বিভাগীয় সাক্ষর, গ্রন্থাগার ও প্রক্টর দপ্তরের ছাড়পত্রসহ অন্তত চার-পাঁচটি দপ্তরে ঘুরতে হয় তাদের। এতে সময় নষ্টের পাশাপাশি মানসিক হয়রানির শিকার হন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, সনদ তুলতে হলে শিক্ষার্থীকে প্রথমে নির্ধারিত ফি জমা দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত ব্যাংক শাখায় যেতে হয়। ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট উত্তোলনের রশিদ সংগ্রহ করতে হয়।

এরপর আবেদনপত্র ও ফরম পূরণ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সভাপতির স্বাক্ষর নিতে হয়। এই ফরমের সাথে পূর্বে জমা দেওয়া সনদ চাওয়ার আবেদনপত্র যুক্ত করতে হয়। বিভাগীয় সভাপতির স্বাক্ষরের পর শিক্ষার্থীকে যেতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে। যদি কারো নামে কোনো বই কিংবা লাইব্রেরি কার্ড থাকে, তাহলে তা ফেরত দিয়ে ছাড়পত্র নিতে হয়।

গ্রন্থাগারের ছাড়পত্র নেওয়ার পর শিক্ষার্থীকে যেতে হয় প্রক্টর দপ্তরে। সেখান থেকেও নির্ধারিত ফরমে স্বাক্ষর নিতে হয়। সবশেষে আবেদনপত্র, ব্যাংকের রশিদ, গ্রন্থাগার ও প্রক্টর অফিসের ছাড়পত্রসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে জমা দিতে হয়। সাধারণত এক সপ্তাহ পর শিক্ষার্থীকে সনদ নিতে বলা হয়।

তবে মূল সনদে ফলাফল প্রকাশের তারিখ উল্লেখ না থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আলাদা একটি প্রত্যয়নপত্র নিতে হয়। আর সমাবর্তন না হলে মূল সনদের জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি, অনলাইনভিত্তিক অটোমেশন প্রক্রিয়া চালু করা গেলে এই হয়রানি অনেকটাই কমে আসবে।

এই দীর্ঘ ও সনাতনী পদ্ধতি নিয়ে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, পুরো প্রক্রিয়াটাই অপ্রয়োজনীয়ভাবে জটিল। যেসব কাজ অনলাইনে কয়েক মিনিটে করা সম্ভব, সেগুলোতেই আমাদের পুরো সপ্তাহ লেগে যায়। স্নাতক পর্যায়ের সব ফি আমরা অনলাইনেই দিয়েছি, তাহলে সনদ নিতে ব্যাংকে লাইনে দাঁড়াতে হবে কেন? এছাড়া একটি অফিস বন্ধ থাকলেই পুরো প্রক্রিয়া থেমে যায়। এটি অব্যবস্থাপনার চরম উদাহরণ।

মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী তারিক হাসান বলেন, সনদ তুলতে বিভিন্ন দপ্তরে গেলে অনেক সময় অফিসের লোকজন এমন ব্যবহার করেন যেন আমরা ভুল করে সেখানে গেছি। সঠিকভাবে জানতে না পারলে একই কাগজ নিয়ে বারবার ঘুরতে হয়। কোনো তথ্য পরিষ্কার করে বলা হয় না। এই অনিশ্চয়তা ও দাপ্তরিক কাঠামো শিক্ষার্থীদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক সূত্র জানায়, বেশ কয়েকবার অটোমেশন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাজেট সংকটের কারণে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। তবে নতুন প্রশাসন সেই উদ্যোগ আবার চালু করতে চাচ্ছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান বলেন, আমরা সবসময় চাই শিক্ষার্থীদের এসব প্রক্রিয়া কিভাবে আরও সহজিকরণ করা যায়। আমাদের অনেক ক্ষেত্রেই অটোমেশনের প্রক্রিয়া চলছে। এটাও আমাদের ভাবনায় আছে। কিন্তু কাঠামো রেডি করতে একটু সময় লাগবে। এখনো কোনো টার্গেট ঠিক করা হয়নি। তবে প্রশাসন এ সম্পর্কে ভাবছে। আমাদের নেক্সট প্লানের মধ্যে আমরা এটা রেখেছি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, শিক্ষার্থীদের সনদ উত্তোলনের ক্ষেত্রে যে জটিলতা রয়েছে, তা আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করছি। সনাতনী পদ্ধতির কারণে শিক্ষার্থীদের বারবার বিভিন্ন দপ্তরে যেতে হচ্ছে, যা সত্যিই ভোগান্তির। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীরা রেজাল্ট অনলাইনেই দেখতে পাচ্ছে সেই ব্যবস্থা করেছি। ক্লাস মনিটরিং ব্যবস্থা চালু হয়েছে। তবে সার্টিফিকেট তুলতে অটোমেশন চালু করার বিষয়টি একটু সময়সাপেক্ষ। আমরা দ্রুতই এটি চালু করার চেষ্টা করবো।

(ঢাকা টাইমস/০২আগস্ট/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
দেশ ছেড়ে পালালেন ফ্লাইট এক্সপার্টের মালিক, বন্ধ অফিস-ওয়েবসাইট
বিদেশ মানেই বেহেশত নয়: আসিফ নজরুল
৩৭তম বিসিএস পুলিশ ব্যাচের নেতৃত্বে বাসার-মেহেদী
ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা