দেশ ছেড়ে পালালেন ফ্লাইট এক্সপার্টের মালিক, বন্ধ অফিস-ওয়েবসাইট

বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন ফ্লাইট বুকিং প্ল্যাটফর্ম ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’-এর কার্যক্রম হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ পাওয়া গেছে প্রতিষ্ঠানটির অফিস, আর অনুপস্থিত ওয়েবসাইটও। অভিযোগ উঠেছে, মালিকপক্ষ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন, আর শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ এখন অনিশ্চয়তায়।
শনিবার সকাল থেকে কারওয়ান বাজারে ফ্লাইট এক্সপার্টের প্রধান কার্যালয় তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়। তাদের ওয়েবসাইটেও প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সূত্রপাত হয়।
প্রতিষ্ঠানটির সেলস বিভাগের একজন কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বলেন, “গতরাতেই আমাদের মালিক দেশ ছাড়েন। আমরা কেউ কিছু জানতাম না। এখন মতিঝিল থানায় যাচ্ছি বিষয়টি জানাতে।”
অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র অভিযোগ
ফ্লাইট এক্সপার্টের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) সালমান প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এক বার্তায় লিখেছেন, “সাঈদ, হোসাইন এবং সাকিব মিলে পরিকল্পিতভাবে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। গত বৃহস্পতিবারের মিটিংয়ে সব দায় আমার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়—সেটিও ছিল পূর্বপরিকল্পিত।”
সালমান দাবি করেন, ওই তিন কর্মকর্তা কোম্পানির প্রায় ৩ কোটি টাকা নিজেদের কাছে তুলে নিয়েছেন, যার ফলে কোম্পানি কার্যত অচল হয়ে গেছে। তিনি আরও লেখেন, “হুমকি এবং দায় চাপানোর মধ্যে পড়ে আমি ছুটি নিয়েছি, তবে এভাবে চলে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার ছিল না।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া:
ফ্লাইট এক্সপার্টের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ঢুঁ মারলে দেখা যায়, সর্বশেষ পোস্টটি ছিল হজ ২০২৬ নিয়ে। সেখানে রেজিস্ট্রেশন ও প্যাকেজ মূল্য জানানো হয়েছিল। পোস্টটির মন্তব্যে অনেক গ্রাহক হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জয়িতা আফরিন নামে এক গ্রাহক লিখেছেন, “ফ্লাইট এক্সপার্টের মতো ট্রাস্টেড কোম্পানি যদি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়, তাহলে আমরা কাকে বিশ্বাস করব?”
উত্থান থেকে পতন: কীভাবে গড়ে উঠল ফ্লাইট এক্সপার্ট?
২০১৭ সালের মার্চে একটি জমকালো লঞ্চ ইভেন্টের মাধ্যমে ফ্লাইট এক্সপার্টের পথচলা শুরু হয়। খুব অল্প সময়েই এটি দেশের অনলাইন ট্রাভেল ইন্ডাস্ট্রিতে শীর্ষ নাম হয়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠানটি দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্সের টিকিট বুকিং, হোটেল রিজার্ভেশন, ট্যুর প্যাকেজ এবং ভিসা প্রসেসিংয়ের মতো নানা সেবা দিত।
গ্রাহকদের জন্য ছিল সাশ্রয়ী মূল্যের টিকিট বুকিং, আকর্ষণীয় অফার এবং সহজ পেমেন্ট অপশন। এর সুবাদে প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং শতাধিক ট্রাভেল এজেন্সি তাদের প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগ করে।
আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে ভুক্তভোগীরা
এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রেস রিলিজ না এলেও, একাধিক ট্রাভেল এজেন্সি জানায়, তারা আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর মধ্যে অনেকেই মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন বা করছেন বলে জানা গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনা শুধু অনলাইন ব্যবসায় বিশ্বাসযোগ্যতার সংকটই তৈরি করেনি, বরং নজরদারি ব্যবস্থার দুর্বলতাকেও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/৩আগস্ট/এলএম)

মন্তব্য করুন