গণতন্ত্রের পথকে দীর্ঘায়িত করলে দেশের মানুষ আবার জেগে উঠবে: মঈন খান

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া উত্তরণের পথকে দীর্ঘায়িত করলে দেশের মানুষ আবার জেগে উঠবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
মঈন খান বলেন, গণতন্ত্রের উত্তরণের যে প্রচেষ্টা নিয়ে দীর্ঘ পনেরো-ষোলো বছর ধরে বাংলাদেশের সকল গণতন্ত্রকামী মানুষ এবং রাজনৈতিক দলগুলো যে আন্দোলন করেছে, সেই প্রত্যাশা কি পূরণ হয়েছে? দীর্ঘ এক বছরে হয় নি। কেন হয় নি? আমরা তো অতীতে উদাহরণ দেখেছি। ৯০ দিনের ব্যবধানে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। আমাদের চোখের সামনে সেই উদাহরণ আছে।
তাহলে কি আমরা সেই প্রশ্ন করতে পারি না? দীর্ঘ এক বছরের ব্যবধানে কেন আমরা উত্তরণ করতে পারিনি? আজকে আমাদের জবাবদিহি করারও প্রয়োজন আছে।
তিনি বলেন, আমার মাঝে মাঝে মনে হয় নতুন বন্দোবস্ত, আবার যেন চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরিণত না হয়ে যায়। আমরা পরিবর্তন চাই কিন্তু, সব পরিবর্তন কিন্তু পরিবর্তন নয়।১/১১ এর সময় ঢাকা শহরের প্রত্যেক জায়গায় একটা গোষ্ঠী ব্যানার ফেস্টুন করে ছিল সবকিছু বদলে দাও, পাল্টে দাও।
পৃথিবীর সবকিছু বদলে দেওয়া যায় না, পাল্টে দেওয়া যায় না, সেটা আমি তখনও বলেছিলাম। পরিবর্তনের কথা যখন আমরা বলি, পরিবর্তন পরিবর্তনের জন্য নয়, কোনটা চিরন্তন সত্য। বিভেদ কিন্তু আমাদের স্মরণ রাখতে হবে। অন্যথায় আমাদের সেই সকল প্রচেষ্টা ভুলে পরিণত হবে এবং তাই হচ্ছে।
মঈন খান বলেন, সংস্কার সেই প্রসঙ্গেই বলেছি, সংস্কার কিন্তু সংস্কারের জন্য নয়। কসমেটিক পরিবর্তন দিয়ে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন সম্ভব হবে না। সংবিধানের কিছু বাক্যের যদি আমরা পরিবর্তন করি, সংবিধানের পরিবর্তন কেন আপনারা যদি পুরো সংবিধান পাল্টেও দেন তাহলে কোন লাভ হবে না। যারা সংবিধান পরিবর্তন করে এই দেশের আমরা যারা মানুষের অন্তরের যদি পরিবর্তন না হয়।
‘বাংলাদেশের আঠারো কোটি মানুষ একটা স্বাধীন দেশ চেয়েছিলো কেন? এই দেশে গণতন্ত্র থাকবে। পাকিস্তানের থেকে এই দেশে গণতন্ত্র সম্ভব নয় সেটা বিশ্বাস করেই আমরা একটা আলাদা রাষ্ট্র চেয়েছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনুরোধ করবো, আপনারা এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উত্তরণের পথকে দীর্ঘায়িত করবেন না, তাহলে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ আবার জেগে উঠবে।’
ন্যায় বিচার হলে ১৬শ মানুষ হত্যার বিচার ১৬শ বছরেও সম্ভব নয় বলে দাবি করে মঈন খান বলেন, সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন ১৬শ খুনের ১৬শ মামলা হবে। ১৬শ হত্যাকাণ্ডের জন্য যদি ১৬শ মামলা হয়, আমরা যদি আধুনিক বিচার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যাই এবং সেখানে যদি ন্যায় বিচারের চেকস এন্ড ব্যালেন্স দিয়ে যাই। তাহলে এই ১৬শ হত্যার বিচারে ১৬শ বছর লাগবে।
সাধারণ অপরাধের জন্য আমরা সিআরপিসি ব্যবহার করি, বাংলাদেশে যে অপরাধ হয়েছে সেটা কিন্তু সাধারণ অপরাধ নয়। এটা বুঝতে হবে। এই অসাধারণ অপরাধের জন্য, একটি সাধারণ আইন দিয়ে এই অসাধারণ অপরাধের বিচার করা সম্ভব নয়। কোন দিন সম্ভব হবে না।
‘এই পরিস্থিতিতে, ১৬শ হত্যার জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট। যেখানে সেই ১৬শ হত্যা হয়েছে, তারা হবেন বাদি, যেহেতু তারা নিহত হয়েছে সরকার বাদি হবেন। একটি মামলাই যথেষ্ট। একটি মামলায় এই ১৬শ হত্যার জন্য যদি ১৬ হাজার অপরাধী হয়ে থাকে তাদের প্রত্যেকে এই মামলার আসামি হবেন এবং একটি মামলার বিচারের এই ১৬ হাজারের বিচার একটি রায়ে করা সম্ভব এবং এই বিচার ১৬ ঘণ্টায় করা সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘যদি কোন সৎ সাহসী সরকার থাকেন, যারা আইনের শাসনে বিশ্বাস করেন, ন্যায়ে বিশ্বাস করেন, মানবাধিকারে বিশ্বাস করেন তাদের এই বিচার করার জন্য ১৬ ঘণ্টার বেশি সময় লাগবে না।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, অতীতে তিন মাসের মধ্যেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন করেছেন, ১ বছর পরেও কোন নাগরিক এখনও পর্যন্ত আস্থা রাখতে পারছেন না, কোথায় কোন পরিবেশে অবাধ সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন করতে পারবো কি না। কিন্তু পুরো জিনিসটা এভাবে ছড়িয়ে ফেলবেন বর্তমান সরকার সেটা বুঝতে পারি নি। বৈষম্য তো বিলোপ হয় নি, বৈষম্য ছড়িয়ে পড়েছে। দারিদ্র বৃদ্ধি পেয়েছে, না খাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। কর্মহীনতা বেড়েছে। বিনিয়োগের পরিস্থিতি একটা নেতিবাচক জায়গায় এসে পৌঁছেছে।
এর মধ্যে কেবল একটা ভালো খবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ৩৫ ভাগ থেকে কমিয়ে ২০ ভাগ করেছে। সেখানে কীসের বিনিময়? বাংলাদেশকে কী কী দিতে হবে, এটা আমরা জানি না। কী কীর বিনিময় যার সাথে আমার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার ঝুঁকি আছে কি না, সরকারকে এটা জনসম্মোখে এনে দেশবাসীকে জানাতে হবে। এই শুল্ক কমানোর পেছনে কি কি রাজনীতি কাজ করেছে , এই বিষয়টা উন্মোচন করবেন। তথ্য মানুষের কাছে নিয়ে আসবেন।
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে গণঅভ্যুত্থানকে এক বছর পরেও সরকার ধারণ করতে পারেনি। অনেকেই চেতনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। বাংলাদেশ একটা বিরাট নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে আছে। নির্বাচন যত বিলম্বিত হবে বাংলাদেশের ভেতরে এবং বাইরে নিরাপত্তা ঝুঁকি তত বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নূর, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বক্তব্য দেন।
(ঢাকা টাইমস/০২আগস্ট/জেবি/এসএ)

মন্তব্য করুন