বরিশাল-৩: সেলিমা-জয়নুলে বিভক্ত বাবুগঞ্জ-মুলাদী বিএনপি, এগিয়ে কে?

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৭ আগস্ট ২০২৫, ১৯:১৯| আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৫, ১৯:৩৩
অ- অ+

দীর্ঘ দেড় যুগের বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছে দলটি।

জনগণের নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। এই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সারা দেশে বইছে আগাম নির্বাচনী হাওয়া।

তিনবার দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতাপুষ্ট বিএনপি ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে যখন ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, ঠিক তখন দেশের বিভিন্ন সংসদীয় আসনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে দলের অভ্যন্তরীণ প্রার্থী মনোনয়ন-যুদ্ধ। তেমনই একটি আসন বরিশাল-৩।

বাবুগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চান দলের দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। একদিকে আছেন দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, বর্ষীয়ান রাজনীতিক বেগম সেলিমা রহমান। অন্যদিকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান, সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন।

দুজনেরই রয়েছে দলে দীর্ঘদিনের অবদান, স্বীকার করেছেন ত্যাগ-তিতিক্ষা। কিন্তু আসন একটাই, আর প্রার্থী দুজন। তাদের ঘিরে বরিশাল-৩ আসনে বিএনপি এখন কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত।

সবার মধ্যে কৌতূহল- কার হাতে উঠবে ধানের শীষের ঝাণ্ডা? দলের হাইকমান্ড কি আস্থা রাখবে সেলিমা রহমানের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও পারিবারিক ঐতিহ্যের ওপর? নাকি বেছে নেবে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের আইনি লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা আর তৃণমূলে দলের নিয়ন্ত্রণকে?

বেগম সেলিমা রহমান কেবল একজন রাজনীতিবিদই নন, তিনি এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক পরিবারের উত্তরাধিকারী। তার বাবা বিচারপতি আব্দুল জব্বার খান ছিলেন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার। তার ভাইদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের রাজনীতির আলোচিত নাম ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জিয়াউর রহমান সরকারের মন্ত্রী ও প্রখ্যাত সাংবাদিক এনায়েতউল্লাহ খান, এরশাদ সরকারের মন্ত্রী ও বিশিষ্ট কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, প্রখ্যাত সাংবাদিক-কলামিস্ট সাদেক খান ও প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজ-এর প্রকাশক শহীদুল্লাহ খান।

তাদের এক ভগ্নিপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস ছিলেন ১৯৯১ সালের বিএনপির আমলে দেশের রাষ্ট্রপতি। এমন এক পরিবারে বেড়ে ওঠা সেলিমা রহমান রাজনীতিতে আসবেন, এটাই ছিল স্বাভাবিক।

বিএনপির দুঃসময়ের কান্ডারি হিসেবে পরিচিত সেলিমা রহমান আগে ছিলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব ও ভাইস-চেয়ারম্যান। বর্তমানে তিনি স্থায়ী কমিটির সদস্য। ২০০১ সালের বিএনপি সরকারে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। আওয়ামী লীগ আমলে বারবার ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়েছেন। গাড়ি পোড়ানো, পুলিশকে মারধরের মতো ভৌতিক মামলায় একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে কারাবাস করেছেন। আন্দোলন-সংগ্রামে তার ত্যাগ প্রশ্নাতীত। বাবুগঞ্জের সন্তান হওয়ায় এলাকার মানুষের সাথেও রয়েছে তার নাড়ির টান। তবে সেলিমা রহমানের দুর্বলতা তার বার্ধক্য, শারীরিকভাবে তিনি অনেকটাই দুর্বল।

মনোনয়ন দৌড়ে থাকা আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। তিনি দলের ভাইস চেয়ারম্যান, আইন অঙ্গনের পরিচিত মুখ। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে তার রয়েছে ব্যাপক প্রভাব। তিনি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামেরও সভাপতি।

আইনি লড়াইয়ে বিএনপির অন্যতম প্রধান ভরসা জয়নুল আবেদীন। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে অসংখ্য নেতাকর্মীর মামলা তিনি লড়েছেন সামনে থেকে। রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমেও সরকারকে চাপে রাখতে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য।

২০১৮ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে বরিশাল-৩ আসনে জয়নুল আবেদীন ছিলেন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী। বর্তমানে বাবুগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলা বিএনপির কমিটিতে তার অনুসারীদের রয়েছে শক্ত অবস্থান। এটি তাকে তৃণমূলের রাজনীতিতে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে।

এই দুই হেভিওয়েট নেতার পক্ষে-বিপক্ষে বাবুগঞ্জ-মুলাদী বিএনপির নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যে, একই দিনে একই উপজেলায় পৃথক কর্মসূচি পালন করেছেন এই দুই নেতা। তাদের অনুসারীরা মনে করে নিজেদের নেতাই মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে।

সেলিমা রহমানের অনুসারীরা মনে করেন, তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দলে তার অবস্থান এবং পারিবারিক ঐতিহ্য তাকে এগিয়ে রাখবে। অন্যদিকে, জয়নুল আবেদীনের সমর্থকদের দাবি- তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণ এবং গত নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় তিনিই এবার মনোনয়ন পাওয়ার প্রধান হকদার।

এই বিভক্তি স্থানীয় বিএনপিতে তৈরি করেছে এক ধরনের অস্থিরতা। কর্মীরা বিভ্রান্ত। কে পাবেন মনোনয়ন, কী বিবেচনা করবে দলের হাইকমান্ড- সেলিমা রহমানের অভিজ্ঞতা ও ত্যাগ, নাকি জয়নুল আবেদীনের আইনি দক্ষতা ও তৃণমূলের শক্তি?

বরিশাল-৩ আসনে ধানের শীষের কাণ্ডারি কে হচ্ছেন, তা সময়ই বলে দেবে। আর সেই সময়্ও খুব বেশি দিন দূরে নয়।

(ঢাকাটাইমস/১৭আগস্ট/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: স্মারকলিপি দেওয়া নিয়ে হইচই, কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
ক্রীড়া উপদেষ্টার স্বেচ্ছাচারিতায় ক্রীড়াঙ্গন ধ্বংসের পথে: আমিনুল হক
মেগা দুর্নীতি করে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছেন শেখ হাসিনা: কামাল জামান মোল্লা
আধাঘন্টা পর মহাখালীর পেট্রোল পাম্পের আগুন নিয়ন্ত্রণে
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা