জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬
কিশোরগঞ্জ-৫: ইকবালই তৃণমূল বিএনপির পছন্দ, চ্যালেঞ্জও কম নয়

দেশের রাজনীতিতে বইতে শুরু করেছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হওয়া। জামায়াতে ইসলামী, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন দল এলাকাভিত্তিক প্রার্থী বাছাই ও ঘোষণা দিচ্ছে বেশ আগে থেকে। অবশ্য এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় দল বিএনপির মধ্যে এমন কর্মকাণ্ড এখনো প্রকাশ্য হয়নি। তবে দলীয় নেতাদের মনোনয়ন লড়াইয়ে জমে উঠেছে বিভিন্ন এলাকা। তেমনই একটি নির্বাচনী এলাকা জাতীয় সংসদের কিশোরগঞ্জ-৫ আসন।
বিএনপির অভ্যন্তরীণ মনোনয়ন লড়াইয়ের পাশাপাশি এখানে উঠে এসেছে জোটসঙ্গী আরেক দলের নেতার নাম। তিনিও পেয়ে যেতে পারেন ধানের শীষের বর। তবে এই আসনে বিএনপি কোনো প্রার্থী না দিলে, বিশেষ করে শেখ মুজিবুর রহমান ইকবালের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত হলে, উল্টে যেতে পারে সব হিসাব-নিকাশ।
একসময় কিশোরগঞ্জ জেলায় ছিল সাতটি সংসদীয় আসন। নিকলী ও বাজিতপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসনের নাম ছিল কিশোরগঞ্জ-৬। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্বিন্যাসে কিশোরগঞ্জ জেলায় একটি আসন কমে যায়। তখন থেকে নিকলী ও বাজিতপুর নিয়ে আসনটি হয়ে যায় কিশোরগঞ্জ-৫।
বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত এই নির্বাচনী এলাকায় ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে জয় পেয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন ও ২০০১ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন মুজিবুর রহমান মঞ্জু। ২০০১ সালে তার সাথে নির্বাচনী লড়াইয়ে পরাজিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের একসময়ের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান, যিনি শেখ হাসিনার সরকারের আমলে ২০০৯ সালে রাষ্ট্রপতি হন। ২০১৩ সালে মারা যান তিনি। এর দুই বছর পর ২০১৫ সালে মারা যান বিএনপির নেতা মুজিবুর রহমান মঞ্জু।
আগামী সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় নামটি হলো দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল। তিনি ২০১৮ সালে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন। ওই সময় তার প্রাণনাশের জন্য গ্রামের বাড়িতে উপর্যুপরি গুলিবর্ষণ হয়েছে। রাতের ভোটে জোর করে পরাজিত করানো হয় তাকে।
এই আসনে সাবেক পৌর মেয়র এহসান কুফিয়াও মনোনয়ন-প্রত্যাশী। প্রবীণ নেতা মীর মোহাম্মদ জলিল হোসেন, সাবেক এমপি মজিবুর রহমান মঞ্জুর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান মামুনও আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যায়।
তাদের মধ্যে কার হাতে উঠবে ধানের শীষের ঝাণ্ডা? কান পাতলে তৃণমূলে শোনা যায় শেখ মুজিবুর রহমান ইকবালের নাম। আওয়ামী লীগের ১৭ বছরের জুলুম-নির্যাতনে দলের নেতাকর্মীদের আগলে রাখায় এই ইকবালের জুড়ি মেলা ভার ছিল। এছাড়া সব স্তরের মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থেকে অন্য রকম এক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল । তবে জোটের উছিলায় ধানের শীষ পেতে চান এমন একজন নেতা, যার দলের কোনো সাইনবোর্ড পর্যন্ত নেই এলাকায়।
বিএনপিতে মনোনয়ন দৌড়ে কেন একচেটিয়া অবস্থান ইকবালের? দলের নেতাকর্মীদের ভাষ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামে ইকবাল ছিলেন সামনের সারিতে। নিকলী ও বাজিতপুরে বিএনপিতে গড়ে তুলেছেন নিজের শক্তিশালী কর্মীবাহিনী। আওয়ামী লীগ সরকারের সব মিথ্যা মামলায় নেতাকর্মীদের আইনি সহায়তা দেওয়া, আর্থিক সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে তিনি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন।
স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়তার পাশাপাশি দলের হাইকমান্ডের সাথে যোগাযোগ ইকবালকে মনোনয়ন লড়াইয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে রেখেছে বলেই মনে করেন কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।
বিএনপির মনোনয়নযুদ্ধে মুজিবুর রহমান ইকবালের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বাজিতপুরের সাবেক পৌর মেয়র এহসান কুফিয়া। স্থানীয়ভাবে তিনি গণসংযোগের মাধ্যমে নিজের প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন। আরো কয়েকজন নেতা আলোচনায় থাকলেও মনোনয়ন লড়াইয়ে তাদের সম্ভাবনা খুবই কম।
বিএনপির এই দুই নেতার লড়াইয়ের মধ্যেই আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে জোটের রাজনীতি। বিএনপির নেতৃত্বে বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে ১২ দলীয় জোট। বর্তমানে এই জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা। তিনিও এই আসন থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। তাকে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
তবে তৃণমূলে সৈয়দ এহসানুল হুদা ও তার দলের কোনো অবস্থান নেই। তার প্রয়াত বাবা সৈয়দ সিরাজুল হুদা বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন এমনকি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নিয়ে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে আলোচনা-সমালোচনার খোরাক ছিলেন বিভিন্ন সময়।
সৈয়দ এহসানুল হুদা প্রচার-প্রচারণায় দাবি করছেন, জোটগতভাবে নির্বাচন হলে জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেতে পারেন তিনি। কিন্তু তার এমন প্রচার তৃণমূলে কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না। তৃণমূলের বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের পরীক্ষিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের পেছনেই একাট্টা ।
কেন্দ্রীয় বিএনপি এই পরিস্থিতিতে সৈয়দ এহসানুল হুদাকে আদৌ সমর্থন দেবে কি না বা দিলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাকে কতটা গ্রহণ করবেন, তা অনেক চিন্তার বিষয়। কারণ অতীতেও এই আসনে জোটের প্রার্থী নিয়ে স্থানীয় বিএনপিতে অসন্তোষ দেখা গেছে। তাই এহসানুল হুদা শেষমেশ ঢাকায় প্রার্থিতা চাইবেন- এমন গুঞ্জন আছে।
সব মিলিয়ে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন লড়াইয়ের পাল্লা এক কথায় শেখ মুজিবুর রহমান ইকবালের দিকেই ঝুঁকে আছে।
একদিকে দলের পরীক্ষিত নেতারা, অন্যদিকে জোটের সমীকরণ- চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কী হয়, তা জানতে আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
(ঢাকাটাইমস/১৭আগস্ট/মোআ)

মন্তব্য করুন