প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান হতে ৩০ কোটি টাকা ঘুষ লেনদেন করেন ডা. আরিফ?

বেসরকারি প্রিমিয়ার ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন ও চেয়ারম্যান পদ পরিবর্তনে কি বিরাট অংকের টাকার ঘুষের লেনদেন হয়েছে? ভিসা ট্রেডিংয়ের জন্য সৌদি আরবে প্রবেশ নিষিদ্ধ বিতর্কিত ব্যবসায়ী ডা. আরিফুর রহমান ঘনিষ্ঠরা নিজেরাই বলাবলি করছেন ৩০ কোটি টাকা খরচ করে চেয়ারম্যান হয়েছেন যিনি তাকে সরানো অত সহজ নয়। প্রশ্ন হলো প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে চেয়ারম্যান বিতর্কিত ব্যবসায়ী ডা. আরিফকে অপসারণ করা হতে পারে বা অন্য পরিচালকদের মতো তাকেও সরিয়ে দেওয়া হতে পারে এই কানাঘুষাই বা কেন?
আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ডা. এইচ বি এম ইকবাল ও তার পরিবারের সদস্যদের যে কারণে প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকে সরানো হয়েছে একই কারণ কি পরিচালক ডা. আরিফের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য নয়? এই প্রশ্ন জোরেশোরেই উঠেছে। ঢাকা টাইমস খোঁজ নিয়ে দেখেছে, সৌদি আরবে এক সময় ভিসা ট্রেডিংয়ের জন্য বহুল বিতর্কিত ডা. আরিফ প্রিমিয়ার ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালীন ভাইস-চেয়ারম্যান। যিনি শুরু থেকেই নিজেকে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন বলে দাবি করতেন। এমনকী এক সময় যুবলীগ নেতা ছিলেন ও শেখ মনির কাছের লোক বলেও পরিচয় দিতেন।
ডা. আরিফ তাদের তদবিরে ব্যাংক পরিচালক পদে টিকে গেলেন এবং সবাইকে অবাক করে দিয়ে পর্ষদ চেয়ারম্যান পদও বাগালেন সেটা কি গভীর অনুসন্ধান ও তদন্তের দাবি রাখে না? প্রিমিয়ার ব্যাংকের প্রথম ও মধ্যম সারির একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, এটা তারা সবাই জানেন, নতুন চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী লোটাস কামালের ব্যবসায়িক পার্টনার ছিলেন। এমনকী বিদেশে লোটাস কামালের ব্যবসা টাকা পাঠানোর বিষয়টিও ডা. আরিফ দেখাশুনা করতেন। আর এই জন্যই বিশ্বাসযোগ্যতা পাচ্ছে যে মন্ত্রী হিসেবে লোটাস কামাল যখনই দেশের বাইরে যেতেন তখন তার সফরসঙ্গী হিসেবে থাকতেন ডা. আরিফ। বাংলাদেশের ব্যাংক খাত ও আর্থিক খাত লুটপাট ও ধ্বংসের অন্যতম হোতা লোটাস কামাল দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতুর নাগরিকত্ব গ্রহণ করে এখন বাদশাহি হালে দুবাইয়ে আছেন। কথিত আছে, ডা. আরিফ যিনি কানাডা ও বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক (কানাডা পাসপোর্ট নং - Ay 235236, বাংলাদেশ পাসপোর্ট নং A 01222403) নেপথ্যে থেকে পলাতক লোটাস কামালকে ভানুয়াতুর নাগরিকত্ব পেতে সহায়তা করেন।
প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক যুবলীগের রাজনীতির সাথে এক সময় যার কর্মকান্ড আলোচিত, যিনি অতিমাত্রায় হাসিনা ঘনিষ্ঠ, এমনকী দিল্লিতে পলাতক ফ্যাসিস্ট হাসিনার সাথে এখনো যার যোগাযোগ থাকার প্রবল সম্ভাবনা সেই ডা. আরিফুর রহমানকে প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ দেওয়া কতটা নিরাপদ? আর যদি ভেতরের গুঞ্জনটাই সত্যি হয়! ৩০ কোটি টাকা ঘুষ লেনদেন করে ডা. আরিফ প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান হয়েছেন। কি সাংঘাতিক কথা! শোনা যাচ্ছে, এই কাজে ডা. আরিফ প্রথমে কাজে লাগান প্রিমিয়ার ব্যাংকেরই পদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তাকে। যারা কিছুদিন আগেও বিগত ২৫ বছরের চেয়ারম্যান ডা. এইচ বি এম ইকবালের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ঢাকা টাইমস নিশ্চিত হয়ে প্রিমিয়ার ব্যাংকের কয়েকজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাসহ ডা. আরিফ একটি বড়সড় লবিষ্ঠ গোষ্ঠীর মাধ্যমে সরকারের অর্থ ও ব্যাংকিং সেক্টরের মুরুব্বীদের আশীর্বাদ লাভে সক্ষম হন। বিষয়টি ইতিমধ্যে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার নজরে এসেছে। গুঞ্জন আছে এই মুহূর্তে সরকার পরিচালনায় প্রভাব আছে এমন কয়েকজনকে প্রভাবিত করতে পারেন এইরকম দু'একজনের সাথে ডা. আরিফ ও তার ঘনিষ্ঠরা মোটা অংকের টাকার লেনদেন করেছেন। আর সেই টাকার পরিমাণ নাকি ৩০ কোটি টাকার মতো। ডাক্তার আরিফ ঘনিষ্ঠতা আছে এমন কয়েকজন প্রিমিয়ার ব্যাংক কর্মকর্তা তার হয়ে লবিং এর জন্য গত কিছুদিন ধরে গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ মন্ত্রিপাড়া ও বিভিন্ন এলাকায় যে দৌড়ঝাঁপ করেছেন তার কিছু তথ্য প্রমাণ, ভিডিও ফুটেজ পেয়েছে ঢাকা টাইমস । প্রয়োজনমত নামধাম ও ফুটেজও সময় মতো প্রকাশ করা হবে ।
হাজার হাজার কোটি টাকা জামানত থাকা প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে হাসিনা ঘনিষ্ঠ ও সাবেক অর্থমন্ত্রী লোটাস কামালের পার্টনার ডা. আরিফকে বসানো কতটা নিরাপদ হয়েছে। নামে-বেনামে ঋণ অনুমোদন দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার কাছেই তিনি অর্থপাচার করবেন না তার নিশ্চয়তা কে দেবে? আর ডা. আরিফের চেয়ারম্যান পদে থাকা অবস্থায় মঞ্জুর করা ঋণের টাকাই আবার ড. ইউনূস সরকার উৎখাতে ব্যবহার হবে না এই নিশ্চয়তা কে দিতে পারে? ঢাকা টাইমস-এর সাথে আলাপকালে প্রিমিয়ার ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তাই এই প্রশ্ন তুলেছেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পায়নি ঢাকা টাইমস।
সৌদি আরবে প্রবেশ নিষিদ্ধ, ভিসা ট্রেডিংয়ের জন্য বহুল বিতর্কিত, সাবেক অর্থমন্ত্রী লোটাস কামালের পার্টনার, সাবেক যুবলীগ নেতা, বিদেশি নাগরিক এবং ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সাথে অতীতে সর্বদা সরাসরি যোগাযোগে সক্ষম এমন একজন সন্দিগ্ধ ব্যক্তিকে প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যান পদে রাখা কতটা যৌক্তিক সেটি কি বাংলাদেশ ব্যাংক ভেবে দেখেছে? প্রিমিয়ার ব্যাংকের জনসাধারণের জামানত সুরক্ষার জন্য প্রশাসক নিয়োগ অধিক নিরাপদ নয় কি?
অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক বিশ্লেষক ড. মাহবুবুর রহমান এসব বিষয়ে ঢাকা টাইমসকে বলেন, বিগত সরকারের নীতিনির্ধারকদের সাথে যোগাযোগ ছিল এবং অর্থমন্ত্রীদের পার্টনার ছিল এমন কেউ ব্যাংক চেয়ারম্যান পদে থাকা সবভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সকল সংস্থাকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
(ঢাকাটাইমস/২৬ আগস্ট/এআরডি)

মন্তব্য করুন