ডাকসু নির্বাচন: আজ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নামছেন প্রার্থীরা

সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা। মনোনয়ন প্রত্যাহার ও যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর আজ থেকে শুরু হবে এই বহু কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনী উৎসব, যা চলবে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। দীর্ঘ বিরতির পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখন বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা ও উৎসবের আমেজ।
গতকাল সোমবার ছিল প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। নির্বাচন কমিশন আজ (২৬ আগস্ট) বিকেলে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে। এর পরপরই প্রার্থীরা স্ব স্ব প্যানেল ও ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষার্থীদের দ্বারে দ্বারে ভোট চাইতে পারবেন। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ও হল সংসদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচনের তফসিল ও প্রস্তুতি
গত ২৯ জুলাই ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তফসিল অনুযায়ী, ১২ থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত মনোনয়ন বিতরণ করা হয় এবং ১৯ আগস্ট পর্যন্ত মনোনয়ন জমা নেওয়া হয়। ২১ আগস্ট প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর গতকাল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ শেষ হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এবারের ডাকসু নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৪৮ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৮ জনসহ বিভিন্ন পদে বিপুল সংখ্যক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদের পাশাপাশি ১৮টি আবাসিক হলের সংসদেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে একজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
প্রচারণায় আচরণবিধি ও প্রশাসনের কড়াকড়ি
একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কঠোর আচরণবিধি আরোপ করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. জসিম উদ্দিন বলেন, ২৬ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা পর্যন্ত প্রার্থীরা হল ও ক্যাম্পাসে প্রচারণা চালাতে পারবেন।
আচরণবিধির উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো:
১) লিফলেট, পোস্টার ও হ্যান্ডবিলের মতো কাগজে ছা পানো প্রচারণা চালানো গেলেও ক্যাম্পাসের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে যত্রতত্র এগুলো ফেলা যাবে না।
২) কোনো প্রকার দেয়াল লিখন, ডিজিটাল ব্যানার বা বিলবোর্ড ব্যবহার করা যাবে না।
৩) প্রার্থীদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন, উপহার প্রদান বা আপ্যায়ন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
৪) নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে এমন কোনো স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম, ধর্মীয় সভা বা সমাবেশ আয়োজন করা যাবে না।
৫) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে সাইবার বুলিং প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য বা সম্মানহানিকর পোস্ট দিলে তা আচরণবিধি লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে। এ লক্ষ্যে 'ঢাকা ইউনিভার্সিটি নিরাপত্তা মঞ্চ' সহ কয়েকটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে অস্থায়ীভাবে স্থগিত রাখার জন্য বিটিআরসিকে অনুরোধ জানিয়েছে প্রশাসন।
মাঠে নেমেছে প্রধান ছাত্র সংগঠনগুলো
আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর আগেই বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ক্যাম্পাসে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও মতবিনিময় করে আসছিলেন। এবারের নির্বাচনে বেশ কয়েকটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংসদ', 'ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট', ছাত্রদল, বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের একাধিক জোট মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। প্রতিটি প্যানেলই শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের ইশতেহার তৈরির কাজ করছে।
শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও ক্যাম্পাসের চিত্র
দীর্ঘদিন পর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তারা মনে করছেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসবে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর জোরালো হবে। আবাসন সংকট, পরিবহন সমস্যা, খাবারের মান, লাইব্রেরির সুবিধা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন একাডেমিক ও আবাসিক সমস্যা সমাধানে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কার্যকর ভূমিকা রাখবেন বলে তাদের প্রত্যাশা।
তবে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কিছু ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও উঠেছে। ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা এবং সকল প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
সব মিলিয়ে, প্রচারণা শুরুর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি নির্বাচনী আবহের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আগামী দুই সপ্তাহ প্রার্থীদের প্রচারণা, বিতর্ক ও প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গন মুখরিত থাকবে, যার চূড়ান্ত রায় দেবেন শিক্ষার্থীরা আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের ভোটে।
(ঢাকাটাইমস/২৬ আগস্ট/এএইচ)

মন্তব্য করুন