রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ৭ দফা প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধন ঠেকাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একইসঙ্গে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে তিনি ৭ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন।
সোমবার (২৫ আগস্ট) কক্সবাজারের হোটেল বে ওয়াচে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সংলাপ “স্টেকহোল্ডার্স ডায়ালগ: টেকঅ্যাওয়ে টু দ্য হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন”-এর মূল অধিবেশনে এসব প্রস্তাব দেন তিনি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৭ দফা প্রস্তাব
১. রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ প্রণয়ন।
২. দাতাদের অব্যাহত সমর্থন।
৩. মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ও আরাকান আর্মির কাছে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও জীবিকা নিশ্চিত করার আহ্বান।
৪. রোহিঙ্গাদের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ ও অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা।
৫. আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা।
৬. গণহত্যার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং
৭. আন্তর্জাতিক আদালতে জবাবদিহিতা ত্বরান্বিত করা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “রোহিঙ্গাদের জন্মভূমির সাথে তাদের নাড়ির সম্পর্ক ছিন্ন করা যায় না। এখন আর কেবল বক্তব্যে সীমাবদ্ধ থাকা যাবে না। কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এখনই।”
তিনি আরও জানান, রোহিঙ্গাদের মাতৃভূমিতে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন ছাড়া টেকসই সমাধান সম্ভব নয়।
ড. ইউনূস আসিয়ান ও প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, রাখাইন ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে শান্তি-স্থিতিশীলতা নিশ্চিতের পাশাপাশি মানবপাচার, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান দমনেও উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি মনে করিয়ে দেন, ২০১৭ সালের আগস্টে মাত্র কয়েক সপ্তাহে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রিত, যা কক্সবাজারকে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে পরিণত করেছে। প্রতিবছর সেখানে প্রায় ৩২ হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “রোহিঙ্গা সংকটের সূত্রপাত মিয়ানমার থেকে, সমাধানও সেখানেই নিহিত। সকল পক্ষকে দ্রুততম সময়ে কঠিন দৃঢ়তার সাথে এই সংকটের অবসান ঘটাতে হবে।”
তিনি আশ্বাস দেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের পাশে থাকবে এবং তাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য কাজ চালিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, ইউএনএইচসিআরের সহকারী হাইকমিশনার রাউফ মাজু প্রমুখ।
সংলাপে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, জাতিসংঘের কর্মকর্তারা এবং রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
(ঢাকাটাইমস/২৫ আগস্ট/আরজেড)

মন্তব্য করুন