যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে শুধু ইশতেহার নয়, শিক্ষার্থীদের চোখ ব্যক্তির বিগত সময়ের অবস্থানে

আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের শোনাচ্ছেন নানা রকম আশাব্যঞ্জক প্রতিশ্রুতি। নির্বাচিত হলেই তার বাস্তব প্রতিফলন দেখবেন শিক্ষার্থীরা, দাবি এ সকল প্রার্থীর।
ইশতেহার কী?
ইশতেহার হলো রাজনৈতিক দল বা সরকার, ব্যক্তি, গোষ্ঠীর লিখিত ঘোষণাপত্র যেখানে ইস্যুকারীর উদ্দেশ্য বা মতামত লিখিত থাকে। ইশতেহার সাধারণত পূর্বে প্রকাশিত মতামত বা জনসাধারণের সম্মতি গ্রহণ করে বা লেখকের বিশ্বাস করা উচিত এমন পরিবর্তনগুলো সম্পাদন করার জন্য প্রেসক্রিপটিভ ধারণাসহ একটি নতুন ধারণা প্রচার করে। এটি প্রায়ই রাজনৈতিক, সামাজিক বা শৈল্পিক প্রকৃতির হয়। কখনো কখনো বিপ্লবী হয়, তবে এটি একজন ব্যক্তির জীবনের অবস্থান উপস্থাপন করতে পারে। ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত ইশতেহারগুলোকে সাধারণত বিশ্বাস বা বিশ্বাসের স্বীকারোক্তি হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
ইশতেহার কেন প্রয়োজন?
একটি ইশতেহার সাধারণ ভোটারদের একটি রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তির লক্ষ্য ও বিভিন্ন বিষয়ে নীতিগত অবস্থান সম্পর্কে অবহিত করে। তাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ইশতেহার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া ইশতেহার একটি লিখিত প্রতিশ্রুতি হিসেবে কাজ করে। যার দরুন একটি দলকে ক্ষমতায় আরোহনের পর ইশতেহারের ভিত্তিতে জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায়। একটি দল ইশতেহারে উল্লেখিত প্রতিশ্রুতি পূরনে বাধ্য নয়। তবে, নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের নৈতিক দায় থাকে ইশতেহার বাস্তবায়নের।
ইশতেহার কিভাবে প্রস্তুত করা হয়?
একটি ইশতেহার মূলত একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত করা হয়। ইশতেহার লেখা থেকে শুরু করে চূড়ান্তকরন প্রক্রিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন অংশীজনকে তাদের মতামত প্রদানের সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে এবং দলীয় নীতিগত অবস্থানের সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে ইশতেহার চূড়ান্ত করা হয়।
এক্ষেত্রে লক্ষ্য করা হয় কোন ধরনের গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের জন্য এবং কোন পরিস্থিতে এটা প্রস্তুত করা হচ্ছে, এতে সেই গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে তাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করা হয়ে থাকে।
এ প্রসঙ্গে ফজলুল হক মুসলিম হলের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল মোনায়েম বলেন,আমি দেখতেছি অনেকে ইশতেহার দিচ্ছে অতিরঞ্জিত করে। আবার অনেকে ইশতেহার দিচ্ছে ক্যাম্পাসের সমস্যাগুলো পয়েন্টআউট করে কিভাবে বাস্তবমুখী সমাধান করা যায় সেটা মাথায় রেখে। ঢাবি শিক্ষার্থীরা বুঝবে কোন ইশতেহারটি বাস্তবমুখী আর কোনটা অতিরঞ্জিত। সর্বশেষ সবার মাঝে ডাকসুর আমেজ তৈরি হয়েছে এবং শিক্ষার্থীরা যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে ইনশাআল্লাহ।
বিপরীতে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সি এম মশিউল্লাহ ইব্রাহিম বলেন, পরিস্থিতি বর্তমানে যেমন আছে, মানে রাজনৈতিক যে সহাবস্থান বর্তমানে ক্যাম্পাসে বিরাজ করছে, ঐটা যদি ডাকসু পরবর্তী সময়েও বজায় থাকে, তাহলে অধিকাংশ ইশতেহারই বাস্তবায়ন সম্ভব। তবে ডাকসুতে দলীয় নেতৃত্ব আসলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকার সম্ভাবনা কম। তখন বাস্তবায়নযোগ্য ইশতেহারগুলোও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। আবার অনেক প্রার্থীই শুধুমাত্র ভোটের জন্য সুন্দর কথা এবং রংচটা ইশতেহার দিচ্ছে। তারা যে নির্বাচনের পরপরই তাদের আসল রুপে ফিরে আসবে এটাও ভোটাররা বুঝে।তবে ওভারঅল ভালো কিছুরই আশাবাদী।
ঢাবির শহীদুল্লাহ হলের শিক্ষার্থী মোতালেব শাকিল বলেন,একজন সাধারন শিক্ষার্থী কোন প্রার্থীর উপর তখনই ভরসা করতে পারে যখন কোন প্রার্থী পূর্বে শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ করেছিলো কিনা। একজন প্রার্থী যদি পূর্বে শিক্ষার্থী বান্ধব কাজ করে থাকে তাহলে আমরা ধরে নিতে পারবো যে পরবর্তীতে ও সে প্রার্থী আমাদের জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতে পারে। আশা করি ডাকসু নির্বাচনে যারা জয়ী হবেন তারা ইশতেহারগুলাও বাস্তাবায়ন করবেন।
ঢাবির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খাদেমুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার অনেক সময় বাস্তবায়ন হয় না। বিভিন্ন কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে।
কারণ গুলো হলো: ১. রাজনৈতিক প্রভাব – ডাকসুর কার্যক্রম প্রায়শই দলীয় রাজনীতির ছায়ায় চলে, ফলে শিক্ষার্থীর স্বার্থের চেয়ে রাজনৈতিক এজেন্ডা বেশি প্রাধান্য পায়।
২. কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা – ডাকসুর সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন, কিন্তু সব সময় তারা সেটা দেয় না।
৩. অভিজ্ঞতার ঘাটতি – নির্বাচিত প্রতিনিধিরা অনেক সময় বাস্তবায়ন করার অভিজ্ঞতা বা সামর্থ্য রাখেন না।
৪. দায়বদ্ধতার অভাব – নির্বাচনী ইশতেহার পূরণ না করলেও তাদের জবাবদিহি করার মতো কাঠামো দুর্বল।
বিগত ডাকসুর অভিজ্ঞতা দেখে বলা যায়, প্রতিশ্রুতির সাথে বাস্তব অর্জনের ফারাক অনেক বেশি। বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়িত হয়না।
তিনি বলেন,ডাকসুর ইশতেহার অনেকটা আই ওয়াশ মনে হয়।বাস্তবায়নযোগ্য অংশ খুব সীমিত।
(ঢাকাটাইমস/২৫ আগস্ট/এএইচ)

মন্তব্য করুন