সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফরের দশম মৃত্যুবার্ষিকী কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ২২:৫৩
অ- অ+

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রয়াত কাজী জাফর আহমেদের দশম মৃত্যুবার্ষিকী আগামীকাল বুধবার।

প্রয়াত কাজী জাফর স্মরণে বুধবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে তার স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ।

মরহুমের এর ১০ম মৃতুবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার সকাল ১০:৩০ মিনিটে কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম, চিওড়া কাজীবাড়ীতে দিনব্যাপী পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত, কবর জিয়ারত, দোয়া মাহফিল , পুষ্পমাল্য অপর্ণ ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।

দোয়া মাহফিলে মরহুমের রাজনৈতিক সহকর্মী, বন্ধু—বান্ধব, আত্মীয়—স্বজন ও শুভানুধায়ীদের উপস্থিত হয়ে রূহের মাগফেরাত কামনার জন্য জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মোহাম্মদ নাহিদ বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন।

সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত:

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমদ ৬৪ বছরের এক বর্ণাঢ্য ও বৈচিত্রময় রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন। ভাষা আন্দোলনের সিঁড়ি বেয়ে তিনি রাজনীতির অঙ্গনে প্রবেশ করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যোগদান করেন। রাজশাহী জেলা ছাত্র ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক এবং রাজশাহী কলেজ সাহিত্য মজলিশের মুখপত্র, সাহিত্যিকীর সম্পাদক হিসেবে তাঁর কর্মময় রাজনীতিতে পদচারণা শুরু।

১৯৩৯ সালের ১লা জুলাই কুমিল্লার প্রখ্যাত চিওড়া কাজী পরিবারে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। মেধাবী ছাত্র হিসেবে তিনি খুলনা জেলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীকালে রাজশাহী সরকারী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ. অনার্স ও এম.এ. (ইতিহাস) পাশ করেন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে এম.এ. এবং এল.এল.বি. কোর্স সম্পন্ন করা স্বত্ত্বেও কারাগারে চলে যাওয়ায় পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে পারেননি।

কাজী জাফর আহমদ ১৯৫৯—১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৬২—১৯৬৩ সালে অবিভক্ত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (এপসু) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬২ সালে সামরিক শাসন ও ঐতিহাসিক শরীফ শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে কাজী জাফর আহমদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ছাত্র জীবন শেষে তিনি শ্রমিক রাজনীতির সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। কাজী জাফর আহমদ ১৯৮৪ সালে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (এসকফ) আন্দোলনের মাধ্যমে দাবী আদায় ও সরকারের সঙ্গে চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের মূল ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলা শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন।

পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য কাজী জাফর আহমদ ১৯৭০ সাল থেকেই প্রচেষ্টা শুরু করেন। ১৯৭০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে ঢাকার পল্টন ময়দানে আয়োজিত জনসভা থেকে স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ববাংলা তথা বাংলাদেশ কায়েমের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয় এবং তা সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। এ জনসভার অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন কাজী জাফর আহমদ। এজন্য পাকিস্তান সরকার ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের তিনি অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতার পতাকা উড্ডয়ন করেন।

১৯৭২—১৯৭৪ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী তখন ছিলেন ন্যাপের সভাপতি। এরপর ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি ইউনাইটেড পিপলস্ পার্টির (ইউপিপি) প্রথমে সাধারণ সম্পাদক ও পরে চেয়ারম্যান হিসেবে সক্রিয় ভাবে পার্টির সাংগঠনিক দায়িত্ব ও জাতীয় রাজনীতিতে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৭৮ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মন্ত্রী পরিষদের শিক্ষামন্ত্রী হন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির জন্মলগ্ন থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬—১৯৯০ সালে তিনি জাতীয় পার্টির সরকারে পর্যায়ক্রমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বন্দর—জাহাজ ও নৌ—পরিবহন মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উপ—প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির রাজনৈতিক উপদেষ্টা, ১৯৮৯—১৯৯০ সালে বাংলাদেশের অষ্টম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৬—১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের উপনেতা ও ১৯৮৯—১৯৯০ সালে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতা ছিলেন। ১৯৮৬—১৯৯৬ পর্যন্ত পরপর তিনবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৯৯—২০০০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষিণ এশীয় ভূ—মন্ডলীয় রাজনীতি বিষয়ে অধ্যাপনা করেন।

২০১৩ সালের ২০শে ডিসেম্বর বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত জনাব কাজী জাফর আহমদ ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা হিসাবে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন।

আন্তর্জাতিক পরিসরেও কাজী জাফর আহমদ এর রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি। ১৯৭৮ সালে তিনি এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় শিক্ষামন্ত্রী সম্মেলনে সহ—সভাপতি, ১৯৭৭—১৯৮৬ সালে ইন্টারন্যাশনাল জুচে (স্বনির্ভর) ইনষ্টিটিউট এর পরিচালক, ১৯৮৬ সালে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত এসকাপ ট্রেড মিনিস্টারস্ সম্মেলনের চেয়ারম্যান হিসাবে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭—১৯৮৮ সালে এশীয় ৭৭ জাতি মন্ত্রী পরিষদের চেয়ারম্যান, ১৯৮৭ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত ৭ম আন্কটাড্ সমাপ্তি অধিবেশনের সভাপতি হিসাবে তিনি যথাযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধান এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সাথে রয়েছে তাঁর পরিচিতি, ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও সু—সম্পর্ক।

জেবি

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ধার পরিশোধ না করায় এসবি’র সাবেক এসপি নিহার রঞ্জনের পদাবনতি
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নতুন চেয়ারম্যান শেখ বশিরউদ্দীন
কমিউনিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৬৮তম সভা অনুষ্ঠিত
কুষ্টিয়ায় মেঘনা ব্যাংকের নতুন এজেন্ট আউটলেটের যাত্রা শুরু
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা