অবিলম্বে মুক্তি দাবি পরিবার ও নেতাদের

স্বৈরাচার পতনের ১০ মাসেও মুক্তি নেই ১৬ বছর ধরে কারাবন্দি বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবিরের!

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৫ জুন ২০২৫, ২১:৫২| আপডেট : ০৫ জুন ২০২৫, ২২:০৮
অ- অ+

কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বন্দি কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির উপদেষ্টা এবং কুমারখালী পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দশ মাস চলে গেলেও আইনি মারপ্যাচে বিএনপির এই নেতা কারামুক্ত হতে পারছেন না। গত ১৬ বছরের মতো এবারের কোরবানির ঈদেও তাকে কারাগারে (কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২) বন্দি কাটাতে হচ্ছে।

হুমায়ুন কবিরের পরিবার ও তার দলের নেতাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।

বিএনপি বলছে, বর্তমান সরকারের উচিত হুমায়ুন কবিরকে মুক্তি দিতে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করা। কারণ, তিনি শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ এবং জরুরি ভিত্তিতে তার সুচিকিৎসা প্রয়োজন। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে হুমায়ুনকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হলেও এখনো দোসরদের মিথ্যা মামলায় তাকে কারাবন্দি থাকতে হচ্ছে।

জানা গেছে, ২০০৯ সালের ৭ মার্চ রাজধানীর কাওলায় সংঘটিত একটি হত্যা মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হুমায়ুন কবিরকে জড়ানো হয়। এর পেছনে ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন।

রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ওই মামলায় একই বছরের জুনে আত্মসমর্পণ করেন হুমায়ুন কবির। এরপর থেকে কারাগারেই বিএনপির এই নেতা। প্রথমে বিচারিক আদালত তাকে ফাঁসির দণ্ড দিয়েছিলেন। পরে রিভিউ আবেদনে তার দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। মামলাটি বর্তমানে আপিল বিভাগের রিভিউ পর্যায়ে বিচারাধীন।

অবিলম্বে হুমায়ুন কবিরের মুক্তি চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘তিনি একজন সাহসী, ত্যাগী, দলের প্রতি দায়বদ্ধ ও আদর্শবান রাজনৈতিক নেতা। বিনাদোষে ১৬ বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন। একই সঙ্গে চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছেন। চিকিৎসার সুযোগ থাকলেও প্রশাসনিক জটিলতা ও অবহেলার কারণে তা বিলম্বিত হচ্ছে। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, এটা একজন মানুষকে ধ্বংস করে দেওয়ার চক্রান্ত।’

জন্মের পর বাবার আদর থেকে বঞ্চিত রয়েছেন হুমায়ুন কবিরের ছেলে সানজিদুল ইসলাম জিসান। হুমায়ুন কারাগারে থাকায় নানান সংকটে দিন কাটাচ্ছে পরিবারটি। জিসান বলেন, ‘বাবাকে নিয়ে কখনও ঈদ করতে পারিনি। বন্ধুরা যখন তাদের বাবার হাত ধরে ঈদগাহে যায় তখন আমাকে একা একা যেতে হয়। এটা যে কত কষ্টের তা প্রতিবছর ঈদের সময় টের পায়। এমন কষ্ট যেন কারও জীবনে না আসে।’

হুমায়ুন কবিরের ভাই মানিক বলেন, ‘আমার ভাই জেলে ভালো নেই। তার সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মিথ্যা মামলায় আটক; অবিলম্বে তার মুক্তি চাই।’

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর সিনিয়র জেল সুপার আল মামুন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘হুমায়ুন কবির আমাদের কারাগারে আছেন। এখন পর্যন্ত ওনার জামিন সংক্রান্ত কোনো কাগজ আমাদের কাছে আসেনি। সেই হিসেবে তিনি কারাগারেই ঈদ করবেন।’

দীর্ঘ আট মাস হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে একই কারাগারে বন্দি ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি কাজী জিয়া উদ্দিন বাসিত। ঢাকাটাইমসকে এই ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘গত বছর রোজা ও কোরবানির ঈদ কবির ভাইয়ের সঙ্গে কারাগারে করেছি। পরে তাকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওনার মামলায় এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি দেখছি না। দ্রুত তাকে মুক্তি দিতে হবে।’

বিগত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার হুমায়ুন কবিরকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করেছে অভিযোগ করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট পতনের পরপরেই ওনার জামিন হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আইনি মারপ্যাচে তাকে আটকে রাখা হয়েছে। তার মানে আইন অঙ্গন আগের সরকারের মতোই রয়েছে।’

বর্তমান সরকারের আমলে বহু আলোচিত মামলার আসামি জামিন ও মুক্তি পেলেও হুমায়ুন কবির এখনও বন্দি রয়েছেন। বাসিত বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীরা কারাগারে গেলে হুমায়ুন ভাই সবার সুখ-দুঃখে পাশে থাকতেন। সবার সঙ্গে ওনার সুসম্পর্ক ছিল। আমরা দ্রুত তার মুক্তি চাই।’

ধামরাই উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব সুজন মাহমুদ বলেন, ‘আমি যতবার কারাগারে গেছি কবির ভাই অত্যন্ত দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি বিএনপির প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মীদের জন্য কিছু না কিছু করেছেন। তবে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও দীর্ঘদিন কারাবন্দি এই বিএনপির নেতা মুক্তি পাচ্ছেন না। তার মানে, এটাই প্রমাণ করে, এখনো প্রতিহিংসার রাজনীতি চলছে। আমরা চাই, প্রতিহিংসার ঊর্ধ্বে উঠে মামলাটির নিরপেক্ষ তদন্ত ও দ্রুত নিষ্পত্তি হোক।’

হুমায়ুনকে ডান্ডাবেড়ি পরানোর ছবি ভাইরাল:

গেল এপ্রিলে হুমায়ুন কবির গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কাশিমপুর কারাগার থেকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিএনপির এই নেতার হাত ও পায়ে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখা হয়। যা ছিল চরম অমানবিক ও নিন্দনীয়। এই ঘটনার একটি দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা হয়। সেসময় এই ঘটনার একটি ছবিসহ পোস্ট করা হয় বিএনপির অফিসিয়াল মিডিয়া সেলের পেজ থেকে। তাতে লেখা হয়— ‘দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত! তবুও বিএনপি নেতাকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে চিকিৎসা!’

বিএনপির সিনিয়র নেতা সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী বলেন, ‘আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে হুমায়ুন কবিরের মতো নিষ্ঠাবান কর্মী খুবই কম দেখেছি। জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের রায় আমাদের বিচার ব্যবস্থার সাহসী দৃষ্টান্ত। এটি প্রমাণ করে, যদি সঠিকভাবে বিচার হয় তবে সত্যের জয় হয়। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই আমরা বলছি—হুমায়ুন কবিরও ন্যায়বিচারের অধিকার রাখেন।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে থাকা কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির নেতা হুমায়ুন কবির অসুস্থ। আমরা তার উন্নত চিকিৎসা ও দ্রুত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু কারা নির্যাতিত নেতা হুমায়ুন কবিরের মুক্তির জোর দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘১৬ বছর যাবত একটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলায় কারাবন্দি রয়েছেন হুমায়ুন কবির। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার কারণে তাকে একটি ফরমায়েশি চার্জশিট এবং রায়ের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হয়। একজন দলনিষ্ঠ সংগঠক হিসেবে হুমায়ুন কবির বন্দি অবস্থায়ও অসহায় বন্দি এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পাশে থেকে তাদের সাহস ও মনোবল জুগিয়েছেন। কিন্তু তিনিই এখন কারাগারে অমানবিক জীবন যাপন করছেন।’ তাকে মুক্তির মধ্য দিয়ে সরকার আরও একটি মানবিক ও ন্যায় বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে আশা বিএনপির এই সিনিয়র নেতার।

হুমায়ুন কবিরের হয়ে আইনি সহায়তা দিচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল। হুমায়ুন কবিরের মুক্তিতে বাধা কোথায় সে বিষয়ে জানতে যোগযোগ করা হলে কাজলের ব্যক্তিগত ফোনটি রিসিভ করেন তার সহকারী অ্যাডভোকেট মুরাদ। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘স্যার (কাজল) এখন দেশের বাইরে আছেন। তাই মামলার সর্বশেষ আপডেট জানাতে পারছি না।’

(ঢাকাটাইমস/৫জুন/এসএস/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নির্বাচনের রোডম্যাপ এল, এবার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন হোক: নাহিদ ইসলাম
জাতি আশ্বস্ত, জামায়াত সন্তুষ্ট: ডা.শফিকুর রহমান
জাতির আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি, ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে হলে মেনে নেওয়া যেত: সালাহউদ্দিন
মিরপুর কলেজ ছাত্রদলের কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা