দীপু মনি বের হও এটা আওয়ামী লীগের মিটিং…

আওয়ামী লীগের একজন সাধারণ কর্মী থেকে কীভাবে অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে দীপু মনি দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা হয়ে ওঠেন, সেটি জানলে আপনি নিঃসন্দেহে বিস্মিত হবেন। এই বিষয়টি এতোটাই অবাক করার মতো যে, আওয়ামী লীগের অনেক কেন্দ্রীয় নেতাও দীপু মনি যখন দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ পান তখন নির্বাক হয়ে গিয়েছিলেন।
ঢাকাটাইমস বিভিন্ন সময় খোঁজখবর নিয়ে জানতে পেরেছে, দীপু মনিকে যুবলীগের একসময়ের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজমের কাছে পাঠিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজমকে শেখ হাসিনা বলে দিয়েছিলেন দীপু মনিকে যাতে সাংগঠনিক কার্যক্রম বোঝানো হয়। বিশেষ করে একটি নির্বাচনী এলাকায় কীভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে হয় সে বিষয়ে দীপু মনিকে যেন ভালোভাবে দীক্ষা দেওয়া হয়। দীপু মনি জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজমের সঙ্গে সেই মোতাবেক দেখাও করেন।
তাদেরকে শেখ হাসিনার যে নির্দেশ সেই নির্দেশের কথা মনে করিয়ে দেন এবং অন্য কর্মীদের মতো নানক-আজম দীপু মনিকে রাজনৈতিক দীক্ষা দেওয়া শুরু করেন। শুরুতে তখন কাঁচুমাচু হয়েই নানক-আজমের কাছ থেকে দীক্ষা নেওয়া শুরু করেন দীপু মনি। কারণ তিনি তখন আওয়ামী লীগের একজন সাধারণ সদস্য।
যদিও একসময় ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করেছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজে রক্তদান কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। সন্ধানীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে তেমন কোনো রাজনৈতিক পদ-পদবি দীপু মনির ছিল না। কয়েক মাস নানক-আজমের কাছ থেকে দীক্ষা নেওয়ার পর হঠাৎ একদিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। যে বৈঠকে আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককেও আমন্ত্রণ জানানো হয়।
যথারীতি সেই আমন্ত্রণে আমন্ত্রিত হয়ে যুবলীগের তৎকালীন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজমও উপস্থিত হন। একটা পর্যায়ে নানক এবং আজম লক্ষ্য করেন দীপু মনি উপস্থিত হয়েছেন। একটু অবাকই হন তারা। দীপু মনিকে ডেকে নেন নানক ও আজম। তাকে বলেন 'এটা আওয়ামী লীগের মিটিং। এখানে বাইরের কেউ থাকতে পারে না। থাকা যায় না।' এসময় তাকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়। দীপু মনি চুপ থাকেন, তাদের কথার জবাব দেন না। তিনি সেখানে অপেক্ষায় থাকেন।
বিস্ময়কর হচ্ছে, সেখানে কিছুক্ষণ পরেই শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে উপস্থিত হন। তাকে দেখামাত্র সবাই দাঁড়িয়ে যায়। যেটা সবসময়ই হয়। বৈঠকে ঢুকেই শেখ হাসিনা বলা শুরু করেন আইভি রহমান মারা গেছেন। বেশ কিছুদিন যাবত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকার পদটি খালি রয়েছে। তিনি চান ডা. দীপু মনি এই পদে আসবেন।
সেই সময়ের বৈঠক সূত্রগুলো ঢাকাটাইমসকে জানায়, শেখ হাসিনার এমন ঘোষণার পর সেখানে মুহুর্মুহু করতালি শুরু হয়। সবাই একবাক্যে শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্তকে করতালি দিয়ে সাধুবাদ জানান। মুহূর্তের মধ্যে দীপু মনি বনে যান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী। যে নানক-আজমের কাছে শেখ হাসিনা দীপু মনিকে পাঠিয়েছিলেন রাজনৈতিক দীক্ষা নিতে, প্রশিক্ষণ নিতে—সেই নানক ও আজমের নেত্রী হয়ে যান দীপু মনি। এরপর তো তরতর করে দীপু মনির শুধু বেড়ে ওঠা।
২০০৮ সালে দীপু মনিকে চাঁদপুর সদর আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়। দীপু মনি এমপি হন। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয় তাকে। শুধু কি তাই! আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে দীপু মনিকে বসানো হয়। তিনি আওয়ামী লীগের ২ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন। যে দীপু মনি রাজনৈতিক দীক্ষা নিয়েছিলেন জাহাঙ্গীর কবির নানকের কাছে—আওয়ামী লীগের একই কমিটিতে দীপু মনি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আর জাহাঙ্গীর কবির নানক সাংগঠনিক সম্পাদক। দীপু মনি পূর্ণ মন্ত্রী, জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রতিমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের পদ-পদবি পাওয়ার যে ঐতিহ্য, পর্যায়ক্রমে কাজ করে সংগঠনে পদ পাওয়ার যে রেওয়াজ সেই রেওয়াজ কিন্তু এভাবেই ভেঙে দেওয়া হয়।
এভাবে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের পুরাতন নেতাকর্মীর মনে এক ধরনের ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তাদেরকে অবজ্ঞা, অবহেলা করার এই রেওয়াজ আওয়ামী লীগকে দুর্বল সংগঠনে পরিণত করে বলে দলের অনেকে মনে করেন। দীপু মনিরাই কী আওয়ামী লীগের বোঝা নয়? এই প্রশ্নের উত্তর কি? কারও জানা আছে আসলে?

মন্তব্য করুন