দেশ পলায়নের আগে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শেষ ৪৫ মিনিট

এক বছর আগের এই দিনে গণআন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করে ছাত্র-জনতা। ছাত্র-জনতার রোষে পড়ে, নিয়ন্ত্রণ হারানো পরিস্থিতির মুখে মাত্র ৪৫ মিনিটের এক ঘনঘটাপূর্ণ সময়েই তাকে বিদায় নিতে হয় দেশের মাটি থেকে। তিনি কেন এবং কোন পরিস্থিতিতে দেশ ছেড়ে যাওয়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্তে সায় দিয়েছিলেন, তা ছিল সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। গত বছরের এই দিনে যেমন ওই ঘটনা আবেদন ছড়িয়েছিল, এক বছর পর আজও সেদিনের সেই প্রকৃত প্রেক্ষাপট জানার কৌতূহল একইরকম রয়ে গেছে সাধারণ মানুষের।
৫ আগস্ট, সকাল থেকে সারা দেশে জারি ছিল কারফিউ। আগের রাতেই (রবিবার) নিরাপত্তাবিষয়ক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ভোর থেকেই শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ কারফিউ অমান্য করে রাস্তায় নেমে আসে। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে পড়ে যে, সকাল ১০টার দিকে শেখ হাসিনা তিন বাহিনীর প্রধান, পুলিশের আইজিপি এবং গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ডেকে জরুরি বৈঠকে বসেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী আন্দোলন দমন করতে চাপ দিলেও কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, আর কিছু করার নেই—সবই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা বোঝাতে শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার সাহায্য নেওয়া হয়। কর্মকর্তারা তাকে অনুরোধ করেন, যেন বড় বোনকে বোঝান সময় থাকতেই দেশ ত্যাগ করা উচিত। একপর্যায়ে বিদেশে অবস্থানরত সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। জয় পরে জানান, তার মা শুরুতে যেতে চাননি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের অনুরোধেই সম্মত হন।
তবে শেখ হাসিনা নতুন একটি শর্ত দেন—দেশ ছাড়ার আগে তিনি জাতির উদ্দেশে একটি ভিডিওবার্তা রেকর্ড করতে চান। কিন্তু শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, শাহবাগ থেকে জনতা গণভবনের দিকে রওনা হয়েছে এবং সেখানে পৌঁছাতে সর্বোচ্চ ৪৫ মিনিট সময় লাগবে। এর মধ্যে দেশ না ছাড়লে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হবে।
এই সময়েই সিদ্ধান্ত হয়, বিমানবন্দরে নেওয়ার জন্য সড়কপথ নয়, হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হবে। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তেজগাঁওয়ের পুরনো বিমানবন্দরে পৌঁছান হেলিকপ্টারে। সঙ্গে নেওয়া হয় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ লাগেজ। পরে বিমানবাহিনীর একটি পরিবহন বিমানে করে তারা ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করেন।
সজীব ওয়াজেদ জয় গণমাধ্যমকে বলেন, "মা চেয়েছিলেন খালা (শেখ রেহানা) আগে চলে যান। মা নিজে যেতে চাইছিলেন না। আমি ফোন করে বুঝিয়েছি, তাদেরই যেতে হবে। শেষ পর্যন্ত তারা গেছেন।"
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়তেই জনতা গণভবনের ভেতরে ঢুকে পড়ে। সেদিন ছাত্র-জনতা বিজয় ছিনিয়ে আনে। তখন শেখ হাসিনা আকাশপথেই ছিলেন। কয়েক ঘণ্টা পর তার বিমান দিল্লির নিকটবর্তী একটি বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
দেশ ছাড়ার আগে সেই শেষ ৪৫ মিনিট ছিল স্বৈরাচার শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে সংকটময় মুহূর্তগুলোর একটি—যেখানে সময়, পরিস্থিতি এবং ছাত্র-জনতার রোষ তাকে বাধ্য করেছিল এক অনিচ্ছাকৃত বিদায়ের দিকে। স্বৈরাচার শাসক শেখ হাসিনাকে হঠিয়ে ছাত্র-জনতা আজকের এই দিনে নতুন করে বাংলাদেশের বিজয় ছিনিয়ে আনে। উপহার দেয় নতুন স্বাধীন বাংলাদেশের।
(ঢাকাটাইমস/৫ আগস্ট/আরজেড)

মন্তব্য করুন