সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের শেষ তিন ইচ্ছা পূরণ, দান করলেন দু-চোখও

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১১:২৩| আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১২:৫৪
অ- অ+

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) এম হারুন-অর-রশিদ (৭৫) শেষ বিদায়ে রেখে গেছেন মানবিক এক দৃষ্টান্ত। নিজের জীবদ্দশায় করা শেষ তিনটি ইচ্ছার মধ্যে একটি ছিল চক্ষুদান, যা মৃত্যুর পর বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি বাকি দুটি ইচ্ছাও পূরণ করেছেন তার পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনরা।

সোমবার (৪ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসের ৩০৮ নম্বর কক্ষ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যায় সেনাবাহিনী। এরপর বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজা শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

সাবেক এই সেনাপ্রধান চেয়েছিলেন, তার মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় কোনো সম্মান—যেমন গার্ড অব অনার—না দেওয়া হোক। তার ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয়নি।

২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসির স্টাফ অফিসার মেজর শিহাব জানান, জানাজা শেষে মরদেহ হাটহাজারী উপজেলার পারিবারিক কবরস্থানে নেওয়া হয়। সেখানেই তার দ্বিতীয় জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়। তিনি বলেন, “চক্ষুদান সংক্রান্ত নির্দেশনা অনুযায়ী মরদেহ থেকে চোখ দুটি সংগ্রহ করে ‘সন্ধানী’র কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”

তিনটি শেষ ইচ্ছা

সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন মাসখানেক আগে তার বন্ধু অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল বাহারকে তার শেষ তিনটি ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন। মৃত্যুর পর এসব ইচ্ছার কথা গণমাধ্যমকে জানান তার সেজো বোনের জামাতা ডা. জহির।

এই তিনটি ইচ্ছা হলো:

১. মৃত্যুর পর মরদেহ দাফনে যেন কোনো বিলম্ব না হয়।

২. তাকে যেন পারিবারিক কবরস্থানে, তার বাবার পাশে দাফন করা হয়।

৩. মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় কোনো সম্মান (যেমন গার্ড অব অনার) না দেওয়া হয়।

ডা. জহির বলেন, “এই ইচ্ছাগুলো কর্নেল বাহার আমাকে জানালে আমি তার স্ত্রী ও মেয়েকে তা জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করি।”

জানা গেছে, ‘ডেসটিনি’র আর্থিক কেলেঙ্কারির একটি মামলায় হাজিরা দিতে রবিবার (৪ আগস্ট) চট্টগ্রামে আসেন এম হারুন-অর-রশিদ। তিনি চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসের ৩০৮ নম্বর কক্ষে অবস্থান করছিলেন। সোমবার সকালে মামলার শুনানিতে তিনি অনুপস্থিত থাকায় আদালত তার খোঁজ জানতে চায়।

পরবর্তীতে তার মরদেহ আবিষ্কৃত হয় সেই কক্ষ থেকেই। ধারণা করা হচ্ছে, রাতেই তিনি মারা যান। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) এম হারুন-অর-রশিদ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি ‘বীরপ্রতীক’ খেতাবে ভূষিত হন। ২০০০ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২০০২ সালের ১৬ জুন পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দশম প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সেনাবাহিনীর ২৪তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন হারুন-অর-রশিদ। ১৯৭০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তিনি পদাতিক কোরে কমিশন লাভ করেন। শুরুতে ইঞ্জিনিয়ার কোরে যেতে চাইলেও কোম্পানি কমান্ডারের পরামর্শে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সেনা ক্যারিয়ারে তিনি কুমিল্লার ৪র্থ ইবিআর-এ প্রথম পোস্টিং পান।

পরবর্তীতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে তিনি জর্জিয়ায় বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেনাবাহিনীতে তিনি একাডেমিক মনোভাবের জন্য পরিচিত ছিলেন। আর্মি স্টাফ কলেজ এবং পদাতিক ও কৌশল স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। অবসরের পর তিনি সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সহ-সভাপতি হন।

(ঢাকাটাইমস/৫ আগস্ট/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
২০২৪ সাল ছিল স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ: তারেক রহমান
জুলাই ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দিলেন আব্দুল হান্নান মাসউদ, জানুন কারণ
শেখ হাসিনাকে বুজুংবাজুং বুঝিয়ে তাপস ও আতিক নগর ভবন দিয়ে পালিয়ে যায়
সরকার বরাদ্দ বিশেষ ট্রেন নিয়ে অসন্তোষ, রাজশাহীতে বিক্ষোভ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা