কথা রাখেননি অনন্ত জলিল, দেড় বছর পথ চেয়ে প্রতিবন্ধী ভক্ত

প্রকাশ | ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১৬:২২ | আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:৪৪

লিটন মাহমুদ, ঢাকা টাইমস

ঘটনাটি ২০২২ সালের ১৪ জুলাইয়ের। নিজের সিনেমার প্রচারণার কাজে বগুড়ায় সোহেল রানা নামের একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী ভক্তের সঙ্গে দেখা করেন ব্যবসায়ী, চিত্রনায়ক ও প্রযোজক অনন্ত জলিল ও আফিয়া নুসরাত বর্ষা দম্পতি। প্রিয় নায়কের আগমন উপলক্ষে সেদিন আগে থেকেই বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলার কালিপাড়া ইসমাইল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ে গ্রামবাসীকে নিয়ে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন রানা। অনুষ্ঠানটিতে গ্রামবাসীকে অবাক করে রানাকে থাইল্যান্ডে চিকিৎসা করানোর আশ্বাস দেন অনন্ত, সেইসঙ্গে অনুষ্ঠান আয়োজন এবং প্রাথমিক চিকিৎসা বাবদ দুই লাখ টাকাও দেন।

এরপর কেটে গেছে দেড় বছর। কিন্তু মাঝখানের এই দীর্ঘ সময়ে ওই ভক্তের আর কোনো খোঁজ নেননি অনন্ত। শুধু তাই নয়, নায়কের মোবাইলে বারবার কল দিয়েও কোনো সাড়া পাননি রানা।

এদিকে অতীতে বিভিন্ন সময়ে যারা প্রতিবন্ধী রানার পাশে ছিলেন অনন্ত জলিলের প্রতিশ্রুতির পরে সরে দাঁড়িয়েছেন তারাও। বর্তমানে পরিবারের বোঝা হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। শুক্রবার ঢাকা টাইমসের সঙ্গে আলাপকালে প্রিয় নায়ককে নিয়ে নিজের আক্ষেপের কথা তুলে ধরেন এই প্রতিবন্ধী।

রানা জানান, অনুষ্ঠান আয়োজন ও প্রাথমিক চিকিৎসা বাবদ সেদিন রানাকে ২ লাখ টাকা দিয়েছিলেন অনন্ত এবং গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন প্রথমে ঢাকায় এনে পাসপোর্টসহ যাবতীয় কাজ করবেন অনন্ত। নায়কের সে আশ্বাস অনুযায়ী কিছুদিন পর নায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো সাড়া পাননি। এছাড়া তাকে থাইল্যান্ডে নিয়ে যাবতীয় চিকিৎসার যে আশ্বাস দিয়েছিলেন অনন্ত জলিল সেটিও করেননি। 

আরও পড়ুন: প্রতিবন্ধী ভক্তের সঙ্গে দেখা করতে বগুড়ায় অনন্ত-বর্ষা

আক্ষেপের কণ্ঠে রানা বলেন, ‘অনন্ত জলিল যদি সে সময় চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা না দিতেন তাহলে হয়তো অন্য কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি আমার পাশে দাঁড়াতেন। কিন্তু তার ঘোষণা দেওয়ার পর সবাই ভেবেছিল অনন্ত জলিল অসম্ভবকে সম্ভব করে, আমার জন্যও কিছু করবে। এজন্য আমার পাশে কেউ দাঁড়ায়নি। আমার এত বড় ক্ষতি অনন্ত করল, আমি যে তাকে এতটা ভালোবাসি, তার কোনো মূল্যই দিল না। সে আমাকে এমনভাবে ধোঁকা দিয়েছে যে মানুষের কাছে আমি মুখ দেখাতে পারি না।’

রানা আরও বলেন, ‘আমার সাথে যখন এমনটা করছে, আমি যখন ঘুমাতে যাই কষ্টে দু’চোখের পানিতে বালিশ ভিজে যায়। এত কষ্ট হয়েছে, এটা ভেবে যে আমার পাশে কেউ নেই, আমি একা।’

তবে প্রিয় নায়ক আশ্বাস দিয়ে না রাখলেও তার প্রতি ভালোবাসা কমেনি রানার। রানার বলেন, ‘সে আমাকে উপকার করুক বা না করুক আমি তাকে আগেও ভালোবাসতাম এখনো বাসি। আমি প্রতি বছর রমজান মাসে তার নামে সেবামূলক কাজ করি। এবার রমজান মাসেও করবো। আমি চাই অনন্ত জলিলকে সবাই চিনুক, জানুক তিনি একজন ভালো মনের মানুষ।’

এদিকে মাঝখানের দেড় বছরে বগুড়ার সেই প্রতিবন্ধী রানাকে অনেকটা ভুলেই গেছেন ‘কিল হিম’ সিনেমার নায়ক। মুঠোফোনে অনন্ত জলিলের কাছে রানার কথা জিজ্ঞাসা করলে প্রথমে ওই প্রতিবন্ধীকে চিনতেই পারেননি তিনি। নানা ইঙ্গিতে বগুড়ার প্রতিবন্ধী রানাকে আশ্বাসের কথা স্মরণ করিয়ে দিলে অনন্ত জানান, এখনো থাইল্যান্ড নেননি ভক্তকে।

রানার সঙ্গে যোগাযোগ আছে কি না বা তার কোনো খোঁজখবর নিচ্ছেন কি না? প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে ব্যবসায়ী অনন্ত জলিল বলেন, ‘এগুলো আমি পরে বলতে পারব। আমার সামনে এখন বায়াররা আছে।’
কলটি কেটে দেওয়ার ৪ মিনিট পর কলব্যাক করে অনন্ত বলেন, ‘আশ্বাস না তো, ওই ছেলেকে  (রানাকে) আমি দুই লক্ষ টাকাও দিয়েছি চিকিৎসা করানোর জন্য।’

টাকা ছাড়াও থাইল্যান্ডে নিয়ে চিকিৎসা দিতে চেয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে অনন্ত বলেন, ‘থাইল্যান্ড নেওয়া সহজ নাকি,  এত ইজি নাকি এগুলো। ও ছোটবেলা থেকে প্রতিবন্ধী। ছোটখাটো হলে থাইল্যান্ডে ঠিক করা যায়। আমাদের যে ডাক্তার আছে তাদের সঙ্গে আলাপ করেছি, তারা বলেছে, এভাবে করাতে পারবেন না।’

(ঢাকাটাইমস/২৭জানুয়ারি/এলএম/জেডএম এমআর)